বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না

শেখ জাহিদুজ্জামান

বন্ধুর জন্য গেয়ে ওঠা- হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, দেখা হবে তোমার-আমার অন্যদিনের ভোরে। বিশ্ব বন্ধু দিবস আজ। প্রতি বছর আগস্টের প্রথম রোববার দুনিয়াজুড়ে পালিত হয় দিবসটি।
বন্ধুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জর্জ হার্ভার্ট বলেছেন, ‘একজন বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না।’ তার মানে, এই আয়নাতে প্রতিমুহূর্তে সে নিজেকে দেখবে। শুধু বাহ্যিক অবয়বকে নয়, ভেতরটাকেও।
বন্ধুত্ব নিয়ে লিখতে গিয়ে আজ আমার হাতটা বারংবার কেঁপে উঠছে। কেননা আজ আমি কষ্টের সাগরে নিমজ্জিত। কিবা এই কষ্টের সংখ্যা আর কিভাবেই বা এর বাখ্যা দিব। যেখানে আজ আমি বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে জানান দিব“ বন্ধু আমি ভালো আছি” সেখানে আজ আমি ভারাক্রান্ত। বন্ধু সেতো সব কিছুর উর্ধ্বে। ভালোকে গ্রহণ আর খারাপকে বর্জন সেতো বন্ধুত্ব নয়। বন্ধুত্ব মানে সুখের সময় পাশে থাকা আর দুঃসময়ে দূরে থাকা নয়। বন্ধুত্ব মানে বিপদে গাছের মত আশ্রয় দেওয়া যেমন রৌদ্রে গাছ আমাদের দেয়। কিন্তু আজ আমরা ভুলে গেছি বন্ধুত্বের মানে। ভুলে গেছি বন্ধুত্বের ভালোবাসাকে।
বন্ধু আশিক আজ বড়ই মনে পড়ছে তোর কথা। কিন্তু তুই হয়তো আমাকে ভুলেই গেছিস। ঈদে স্কুলের সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে কথা হয়েছে। শুধু হয়নি তোর সাথে দেখা আর হয়নি মন খুলে কথা বলা। তোর কি এখনো মনে পড়ে সেই স্কুলের কথা। দুজন এক টেবিলে বসা। টিফিনের সময় ভাগাভাগি করে টিফিন খাওয়া। স্কুল ছুটি হলে দুজনে কাঁদে হাত রেখে বাড়িতে যাওয়া। তোর কি মনে পড়ে একদিন স্কুল পালানোর জন্য স্যার তোকে আর আমাকে বেদমহারে মেরে ছিলো। টানা তিনদিন স্কুলে যেতে না পারায় তুই আমাকে দেখে যেতিস। হয়ত তুই ভুলেই গিয়েছিস স্মৃতিগুলো। কিন্তু এখনো আমার সবই মনে পড়ে।
হঠাৎ কেমন করে তুই এতো বদলে গেলি। সব স্মৃতিগুলো ভুলে গেলি। আচ্ছা বল তুই কি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবি না। নিজেকে একটুও বদলানোর চেষ্টা করবি না। এভাবে অন্ধকার পথটাকে বেঁছে নিয়ে বাকি জীবনটা কাঁটিয়ে দিবি। তা কি হয় বন্ধু?
তোর কি মনে পড়ে সেই কথা? যখন আমি বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিয়ান কলেজে লেখাপড়ার সুযোগ পেলাম। তখন তুই তো আমাকে বলেছিলি, বন্ধু ঢাকা কিন্তু ভালো না। নতুন শহর, অচেনা এক জায়গা। আর মনের ভুলেও যেন সিগারেট ধরবি না। তুই বল? তোর আর আমার সম্পর্ক কি বন্ধুত্বই ছিলো। না, ছিলো ভাইয়ের সম্পর্ক। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে তুই হয়েছিলি একা। বাবার ভালোবাসায় তোর সবকিছু ছিলো। পরবর্তীতে সৎ মায়ের হাজারো যন্ত্রনা মুখ বুজে সহ্য করেছিস। কখনো কাউকে বুঝতে দিসনি তোর মনের ভেতরে হাজারো কষ্ট লুকানো। একদিন রাতে তোর কষ্টের কথা জানতে পারলাম। আমার মাকে তুই মা বলে ডাকতি। কিন্তু কখনো আমার হিংসা হয়নি। কারণ তুই আমার শুধু বন্ধু ছিলি না ভাইও ছিলি।
আমি এলাম ঢাকায়। তোর আর আমার মধ্যে দূরত্ব হতে শুরু করলো। কথায় কথায় মিথ্যা বলাটা তোর একটা স্বভাবে পরিণত হলো। যে মানুষটি কিনা আমাকে বলেছিলো সিগারেট ধরবি না সেই মানুষটি সিগারেটকে আপন করে নিলো। আর বন্ধুকে পর করে দিলো।
শুরু হলো তোর মাদকাসক্ত জীবন। সিগারেট থেকে গাঁজা, ফেনসিডিল, হিরোইন আর এখন ইয়াবাকে আপন করে নিয়েছিস। বড়ই সুখে আছিস তুই তাই না। প্রতিদিন ২/৪টা ট্যাবলেট না হলে তোর তুলকালাম শুরু হয়। তুই বল এটার নামকি জীবন? কিভাবে বন্ধু তুই এতো বদলে গেলি।
যে ছেলেটি শিক্ষকদের কাছে প্রিয় ছাত্র ছিলো। সহপাঠিদের কাছে ভাই ছিলো। পরিবারের কাছে রাজপুত্র ছিলো। যে ছেলেটি স্বপ্ন দেখতো লেখাপড়া করে পাইলট হবে। দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে। সেই আশিক আজ মাদকাসক্ত। যে আশিক ক্লাসে বলতো জানিস বন্ধু, আমি বড় হয়ে পাইলট হব। তোরা আমার বিমানে উঠবি না। একদিন দুষ্টুমি করে গণিত ক্লাসের সময় বলেছিলাম। তোর বিমানে উঠবি না, পুরো ১ ঘন্টা কেঁদে ছিলো একটি কথার জন্য। সত্যি কি জানিস আশিক, তোর বিমানে উঠার সৌভাগ্য আমাদের হলো না। আমরা হেরে গেলাম তোর মাদকাসক্ত জীবনের কাছে।
পারস্পরিক সমঝোতা, শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসার অগাধ বিশ্বাসের সেতুবন্ধন হলো বন্ধুত্ব। বন্ধু-একটি নির্ভরতার নাম, বন্ধু-চলার পথে সুখে-দুঃখে পাশে থাকা সম্পর্কের নাম। বন্ধুত্বে কোনো সীমারেখা নেই, নেই কোনো বাধ্যবাধকতা। বন্ধু শুধুই বন্ধু।
তাই বলতেই হয়, হে বন্ধু! যেতে নাহি দিব তোমায়,তবুও কি তোমায় দিতে হবে বিদায়?
চলে যাচ্ছ ? কিভাবে বলি তোমায় বিদায়।
লেখক: সাংবাদিক

২ thoughts on “বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *