ঢাকা : বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো । এমনিক কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদনও দিচ্ছে না তারা। তিন চাকা বিশিষ্ট অটোরিকশার (ইজিবাইক) জন্য সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপনের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। গত মাসে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা সংক্রান্ত শাখা ‘পাওয়ার সেল’ চিঠির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করেছে।
সূত্র জানায়, ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জের কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে এগুলো চার্জ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ছয় বিভাগীয় শহরে ছয়টি সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় শহরে সোলার স্টেশন স্থাপনের চিন্তা করা হয়। গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় বিদ্যুৎ বিভাগকে দ্রুত এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। এরপর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এ কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি নেই।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর ২২ জানুয়ারি পত্রের মাধ্যমে পাওয়ার সেলের কাছে প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
পাওয়ার সেল গত ১৬ জুলাই ফিরতি পত্রে জানায়, সারাদেশে নিজস্ব অর্থায়নে মোট ছয়টি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তিনটি এবং ডেসকো, ডিপিডিসি ও পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) একটি করে স্টেশন স্থাপনের কথা ছিল। এ বিষয়ে সমীক্ষা করে পিডিবিকে একটি প্রতিবেদন দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু চার্জিং স্টেশন স্থাপনতো দূরের কথা সমীক্ষাও করা হয়নি। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলেও কোনো কোম্পানিই সাড়া দেয়নি।
এ সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে জানান, বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায় না। এদিকে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় গ্রিডের মূল্যবান বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা যাচ্ছে না। কারণ দেশের প্রায় সব জায়গাতেই বিদ্যুৎ চুরি করে ইজিবাইকের ব্যাটারি রিচার্জ করা হয়। এর সঙ্গে বিতরণ কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত।
উল্লেখ্য, অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধে সরকার দফায় দফায় ইজিবাইক বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়। সড়ক বিভাগের মতে, বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ ইজিবাইক দেশের সড়কগুলোতে চলছে। একটি ইজিবাইক প্রতিদিন ১ দশমিক ৯ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
পাওয়ার সেলের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরিকল্পনা ছিল রংপুর ছাড়া অন্য সব বিভাগে সুবিধাজনক স্থানে স্টেশনগুলো স্থাপন করা হবে। পরীক্ষামূলক উদ্যোগ সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। ছয় বিভাগে পরীক্ষামূলকভাবে চার্জিং স্টেশন করতে মাত্র ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ একটির জন্য খরচ হবে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর উদাসীনতায় প্রকল্পটি আজও আলোর মুখ দেখছে না। যদিও কোম্পানিগুলোর তহবিলে কোটি কোটি টাকা অলস পড়ে থাকে।
MD Khalilur Rahman liked this on Facebook.
Rajib Khan liked this on Facebook.