একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাগেরহাটের রাজাকার শেখ সিরাজুল হক ওরফে কসাই সিরাজ ওরফে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলায় অপর আসামি রাজাকার খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত বুধবার এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
এ দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে একাত্তর সালে বাগেরহাটে হত্যা, গণহত্যা ও লুণ্ঠনসহ সাতটি অভিযোগ ছিল। গত ২৩ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মামলার ১, ২, ৩, ৪ , ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগ হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের মতো অপরাধের। এরমধ্যে ৬ নম্বর ছাড়া বাকী পাঁচটি অভিযোগে সিরাজকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা ছয় নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অব্যাহতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার সাতটি অভিযোগের মধ্যে আকরামের বিচার হয়েছে ৫ , ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে। এর মধ্যে প্রথম দুটিতে তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সাত নম্বর অভিযোগে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যায় জড়িত থাকায় দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাকে। প্রমাণিত না হওয়ায় ৬ নম্বর অভিযোগ থেকে আকরামকেও খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলার অপর আসামি বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার আবদুল লতিফ তালুকদার (৭৫) বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গত ২৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ কারণে মামলায় আসামির তালিকা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনসহ ৩২ জন সাক্ষী। আসামি পক্ষে পাঁচজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।
গত বছরের ৫ নভেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত সিরাজুল হক ও তার দুই সহযোগী লতিফ-আকরামের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা নির্যাতনের সাতটি অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মধ্যদিয়ে বিচার শুরু হয়। এর মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং লতিফ ও আকরামের বিরুদ্ধে তিনটি করে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের শাঁখারিকাঠি বাজার, রণজিৎপুর, ডাকরা, কান্দাপাড়া গণহত্যাসহ ৮ শতাধিক মানুষ হত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়িঘরে লুটপাট ও অগি্নসংযোগের অভিযোগ। অভিযোগ গঠন অনুসারে মুক্তিযুদ্ধের সময় সিরাজুল হক ছিলেন তৎকালীন বাগেরহাট মহকুমা রাজাকার বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার। লতিফ ও আকরাম রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটের কচুয়ার শাঁখারিকাঠি বাজারে ৪২ জনকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগি্নসংযোসহ ছয়টি অভিযোগে ২০০৯ সালে সিরাজ মাস্টারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।
ওই গণহত্যায় নিহত রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস কচুয়া থানায় মামলাটি করেন। মামলাটি পরে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পর বিভিন্ন তারিখে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
Moin Ahmed liked this on Facebook.