নিম্নমানের কাপড়ের পোশাক নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে অসন্তোষ

পুলিশ বাহিনীতে নিম্নমানের গম সরবরাহের রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীতে নিম্নমানের কাপড় সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। এশিয়ান টেক্সটাইল নিম্নমানের কাপড় সরবরাহ করায় পাঁচ বছরের জন্য পুলিশে কাপড় সরবরাহের অযোগ্য ঘোষণা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এশিয়ান টেক্সটাইল ও তিশা টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান দুটির সরবরাহ করা কাপড় দ্রুত বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পোশাক দ্রুত বিবর্ণ হওয়ায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

নিজের টাকায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নতুন কাপড় কিনতে হচ্ছে। এতে অর্থের অপচয় হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বছরে তিন সেট পোশাকের জন্য কাপড় পেয়ে থাকেন। ওই পোশাক পরেই তাঁদের সারা বছর দায়িত্ব পালন করতে হয়। একেক সেট পোশাকে তাঁদের চার মাস চালাতে হয়। কিন্তু ওই দুই কোম্পানির দেওয়া কাপড় এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মান নিম্ন হওয়ায় ওই কাপড়ের তৈরি পোশাক দ্রুত ছিঁড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া কাপড়ে সুতার পরিমাণ কম এবং পলিয়েস্টারের পরিমাণ বেশি থাকায় ওই কাপড়ের তৈরি পোশাক পরে রোদের মধ্যে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেননা পলিয়েস্টারের কাপড়ে গরম বেশি লাগে।

আরেকটি কাপড় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তিশা টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। গত ১৬ জুলাই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিশা টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি এম ফতে কবিরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ওই অভিযোগের জবাব চাওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী তিশা টেক্সটাইলকে কেন কালো তালিকাভুক্ত করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সঠিক জবাব দিতে না পারলে এই প্রতিষ্ঠানটিকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দুই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা কাপড় সম্পর্কে পুলিশের স্থানীয় পর্যায় থেকে অভিযোগ আসে।

আমরা ওই কাপড় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এসজিএসের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করি। ওই দুই পরীক্ষাতেই নিম্নমানের কাপড় এবং রং দেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এশিয়ান টেক্সটাইলকে পাঁচ বছরের জন্য পুলিশ বিভাগে কাপড় সরবরাহের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিশা টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এশিয়ান টেক্সটাইল থেকে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মান ও সময় বজায় রেখে কাপড় সরবরাহ না করতে পারার লিখিত ব্যাখ্যায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হারুন-উর-রশিদ পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো জবাবে বলেছেন, আড়াই লাখ মিটার গাঢ় নীল টিসি কাপড় সরবরাহের কার্যাদেশ পাওয়ার পর তাঁরা বিদেশ থেকে রং ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করেন।

কিন্তু ওই সময়ে দেশে অবরোধ ও পেট্রলবোমা হামলার কারণে তাঁরা তা কারখানায় নিতে পারেননি। জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির কারণে কারখানায় উৎপাদনও সঠিকভাবে হয়নি। ফলে কাপড় উৎপাদনে সমস্যা হয়েছে। এশিয়ান টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা কাপড়ে উন্নত মানের রঙের বদলে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের রং ব্যবহার করেছে। উন্নত মানের ডাই (রং) ব্যবহার করে তৈরি কাপড় যেমন তাড়াতাড়ি ও সহজে ছিঁড়ে না, তেমনি রংও নষ্ট হয় না। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের কর্মঘণ্টার বেশির ভাগ সময় বাইরে রোদে ও বৃষ্টির মধ্যে কাটাতে হয়—এটা ধরে নিয়ে এ ধরনের উন্নত রং ব্যবহারের শর্ত দেওয়া হয়। জানতে চাইলে এশিয়ান টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২০ বছর ধরে পুলিশে কাপড় দিই। আমাদের কাজ থেকে বের করে দিতে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে।

তাদের ষড়যন্ত্রের কারণেই আমাদের কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’ পুলিশ সদর দপ্তরের আরও অভিযোগ, কাপড় সরবরাহের নির্দিষ্ট সময়ের পর দুই দফায় মোট ১২৩ দিন সময় বাড়ানোর পরেও এশিয়ান টেক্সটাইল পুরো কাপড় সরবরাহ করতে পারেনি। সঠিক সময়ে কাপড় না পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ভীষণ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৪ হাজার ১০০ মিটার এবং ৮ মার্চ ৪১ হাজার ৫০০ মিটার কাপড় সরবরাহ করে এশিয়ান টেক্সটাইল। বছরে তিন জোড়া শার্ট ও প্যান্ট তৈরি করতে পুলিশ বাহিনীকে ওই কাপড় সরবরাহ করার পরের মাসেই কাপড় বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসে। কাপড়ের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ পলিয়েস্টার ও ৩৫ শতাংশ সুতা থাকার কথা। কিন্তু বিএসটিআই ও এসজিএসের পরীক্ষায় দেখা গেছে, সরবরাহ করা কাপড়ের ৭২ শতাংশ পলিয়েস্টার ও ২৭ শতাংশ সুতা।

অন্যদিকে তিশা টেক্সটাইলের সরবরাহ করা কাপড় পরীক্ষায় ৭১ শতাংশ পলিয়েস্টার ও ২৯ শতাংশ সুতা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। চুক্তির শর্তে সরবরাহ করা কাপড় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উৎপাদন করার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশকে তিশা টেক্সটাইল থেকে যে কাপড় দেওয়া হয়েছে, তার উৎপাদনের সময় ছিল ২০১২-১৩ অর্থবছরে। দুটি রোলে সরবরাহ করা কাপড়ের রংও দুই রকম পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে তিশা টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি এম ফতে কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু কারিগরি ত্রুটির কারণে কাপড়ের দুই রং হয়েছে। কাপড়ে পলিয়েস্টারের পরিমাণও ভুলে বেশি হয়ে গেছে। আমরা ভুল সংশোধন করে পুলিশকে ভালো কাপড় দিয়ে দেব। এমন আশ্বাস দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি।’

এ বছর পুলিশ বাহিনীর জন্য মোট ১২ লাখ মিটার কাপড় কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আট লাখ মিটার কাপড় সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে এশিয়ান টেক্সটাইল, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। পুলিশের কাপড় সরবরাহের শর্ত অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাপড় সরবরাহ করলে তা ফেরত না দিয়ে কেটে বা নষ্ট করে ফেলা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এশিয়ান টেক্সটাইল ও তিশা টেক্সটাইল পুলিশের কাছে সরবরাহ করা নিম্নমানের কাপড় নষ্ট না করে যাতে ফেরত আনা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা এ জন্য শর্ত অনুযায়ী ভালো কাপড় দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সরবরাহ করা কাপড় ফেরত দেওয়ার আবেদন করেছে। সুত্র,আমার দেশ

এআর

১১ thoughts on “নিম্নমানের কাপড়ের পোশাক নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে অসন্তোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *