এবার বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ

প্রেমের সম্পর্কে গভীর প্রণয়। বিয়ের আশ্বাসে মেলামেশায় অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী (১৪)। এরপর গোপনে জোর করে গর্ভপাত।

মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এ পর্যন্ত সবই মেনে নিয়েছে পরিবার। প্রেমিকের চাকরির জন্য গোয়ালের গরু বিক্রি করে টাকাও দিয়েছে ৫০,০০০।

কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ি গিয়ে উঠতে হয়েছে কিশোরীকে। সেখানে প্রেমিকের মা-বাবা ও ভাইয়ের নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে।

ফলে বাধ্য হয়ে প্রেমিক বিজিবির সদস্য আইয়ুব আলী, তার বাবা মোকছেদ আলী (৫০), মা আছিয়া বেগম (৪৫) ও ভাই মামুন হোসেনের (১৬) বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মেয়েটির পরিবার।

ঘটনাটি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার রাজৈর গ্রামে। লিখিত অভিযোগ পেয়ে সাটুরিয়া থানা তদন্তকাজ শুরু করে দিয়েছে।

এলাকার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া এই ঘটনা রাজৈর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। অচেনা পথে গিয়ে মেয়েটির বাড়ি জানতে চাইলে এলাকার কৌতুহলী নারী-পুরুষ মৃদু হেসে দেখিয়ে দেন- ‘একটু সামনেই ছোট্ট সেতু, সেটি পার হলেই মেয়েটির বাড়ি।’

বাড়িতে পৌঁছে মেয়েটির বাবার নাম ধরে ডাক দিতেই এগিয়ে আসেন পাশের বাড়ির লোকজন। মেয়েটির বাড়িতে তখন কেউই ছিলেন না। সে সময়ে প্রতিবেশীরা জানান, এ ঘটনা তারা শুনেছেন। কেউ কেউ বলতে উদ্যত হলে অন্যরা শরীরে টিপ্পনি কেটে থামিয়ে দেন।

এরই মধ্যে আসেন মেয়েটির দাদী। সাংবাদিক এসেছে শুনে তিনি গিয়ে ডেকে আনেন মেয়েটির মাকে। মেয়েটির মা এসে কি বলবেন ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না। তিনি গিয়ে ডেকে আনেন তার খালাতো ভাইকে।

এরপর কথা হয় মেয়েটির মা ও মামার সঙ্গে। তারা জানান, মেয়েটির বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। তাদের সংসারে তিন মেয়ের মধ্যে ওই মেয়েটি বড়।

মেয়েটি গ্রামের আবদুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তবে শারীরিক গড়নে সেটি আরো বেশি প্রকাশ পায়। মা ও মামা মিলে বলতে থাকেন, দুজনের প্রেম, পরিণয়, বিজিবির চাকরি জন্য দেয়া অর্থ থেকে আদ্যপান্ত।

মেয়েটির সঙ্গে প্রতিবেশী আইয়ুবের দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের প্রলোভনে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন আইয়ুব। দেড় বছর আগে আইযুব বিজিবিতে চাকরি পান।

মেয়ের সঙ্গে আইয়ুবের প্রেমের সম্পর্ক জেনে তারা (মেয়ের পরিবার) সেটি মেনেও নেন। এ কারণে আইয়ুবের চাকরির সময় পালের গরু বিক্রি করে ৫০,০০০ টাকা দেন তারা।

বর্তমানে আইয়ুব রাঙামাটি ব্যাটেলিয়ান সেক্টরের ২০২ এ কর্মরত রয়েছেন। চাকরিতে গিয়েও যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন তিনি। ছুটিতে বাড়ি এসে দুজনে অন্তরঙ্গ সময় কাটান।

তাদের প্রেমের এই ঘটনা এলাকার সবার মুখে মুখে। দুজনকে এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীর ঘাটে ও বিভিন্নস্থানে একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন প্রতিবেশীরা।

এরই মধ্যে মাস তিনেক আগে মেয়েটি অন্তঃস্বত্তা হলে আইয়ুবই গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছ থেকে ট্যাবলেট এনে খাইয়ে গর্ভপাত করান।

আলোচনার ফাঁকে মেয়েটির মা ও মামা জানান, কিছুদিন আগে স্বজনেরা অন্যত্র বিয়ে ঠিক করেছেন আইয়ুবের। আইয়ুব এই বিয়েতে রাজি নন। এ কারণে মেয়েটিতে ফোন করে বলে ছুটিতে তিনি বাড়ি আসছেন।

গত বুধবার বিয়ের দাবিতে মেয়েটিকে তাদের বাড়ি উঠতে বলেন আইয়ুব। মেয়েটি ওইদিন এশার নামাজের পর আইয়ুবের বাড়িতে গিয়ে উঠেন।

এ সময় মেয়েটিকে আইয়ুবের বাবা-মা ও ভাই মারধর করে গোড়ার (গরুর খাবারের জায়গা) সঙ্গে বেঁধে রাখেন। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে এ খবর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

রাত সাড়ে নয়টার দিকে আয়নাল মেম্বর, সাবেক মেম্বার আব্দুল আজিজ ও চকিদার হারুণ ঘটনাস্থলে যান। তাদের কাছে ঘটনা খুলে বলেন মেয়েটি। রাত তিনটার দিকে পুলিশ গিয়ে মেয়েটি আইয়ুবের বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে আসে।

বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ মেয়েটিকে তার মায়ের জিম্মায় দেয়। এরপর নিরাপত্তার কথা ভেবে মেয়েটিকে বাড়িতে না রেখে নানার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তার মা ও মামা।

পরে ফেরার পথে মেয়েটির মা ও মামার বলা এসব কথার সত্যতা জানান প্রতিবেশীরা। দুজনকে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো নিজের চোখে দেখারও কথাও জানান তারা।

তবে এর আগে আলোচনার এক পর্যায়ে মেয়েটির দাদী ঘর থেকে আইয়ুব ও মেয়েটির একসঙ্গে তোলা একটি ছবি হাতে করে নিয়ে আসেন। সেটি উপস্থিত সকলকেই দেখান তিনি। ছবিটি থেকে ক্যামেরায় ছবি নেয়ার অনুমতিও দেন মেয়েটির দাদী ও মা।

এরপর মেয়েটির বাড়ি থেকে কিছু পথ এগিয়ে আইয়ুবদের বাড়িতে যাই। আইয়ুবের প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি ফাঁকা, দরজায় তালা ঝুলছে। গোড়ায় বাঁধা রয়েছে কয়েকটি গরু।

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাদের নম্বর নিয়ে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় বরাইদ ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য আয়নাল হোসেন জানান, চকিদারকে সঙ্গে নিয়ে নিয়ে আইয়ুবের বাড়ি গিয়ে মেয়েটিকে গোড়ায় বাঁধা দেখতে পাই। তার কাছ থেকে মারধরের কথা শুনে বারান্দায় নিয়ে বসিয়ে রাখেন তাকে। এরপর স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় বলেও জানান তিনি।

সাটুরিয়া থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার জানান, পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে মায়ের জিম্মায় দিয়েছে। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগ এনে মেয়েটির মা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মেয়েটির সঙ্গে আইয়ুবের প্রেমের সম্পর্কের সতত্যা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান ওসি।

৭ thoughts on “এবার বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *