আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে এখন চলছে বেহাল দশা। চরম সংকটে পড়েছে বিএনপির এই অন্যতম সহযোগি সংগঠন। এ সংকটের নেপথ্যে রয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা, আধিপত্য বিস্তার ও ত্যাগীদেরকে অবমূল্যায়ণ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশের পরপরই ছাত্রদলের কমিটির পদ-পদবি পূরণসহ সারা দেশের ইউনিটগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের মতো সুপার ইউনিটগুলোর নতুন কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। বসে নেই ছাত্রদলের পদপ্রার্থীরা। তারা যার যার মত লবিং তদবির করে যাচ্ছে।
তবে সুপার ইউনিটের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে রাজনীতিতে দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী ও মেধাবীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে ছাত্রদলের অনেক নেতার। ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, টুকু-এ্যানী দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ছাত্রদলে দুরবস্থা।
রাজপথের আন্দোলনে ছাত্রদলের পরপর দুই কমিটি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দলের মধ্যে আস্থা সঙ্কটে পড়েছে ছাত্রদল। এদিকে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ! ১১ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি ঘোষণা করা হলেও তা হালনাগাদ বা পুনর্গঠন করা হয়নি আজ অবধি।
বর্তমান ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানকে আটক করে মাদকের মামলায় গ্রেফতার করলে ও ছাত্রদল শুধু বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়ে সফল করতে পারেননি। সারা দেশের ছাত্রদলের কমিটি অনেক আগেই মেয়াদ উত্তির্ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি কথা ছিল। ১০ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। গ্রেফতার ও হামলা-মামলার অভিযোগ এনে এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
পরবর্তী টানা ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জবি, জাবিসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তাবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার পর ছাত্রদলের নেতাদের রাজপথে দেখা যায়নি। বিভিন্ন ইউনিট, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ,থানার পদপ্রত্যাশী ছাত্রদলের কর্মীরাই খালেদা জিয়ার আহবানে রাজপথে নেমেছিলেন। এদিকে আন্দলন সংগ্রামে সফলতার মুখ দেখতে হলে প্রকৃত রাজপথের পরীক্ষিত নেতাদেরকে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবিও করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদপ্রার্থীরা।
২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদলের সাথে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনটির বিদ্রোহী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কার্যক্রমহীন ছাত্রদল। দীর্ঘ দিন তারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলেও ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ঢাবিতে এক দশক আগের হল কমিটি এখনো বহাল আছে।
ছাত্রদলকে শক্তিশালী ও খালেদা জিয়ার নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সূত্রমতে, আসন্ন কমিটিতে আহবায়ক করতে রাজিব আহসানের পছন্দের হচ্ছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহ। তিনি ৯৮-৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তবে সাবেক সভাপতি জুয়েল চান আন্দোলনে ত্যাগী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মেহেদি হাসান তালুকদারকে সভাপতি করতে। এছাড়া আহ্বায়ক হিসেবে আরও যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন ইখতিয়ার কবির, রেজওয়ানুল হক শ্রাবণ, সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর, আবুল বাশার সিদ্দিকী, শাহ নেওয়াজ, নুরুল হুদা বাবু, সৈয়দ মাহমুদ, মেহেদী তালুকদার। ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন সদস্য সচিব হিসাবে আমজাদ মুন্নাকে চান। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান চান, তার অনুসারী যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগকে। ঢাবির ছাত্রদল নেতা মেহেদি তালুকদারকে গ্রেফতার করানোর পেছনে সোহাগের হাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না ঢাকা উত্তর ছাত্রদলের। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা চুড়ান্ত পর্যায়ে ছিল সভাপতি রাজীব আহসান গ্রেফতার হওয়ায় তা আবার পিছিয়ে পড়ে। সূত্রমতে, ছাত্রদল ঢাকা উত্তর কমিটিতে সভাপতির তালিকায় রয়েছেন, মিজানুর রহমান রাজ, শরিফুদ্দিন জুয়েল, রহমত উল্লাহ রহমত, রওশন, কামাল হোসেন। বিগত দিনের সরকার বিরোধী আন্দোলনে মিজানুরের ভূমিকা ছিল। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তারা হলেন, কামাল হোসেন, জাকির ও মনির।
এদিকে উত্তরের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণেও ছাত্রদলের শাখা কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নতুন কমিটিতে জায়গা করে নিতে ইতোমধ্যে কয়েকজন আগ্রহীর নাম জানা গেছে। বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনাম, জহির উদ্দিন তুহিন, লালবাগের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন বাবু এবার সভাপতি পদের জন্য আগ্রহী।
এছাড়াও মতিঝিল থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মানিক, কতোয়ালী থানার আহবায়ক আরমান উল্লাহ আরমান, চকবাজার এলাকার টিপু সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য লড়াই করছেন। এদের মধ্যে আরমান উল্লাহ আরমান নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপার ইউনিটের কমিটি ঘোষণারও প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। জবিতে ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে জায়গা নিতে তৎপর হয়েছেন ফয়সাল আহমেদ সজল কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, উমর ফারুক মুন্না, মামুন খন্দকার, উমর ফারুক কাউসার এবং ইলিয়াস আহমেদ। এদের মধ্য থেকেই আহবায়ক-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব করা হবে বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সূত্রে জানা গেছে।
বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের তেমন কোন ভূমিকা না থাকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখাগুলোর কার্যক্রম ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৭২ টি ইউনিট রয়েছে। এদের বেশির ভাগ ইউনিটে নেই ছাত্রদলের কমিটি। মূলবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি প্রায় ৫ বছর ধরে আটকে আছে। টুকু-আলিম কমিটির সময় ২০০৯ সালে এই শাখাটির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে প্রায় সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ইউনিট সচল থাকে। ২ বছরের জন্য আহবায়ক কমিটি করা হলেও বিগত ৫ বছর ধরে এই কমিটি আটকে আছে। স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়হাম আল মতি বর্তমান কমিটির আহবায়ক।
ঈদের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কমিটি গঠনের কথা থকলেও রাজীব আহসান গ্রেফতার হওয়ার পরে কোন উদ্যেগ দেখা যাচ্ছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আসন্ন কমিটিতে তরু মুক্তাদির, মাহতাব উদ্দিন জিমি, সাঈদুর রহমান সোহেল, আকন মামুন, খন্দকার ডালিয়া রহমান, আসাদ মুরাদ তালুকদার, মশিউর রহমান সোহান, রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু, খন্দকার লোকমান, এমদাদ হোসেন, সালাউদ্দিন ভূইয়া হিমেল নাম আলোচনায় আছে। এদের থেকেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার বলেন, ছাত্রদলের প্রত্যেক কমিটির জন্য চাপ আছে। ছাত্রদলের সব কমিটি গঠন করা হবে। যারা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে কাজ করে তাদের সাধারনত পদ নেই। তারা ছাত্রদল করে কিন্তু পদ নেই। কর্মীদের পুলিশে গ্রেফতার করলেও পদপদবীর পরিচয় দিতে পারে না। তাই অতি শীঘ্রই কমিটি দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, কমিটিতে যাদের নেতৃত্বে জন্য প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তাদের প্রত্যেকের কার্যক্রম দেখা হচ্ছে। ছাত্রত্ব আছে আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের কাতারে যারা ছিল, তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, ছাত্রদলকে গতিশীল করতে কমিটর বিকল্প নেই। ছাত্রদল সভাপতি গ্রেফতার হওয়ার আগে কমিটির গঠনের শেষ পর্যায় ছিল। তিনি গ্রেফতার হওয়ায় একটু সময় লাগতে পারে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উক্তি ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমরা সে লক্ষেই কাজ করবো। তাই রাজীব আহসান মুক্তির জন্য অপেক্ষা না করে কমিটি দেওয়ার আহবান জানাই। আমরা তারও মুক্তি চাই এবং কমিটিও চাই।
এআর
Hasan Mamun liked this on Facebook.
Nazmul Haque Sagor liked this on Facebook.
Helal Ahmed liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Neamul Hassan Sojib liked this on Facebook.
Yusuf Un Nobi Babu liked this on Facebook.
AB Anwarul Alom liked this on Facebook.