নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করে নিজের দেশকে পরিচিত করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। বাংলাদেশের হয়ে এককভাবে এই প্রথম ড. মো. হারুন অর রশিদ তিনটি নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন। বাংলাদেশে মসুর ফসলের শিকড়ে গুটি বা নডিউল সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর গবেষণা করেন বিনার এই ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ, বিনা এবং মসুর ফসলের নামের সাথে মিল রেখে নতুন এই তিনটি প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে: Rhizobium bangladeshense, Rhizobium binae, Ges Rhizobium lentis|
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০০৯ সালে সংগৃহীত ৩০টি ব্যাকটেরিয়া থেকে সাতটি জিন সিকোয়েন্স করে বায়োইনফরমেটিক এনালাইসিস, ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টসহ আরও অনেক বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব বিদ্যমান। পরবর্তী সময়ে জার্মানি, তুরস্ক ও সিরিয়া থেকে মসুর ফসলের শিকড়ে নডিউল সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করে গবেষণা করেন তিনি।
তুলনামূলক গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশে যে প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব বিদ্যমান তা অনন্য।
২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের এই গবেষণা ফলাফল মাইক্রোবায়োলজির বিখ্যাত জার্নাল “সিস্টেমিক অ্যান্ড আপ্লাইড মাইক্রোবাইলজি”এবং “এফইএমএস মাইক্রোবাইলজি ইকোলজি” এ প্রকাশিত হয়।
গবেষণার দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ডিএনএ-ডিএনএ হাইব্রিডেশন, কার্বন-নাইট্রোজেন সোর্স ইউটিলিজেশন প্যার্টান, ফ্যাটি এসিড প্যার্টান এবং জিনোম সিকোয়েন্স করে গবেষণা করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণা থেকে এই তিনটি নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। ব্যাকটেরিয়ার নামকরণের আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি আইসিএনবি (ICNB) অনুসরণ করে নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ও এর বৈজ্ঞানিক নামের স্বীকৃতি প্রদানের একমাত্র জার্নাল“ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ সিস্টেমিক অ্যান্ড ইভিউলোশনারি মাইক্রোবাইলোজি”এই নামকরণ জুন ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়।
নতুন আবিষ্কৃত ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা উৎকৃষ্টমানের জীবাণু সার তৈরি করা সম্ভব হবে যা মসুর ফসল ছাড়াও খেসারি ও মটরসুটি ফসলে ব্যবহার করা যাবে। বিনা ইতোমধ্যে এ ধরনের জীবাণু সার উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা শুরু করেছে। ফলে আগামীতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমে আসবে এবং উক্ত ডাল ফসলগুলোর ফলন ১০-২০% পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
ড. মো. হারুন অর রশিদ জানান, এই গবেষণা থেকে আবিষ্কারের অন্যতম দিক হলো এটি মৌলিক গবেষণায় অবদান রাখবে।
নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের সাথে “বাংলাদেশ” এবং “বিনা”এর নাম, রাইজোবিয়াম নিয়ে পৃথিবীতে যতদিন গবেষণা হবে ততদিন সগর্বে উচ্চারিত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
Majedul Islam liked this on Facebook.
Md Mobin liked this on Facebook.
Shamsul Alam Ujjal liked this on Facebook.