আকাশ,
সবই শূন্য মনে হয়। কেবলই শূন্য । অর্থহীন। তোমার নীলা যখন খুব সুখে থাকে তার সমস্ত উচ্চাস নিয়ে তোমাকে লিখে। তার আনন্দই তার লিখার উপকরণ যোগায়। ভাবতে হয়না কি লিখব। আবার যখন খুব কস্টে থাকে তখন ও তোমাকে লিখে। তোমার কাছে আকাশ পেয়েই তার কস্টগুলো প্রান পায়।পূঞ্জিভূত কস্টগুলো পূঞ্জিভূত সুখ হয়। কিন্তু যখন সে এসবের কিছুই থাকেনা । যখন সুখ দুঃখ কেবলই বোবা স্বপ্নমাত্র। যখন ভাল থাকা না থাকার মাঝে কোন পার্থক্য সে খুঁজে পায়না – কি করে লিখবে তখন তোমাকে? তখন যা লিখবে সে যে কেবলই শব্দের আকার। লীলার হৃদয়ের কোন স্পর্শই যে থাকবেনা তাতে । কেন এমন হয়?
কেন সমস্তই এত অর্থহীন মনে হয়?
কেন হয় তা হয়তো জানি। হয়তো নয়, নিশ্চয় জানি। এবং এত সত্য করে জানি যে মেনে নিতে কস্ট হয়। আচ্ছা আকাশ, ভোরের আলো দেখবে বলেই তো মানুষ রাতের অন্ধকারকে মেনে নেয়। কিন্তু যদি জানে এ অন্ধকারের শেষে তার জন্য কোন আলো নেই। আর কোনদিন রথে চড়ে সূর্য আসবেনা তার দ্বারে – তখনও কি এমনি করে মেনে নেবে এ আঁধারকে ? আমার মনে অসংখ্য জিজ্ঞাসা, নিজের কাছে এসবের কোন সদত্তর নেই।
আমার এই অনুভুতিহীন সময়গুলো তোমার দ্বারে পৌঁছাতে চাইনি। এজন্যই লিখিনি হয়তোবা। সবচে অবাক হয়ে যাই যখন দেখি, এসব অর্থহীণ মূহুর্তগুলোকে আড়াল করে এক এক সময় জীবন কি রকম অর্থবহ হয়ে দাঁড়ায় । একটা ফুল, একটা পাখি কি রকম সুন্দর মনে হয়। একটা বিষন্ন সংগীতের জন্য, নতুন বইয়ের সোদা গন্ধের জন্য, একজন মানুষের জন্য কি রকম বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে!!
আমার এখন এসব কিছুই ইচ্ছা করেনা। আমার এখন এসব কিছুই ইচ্ছে করেনা আকাশ!
নীলা
২৬ সেপ্টেম্বর ৯২
আকাশ
যা যা লিখেছি পাঠিয়ে দিতে বলেছো। তেমন কিছু লিখিনি। কি লিখব বলো? প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে মনে পড়ছে – এই একটা লাইনই বার বার লেখা ছাড়া আর কিছু নেই লিখার।
এখনতো লিখবে তুমি। আমার কাছে এখন অনেক কথা। পাঁচ বছর পর আসিফকে দেখে কেমন লাগলো, লিলু, আসিফ তোমাকে কিভাবে নিলো, সর্বোপরি কানাডাতে তোমার কেমন লাগলো – সব, লিখবে।
অফিসে বসেই লিখছি। পাশ থেকে ভ্যানিটা বলছে লিখো —“আকাশ আমার, তুমি কেমন আছো? তুমি তোমার সিদ্ধান্তের কথা আমাকে জানাও। আমার খুব মন খারাপ করছে। খুব অস্থির লাগছে”
যেমাত্র বল্লাম দাড়াও এক কথাগুলোই এখন লিখছি – অমনি চুপ হয়ে গেল। এখন শর্টহ্যান্ড প্র্যাকটিস করছে। আর মাঝে মাঝে ডিকটেট করছে। যদিও সেসব লিখা ঠিক হবেনা। আবার ডমনিকের কথা বলছে। ডমনিক ওর জান।
সকালে শুরু করেছি চিঠি। এখন বাজে আড়াইটা। আজ একেবারে ফ্রি। সবাই জেসি জার্নি সাইকেল মিটিংএ ব্যস্ত। ফোন যে করবো সে উপায়ও নেই। তানাহলে আজ তোমার সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া যেতো। তুমি ঢাকায় বা খুলনায় তাও তো জানিনা। ঢাকা খুলনার সাথে এবার কানাডা যোগ হলো। কখন যে কোথায় থাকবে। বুঝেছি – এখন থেকে আকাশের ঠিকানায়ই লিখতে হবে। অবশ্য নাও লিখতে হতে পারে। কি বলো?
তুমি ভাল আছো ?
ভালো থেকো ।
নীলা তোমার।
৮ই মে’চুরান্নবই
ANZ Grindlays Bank
আকাশ আমার,
খুব ইচ্ছে ছিল চিঠির মত করে SURPRISE দেবো তোমাকে। দরজা খুলেই আমাকে দেখে চমকে উঠবে তুমি। আমি বলব – তোমার চিঠির উত্তর। শেষ থেকে। আমি যত নিখুঁত করে আয়োজন করি। প্রকৃতি তার চেয়ে নিপুনভাবে পন্ড করে তা । প্রতিবার। আমার আর যাওয়া হয়না তোমার কাছে । চোখের ভাষায় বলবো বলে যে কথাগুলো তুলে রাখি না বলাই থেকে যায় সেগুলো ।
কোনদিন যে পৌঁছাতে পারবোনা তোমার কাছে সে কথায় যেন বারবার প্রকৃতি বলে দিয়ে যায়। আমি সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আবার আয়োজন করি। তোমার যেমন অফিস করে, ছবি দেখে, রান্না করে সময় কেটে যায়। আমার তেমনি অফিস করে, গান শুনে আর যাবার আয়োজন করে সময় কাটে। দিন, মাস, বছ …। আকাশ, আমাদের নিয়তি খুব কাছ থেকে আমাদেরকে সমান্তরাল পথে নিয়ে চলেছে।
গন্তব্যহীন দীর্ঘ সে পথ।
শীতে ডুব দিয়েছিলাম কিছুটা আলস্যে কিছুটা অনিচ্ছায়। তাতে প্রাপ্তির ঘরে জমা পড়ল অনেকখানি। তুমি যে কিরকম প্রতীক্ষায় থাকো জানা হলো তা! এরও প্রয়োজন আছে বৈকি !
তুমি যেমন নিশ্চিত জানো নীলা ধ্রুবতারার মত স্থির হয়ে আছে তোমাতে, আমারও তো তেমন জানা চাই ণীলার জন্য আকাশের তৃষ্ণা কতখানি !!
আকাশ, আসলে ওসব কিছুনা। মূহূর্তের জন্যেঅ ভুলে থাকা হয়না তোমাকে। না লিখা, না ফোন করা আলস্য ছাড়া কিছুইনা। এ হলো সুখের আলস্য। সমস্ত স্মৃতিতে তুমি আছো মহুয়ার নেশার মত। লিখতে বসা যেন সে তোমাকেই ছেড়ে অনেকটা সময় কাগজে আঁকিবুঁকি । ফোন করতে যাওয়া যেন, সে নেশা ছেড়া অনেটা সময় ট্রাফিক জ্যামে। অনেকটা সময় বিশ্রী কোলাহলে। আমার কাছে এসবের চেয়ে গানে গানে তোমাকে ছোঁয়া অনেক সহজ।
বইমেলার নিমন্ত্রন রাখা হলো না। ইচ্ছে ছিল যদিওবা। আমার সীমাবদ্ধতায় আমাকে সংকুচিত হতে হলো না আর। প্রকৃতি নিজ হাতেই সে দায়ভার তুলে নিল। এবার এখানেও বই মেলা ছিল। এসবে একা যেতে ভাল লাগেনা। খারাপ লাগাটা বখাটেদের উৎপাত । এরা খুব উৎসাহী হয়ে থাকে একটা একা মেয়েকে সঙ্গ দিতে । এই উৎপাতের চেয়ে চোখ বুজে শুয়ে থাকা অনেক ভাল। অবশ্য তাসলিমা নাসরিন হলে অন্য কথা!
নতুন জাগা সম্পর্কে তোমাকে তো কিছুই জানানো হলোনা। চমৎকার এরিয়া। শহরের কোলাহল ছেড়ে অনেকদূর। নির্জনে। অফিস আঙ্গিনাও চমৎকার । Setting arrangement ও ভাল। আমি আর ভ্যানিটা একটা রুম শেয়ার করছি। ভ্যানিটা কমার্শিয়াল। আমি সেলস + মার্কেটিং এ। ও জানুয়ারীতে জয়েন করেছে। ভ্যানিটা খ্রিষ্টান মেয়ে। খুব ভাল। আপাততঃ আমাদের গল্প করেই সময় কাটে । দুজনে মিলে পিসিতে হাবিজাবি করি। দুজনেই মাস্টার!
দুটো কম্পুউটার ইন্সটিটিউটে চাপা ছেড়ে তো কিছু হলোনা; এবার হেল্প করো। ওয়ার্ড পারফেক্ট আর লোটাস ১-২-৩ র উপরে তোমার সেসব কাগজপত্র আছে তা কপি করে পাঠাও। তোমার কম্পুউটার কোর্স কমপ্লিট?
এবার মূল কথা। যাচ্ছো কবে ? খুব ভাল সময়ে যাচ্ছো । জাতিসংঘ এবছরটাকে FAMILY YEAR ঘোষনা করেছে। এটা তোমাদের জন্য সুখবর । সব মিলিয়ে সময়টা যেন তোমার অনুকূলেই থাকে এই শুভ কামনা।
এখনো ফোন পাইনি আমি, কবে নাগাদ পাব জানিনা। তুমি তবু পারলে ফোন করো। কাছাকাছি কোন ফোনে ওরা ডেকে দিবে নিশ্চয়। এখান থেকেও মনে হচ্ছে NWD করা যাবেনা। কার্ড ফোনই ভরসা।
আজ তোমার ছুটির দ্বিতীয় দিন। রোজা না রাখার তৃতীয় । সময় পেলে লিখো। আর ভাল থেকো।
নীলা তোমার
১৮-১৯ ফেব্রুয়ারী’৯৪ ।
আকাশ
আজ সেকেন্ড আগস্ট। আমার জন্মদিন।
জন্মদিনে কেকের পাশে আজ আটাশটা মোম লাগবে।
আটাশ বছর! কত দীর্ঘ সময়!
পেছনে ফেলে এলাম আটাশটা শ্রাবন । অবগাহন হলো না আজো। আটাশ বসন্ত, আটাশটা জীবন, ভাবা যায়! ফেলে এলাম কত হাসি-কান্না, দুঃখ সুখ। কত স্মৃতি, কত ভুল!
কিছুই বুঝি শোধরানো যাবেনা আর। রয়ে যাবে সব ছোট্ট এ জীবন জুড়ে।
এতো ছোট্ট এ জীবনে কেনো এত আয়োজন?
বৃক্ষের মত যদি তিন –চার’শ ব্ছর বেঁচে থাকা যেতো !! বার বার ফিরে পাওয়া যেতো জীবন!
ফিরে পেলে – এ জীবন টাই চে’তাম আবারো। তুমি তোমাকে যে’তাম । আরো আগে। কৈশরে। স্বপ্ন ফোঁটার সোনালী ভোরে।
তারপর তারুণ্যে, তারপর যৌবনে, বার্ধক্যে। আবার সমস্ত বেঁচে থাকা জুড়ে।
সুমনের মত – ফিরে ফিরে। বার বার।
সময় কি দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। ফুরিয়ে যাচ্ছে জীবন।
অথচ একটা মাত্রই জীবন । এই খেদ মোর মনে —
ভালবেসে মিটিল না সাধ
ফুরিল না এ জীবনে
জীবন এতো ছোট ক্যানো
ভাল থেকো , ভালো থেকো, ভালো থেকো।
নীলা তোমার
২ আগস্ট চুরান্নবই।
আকাশ
আজ তোমার চিঠি পেলাম। হাজার মাইল দুরের প্রথম চিঠি। খামটাই মনে করিয়ে দিলো দুরত্বের কথা। ঢাকা জিপিও নৈশ’র পরিবর্তে – POSTS CANADA POST
সেই দুরত্বের আবরন খুলে ফেলতেই দেখি “তুমি” । সেই কাছের তুমি। ইচ্ছা করলেই যেনো ছু’তে পারবো এক্ষুনি। আকাশ, তেরো হাজার মাইল কতটা দূর ? সে দুরত্ব তোমাকে এতোটুকু দুরের করতে পারেনি। কেনো ? কেনো টেলিপ্যাথি আজো এতো সচল ? আজ সকালে ইনকামিং মেইল এ রিসিভ করে তাঁকে বলে এসেছি কানাডা থেকে অ্যাম্বার চিঠী আসতে পারে। বিকেলেই এসে গেল ! দুপুরের পরে খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম । এক সময় নিজ মনেই বলে উঠলাম “ কোন কিছুতেই ভাল লাগছেনা আর ‘ । ভ্যানিতা জানতে চাইল কেনো । বল্লাম – চিঠিপত্র পাচ্ছিনা । মনে হচ্ছে কোথাও কেউ নেই
ও আস্বস্থ করল । — লিখেছে যখন পাবেই ।
লিখেছো সে খবর দিয়ে গেল জামান সাহেব । ১১ই জুলাই এসেছিলেন। এখনত চিনতেই পারিনি আমি । যখন চিনলাম তখন মনে হচ্ছিল নেপথ্যে আমি তোমার সাথেই যেন কথা বলছি। আমার যে কি ভাল লাগছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল কোথাও গিয়ে তাকে নিয়ে বসি। তার মুখ থেকে শুনি তোমার কথা শুনি। অথচ মানুষটাকে পছন্দ করতাম না আমি!
আকাশ – পচিশ দিন পর তোমার পৌছাবার খবর পেলাম।
বাবার নাম করে আমাকে ঢাকায় যেতে বারণ করেছো জানলাম । সে সন্ধ্যায় এ কস্টটুকু আমাকে কেনো পেতে দিলেনা ? তোমার মত আমিও সহ্য করতে পারতাম না। তবুও মনে হয় সেদিন বারণ করা তোমার উচিৎ হয়নি । আমাদের আকণ্ঠ সুখের কিছু নাই থাকল , আকণ্ঠ দূঃখের কিছুতো থাকতো ।
সে সন্ধ্যায় আমি সার্কিট হাউজের সেই মাঠটায় গিয়ে বসে থাকতে চেয়েছিলাম। অথচ বিকেল থেকেই বিষন্ন আকাশ । বিষন্ন হতে হতে এক সময় ভেঙ্গে পড়ল প্রচন্ড কান্নায়। প্রকৃতির সাথে আমিও কাঁদলাম । ঘর অন্ধকার করে। আমার পৃথিবীকে নিঃশব্দ করে। খুব জানতে ইচ্ছা করছিল – সে মুহূর্তে এয়ারপোর্টে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা , তুমি কাঁদছ কিনা । কে কে ছিল শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত । পুরো দু’দিন এরকম শুয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। ওয়ার্ল্ড কাপ এর উদ্বোধনীও দেখিনি। সেদিঙ্কার সে সন্ধ্যায় অনুভূতি আমি কাউকে বোঝাতে পারবোনা যে তুমি আমাকে ভালবাস, তাকেও না।
কাজের মধ্য থেকে রোববার থেকে হালকা হয়েছি কিছুটা। তারপর থেকে শুরু হয়েছে অপেক্ষার। তোমাকে লিখতে চেয়েছি অসংখ্যবার। পারিনি। কোন শব্দ, কোন ভাবনা আমার মাথায় আসেনি। সমস্ত বোধই শূন্য হয়ে গিয়েছিল। আমার সমস্ত ভাবনা, সমস্ত অনুভূতি যেন চলে গেছে তোমার সাথে তেরো হাজার মাইল দূরে। সে মূহূর্তে ভাবতেও পারিনি আর কখনো গুছিয়ে কিছু লিখতে পারবো বলে। প্রথম লিখলাম ১১ই জুলাই। জামান সাহেব আসার পর। সে চিঠি রাফই রয়ে গেছে।
ষোল তারিখ সন্ধ্যায় হঠাৎ মনটা কেমন যেনো করে উঠলো । গান শুনতে চাইলাম, কবিতা ভাল লাগছেনা কিছুই । মনে পড়ল গত মাসের এ রকম সন্ধায় চলে গেছো তুমি। আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। আবারও কাঁদলাম । তোমাদের দেখব বলে সতর তারিখ রাত জেগে ফাইনাল খেলা দেখলাম। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে পরদিন অফিস করলাম। ঘর ফিরে জ্বর বাধালাম । আজ সকালের দিক থেকে কিছুটা ভাল লাগছে ।এখন ? পুরো ভাল।
তোমাকে ফোন করার ইচ্ছে হয়েছে অনেকবার। সময়ের তফাৎটা জানা ছিলনা। আমাদের দিন রাত্রিগুলোও আলাদা হয়ে গেল অবশেষে ! এক পৃথিবীতে থেকেও অন্য ভুবনে!!
আকাশ – এক জীবনে যাকে পাওয়া যায়না , অন্য কোন জীবনেই বোধহয় তাঁকে আর পাওয়া হয়না। তবু কেন আমার নিয়তি আমাকে সে দুর্লভ মোহে টেনে নিয়ে যায় তের হাজার মেইল দূরে?
যেখানেই থাক ভালো থেকো তুমি।
আমি ভাল আছি। এভাবেই ভাল থাকবো – তোমার ভালবাসায় ।
স্মৃতি ও চিঠিতে।
নীলা
শুধু তোমার।
উনিশে জুলাই’ চুরান্নবই।
পেটে সাত মাসের বাচ্চা নিয়ে এইসব চিঠিগুলো যখন আমি পড়ছিলাম । আরো অনেক চিঠি। গতকাল সন্ধ্যায় আকাশ আমাকে প্রহার করলে প্রতিবেশী পুলিশ ডাকে। পুলিশে আকাশকে নিয়ে যায়। স্বামী – স্ত্রীর মধ্যে রেস্ট্রেইনিং অর্ডার দেয় কোর্ট। আকাশ অফিসে আমাকে ফোন করে বলে একটা সুটকেসে ভর্তি করে ওর কাপড়গুলো যেনো আমি ওর ঠীকানাতে পৌছে দেই। আমি যখন কাপড় ভরছিলাম এক সুটকেস থেকে অন্যটাতে যখন এই চিঠিগুলো পেলাম।
তখন আমি দুটো কাজ করতাম। সকাল সাতটা থেকে হাসপাতালের একাউন্টিং অফিসে। বিকেলে ব্যাঙ্কে পেনসন এনালিস্টের কাজ করে ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে যেতো। প্রতিদিন ফেরার সময় দুহাতে বাজার করে নিয়ে আসতাম। বাচ্চা পেটেসহ আমার ওজন হয়েছিল ২২০ পাউন্ড। সাথে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস। জেস্টেশলান ডায়াবেটিস অনেক প্রসূতির হয়ে থাকে। বাচ্চা হবার পরে সেটা চলে যায়। আমার এ্যাজমাও বা হাফানীও আছে। জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হলে প্রসূতিকে খুব সাবধান থাকতে হয়। খাবার খাওয়ার পরে আঙ্গুলে ছিদ্র করে রক্ত নিয়ে তা একটা সরু কাগজে লাগিয়ে মেশিনের ভেতরে কাগজ দিয়ে পরিক্ষা করতে হয় ডায়াবেটিসের মাত্রা ঠিক আছে কি নেই। যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে হবে নাহলে পেটের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তখন মা বেঁচে ছিলেন। আমি ঘরে ফেরার অনেক পরে নীলার আকাশ ঘরে ফিরত। সে কানাডাতে নতুন এসেছে। তখনও কোন কাজ পায়নি। তাহলে সাড়া দিন সে কি করে? সে লাইব্রেরীতে থাকে। সেখানে বসেই নীলাকে চিঠি লেখে।
আকাশ ভাগ্যবান মানুষ। বউয়ের পেটে বাচ্চা। আর বাংলাদেশে প্রেমিকা নীলা। বউ দুইটা কাজ করে। বাড়ী কিনেছে। বাজার হাট রান্না বান্না সব করে। আকাশ বসে বসে খায় আর নীলাকে চিঠি লেখে। ঘরে ফিরে বউকে ধমক দেয় বা প্রহার করে। প্রেম, সন্তান সম্ভবা স্ত্রী, প্রহার, সব কিছু মিলিয়ে জীবন কেমন ছিল আমি ঠিক জানিনা। জানার বা বোঝার সময় ছিল না। নবজাতকের আগমনের অপেক্ষাতে সারাদিনের কাজে, ঘরে বাইরে প্রচন্ড ব্যস্ততায় কেমন আছি বোঝার আগেই রাত হয়ে যায়। ক্লান্তিতে ঘুম এসে যায়। ভোর হলেই আমার মাথার ভেতরের এলার্ম আমাকে জাগিয়ে দেয়।
গতকাল ছিল ৪ঠা আগস্ট, ২০১৫। আকাশ ফোন করেছিল আমাকে। আমি তখন বাসে বসা। বাসের শব্দে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। আমি আবার এক কানে শুনিনা। আকাশ একদিন থাপ্পড় মেরে আমার একটা কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয় । সেও অনেক বছর আগের কথা। আমি এক কানে শুনিনা । ফোন করে আকাশ বললো – নীলা মারা গেছে। সিঙ্গাপুরে গেছিল ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে। বিয়ে হয়েছিল । এক ছেলে এক মেয়ের মা হয়েছিল। স্বামী তাঁকে চিকিৎসা করাতে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেছিল।
বললাম – তুমি যদি নীলাকে বিয়া করতা তাইলে আজ বিধবা হইতা।
আকাশ বললো – এখন যেটাকে নিয়া আছি সে মরলে ফকিররে পয়সা দিতাম।
আমার বলার কিছু ছিলনা।
Md Alim liked this on Facebook.
Mizan Ahmed liked this on Facebook.
Anjana Alam liked this on Facebook.
Sumon Sahin liked this on Facebook.
M F Karim Khan liked this on Facebook.
Yusuf Un Nobi Babu liked this on Facebook.
Mahbubul Haq Liton liked this on Facebook.