মুখে নয়, মাইক বাঁজিয়ে ফেরি করে ভিক্ষা

আমাদের বাসার পাশেই মোড়ে বসে আমি আর বন্ধু মিটন চা খাচ্ছিলাম আর প্রয়োজনীয় কথা বলছিলাম । এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে বাসার উদ্দেশ্যে দোকান ত্যাগ করে বাসার গলিতে ঢুকতেই আল্লাহ্, আল্লাহ্ বলে উচ্চ শব্দে আওয়াজ পাচ্ছিলাম । সামনের দিকে চেয়ে দেখি আমাদের বাসার সামনে একটি ভ্যানগাড়ির ওপর লাল পলিথিনে মোড়ানো । সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়লো- একটি রিক্সা থেকে এক ভদ্র মহিলা ভ্যানগাড়ির ওপর টাকা ছুড়ে মারলেন । ভ্যানগাড়ির কাছে আসার আগেই বুঝতে পারলাম-পঙ্গু কোনো ভিক্ষুক এভাবে ভিক্ষা করছেন । কিন্তু উচ্চ শব্দের রহস্য তখনও বুঝতে পারছিলাম না । কাছে এসে দেখতে পেলাম, লাল পলিথিনের ভিতরে ভ্যান গাড়ির ওপর এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক শুয়ে আছেন । গাড়ির চালককে পলিথিন সড়াতে বললাম । হায় একি কান্ড !!! ইনিতো মুখে কিছুই বলছেন না, তাহলে আল্লাহ্ আল্লাহ্ শব্দ আসছে কোথায় থেকে ? খুঁজে পেলাম পলিথিনের নিচে একটি ব্যাগের ভিতরে একটি হ্যান্ড মাইক !
এই মাইকে আল্লাহ্ আল্লাহ্ রেকর্ড বাজছে ! সন্দেহটা বেড়ে যাওয়ায় আরও বেশি কৌতুহলী হয়ে উঠলাম । বৃদ্ধকে বললাম ওঠে বসতে, উঠে বসলেন এবং সুস্থ্যভাবেই কথা বলা শুরু করলেন । জানতে চাইলাম এসব কি নিজের ? তিনি বললেন, ভ্যানগাড়ির রোজ ৫০টাকা ভাড়া, হ্যান্ড মাইক ৫০ টাকা ভাড়া আর চালকের রোজ ৩৫০টাকাসহ মোট ৪৫০টাকা প্রতিদিন খরচ । এভাবে দশ বছর যাবত ভিক্ষা করে আসছেন । থাকেন মিরপুর, গ্রামের বাড়ি বাগের হাট । ওই বৃদ্ধ ভিক্ষুকের আক্ষেপ, এভাবে ভিক্ষা করেও তিনি এখনও কিছু করতে পারেননি, অথচ অন্যরা বাড়ি গাড়ি করে ফেলেছেন ।

শেখ এমদাদুল হক মিলনঃ

৫ thoughts on “মুখে নয়, মাইক বাঁজিয়ে ফেরি করে ভিক্ষা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *