সিসিলের ছবি দেখে মুগ্ধ হতে না হতেই সংবাদের হেডলাইনের দিকে চোখ গেল তখন আমার বুক ভেঙ্গে গেল। আমি সিসিলকে এই প্রথম দেখলাম আর এই শেষ দেখলাম । সিসিলকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কোন এক দ্বিপদ জানোয়ার সিসিলকে হত্যা করেছে। সংবাদটি আর পড়া হয়নি। আমি কস্ট পেলেই আমার সব কাজকর্ম পন্ড হয়। বুকের ভেতরে মোচড় দিতে থাকে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাড়াদিন অফিসে সিসিলের নিস্পাপ মুখ ভেসে উঠেছে। সিসিলের কি অপরাধ ছিল? কেনো তাকে হত্যা করা হলো ? এই প্রশ্নের জবাব কেউ জানেনা। সিসিলকে যে হত্যা করেছে সে একজন দাঁতের ডাক্তার।
একজন দাঁতের ডাক্তার যে নাকি রোগীদের দাঁতের যত্ন নিতে সাহায্য করে, দাঁতের যত্ন সম্পর্কে উপদেশ দেয়, বলা চলে একজন দাঁতের ডাক্তার দাঁতের সেবক। দাঁতের সাথে স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দাঁত দিয়ে আমরা খাদ্য চিবিয়ে থাকি। তাই খাবার গ্রহন ও হজম করার জন্য ভাল দাঁতের দরকার।ছোটবেলা থেকে নিয়মিত দাঁতের যত্ন না নিলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্য জমে দাঁতের মারির চারপাশে খাদ্যগুলো শক্ত পাথরের মত হয়ে দাঁতের ক্ষতি করে, মারিতে ইনফেকশন হয়। দ্রুত দাঁত নড়বরে হয়ে পড়ে যায়। একজন দন্ত চিকিৎসক যদি খুনী – সেটা অবিশ্বাস্য মনে হয়।
একটি সিংহ এক থেকে বিশ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। চার বছর বয়সে একটি নারি সিংঘ বাচ্চা প্রসব করে। সাধারণত চার থেকে ছয়টা বাচ্চা প্রসব করে। একটি পুরুষ সিংহ বিশ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে কিন্তু সাধারনত ওরা দশ থেকে বারো বছর বাঁচে। একজন নারী সিংহ আঠারো বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে কিন্তু সাধারণত তারা বারো থেকে তেরো বছর বাঁচে।
একজন নারী সিংহ মা হতে চাইলে সে পুরুষ সিংহ বেছে নেয়। পুরুষ সিংহরা এই নারী সিংহের সঙ্গী হবার জন্য রীতিমত যুদ্ধ করে। একজন নারী সিংহ ১১০ দিন পরে শিশু সিংহ প্রসব করে। প্রসব করার সময় মা সিংহ গভীর জংগলে একটি নির্জন জাগা বেছে নেয়। জন্ম নেবার দশ দিন পরে শিশু সিংহরা হাটতে শুরু করে। বেশীরভাগ সিংহ শাবক পনেরো দিনের মধ্য হাটা শুরু করে। শিশুরা যখন চার থেকে দশ সপ্তাহ বয়স পায় তখনই মা তাদের লুকানো জাগা থেকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে। সিংহদের সমাজ আছে। সিংহ সমাজে মাবাবা মিলে অন্যান্য মাবাবাদের সাথে সবাই মিলে বাচ্চাদের লালন পালন করে।
জন্মের প্রথম বছর যদিও সিংহ শাবক মায়ের দুগ্ধ পান করে তবুও মা তাদের শিকার করে মাংস খাওয়ানো শেখায়। সিংহশাবকেরা তাদের ভাইবোন ও মাবাবার সাথেই শিকারের কৌশল শেখে।
সিসিল ছিল একটি পুরুষ সিংহ। সিসিল বাস করতো জিম্বাবুয়ের ন্যাশনাল পার্কে । জিম্বাবুয়ের ন্যাশনাল পার্কে মূল আকর্ষণ ছিল সিসিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সিসিলকে নিয়ে গবেষনা করে। গার্ডিয়ান পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে সিসিলকে একটি বিখ্যাত সিংহ হিসাবে উল্লেখ করে। সিসিল ছিল একটি ভিন্ন ধরনের সিংহ যা নাকি আফ্রিকার বিশ হাজার সিংহের চাইতে আলাদা ।
এই মাসে ওয়াল্টার পামার নামের এক শিকারী অন্য এক পেশদার শিকারীকে ৫০,০০০ ডলার প্রদান করে সিসিলকে হত্যা করার জন্য। এই শিকারী সিসিলকে বনের বাইরে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করে।
সাড়া বিশ্বের ৪০০,০০০ মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে – “সিসিল হত্যার বিচারের দাবীতে”
আমি পশু ভালবাসি। সিসিল হত্যার কাহিনী পড়ে অনেক মন খারাপ হয়ে গেছিল । বাংলাদেশে যখন প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হয় তখনও আমার অনেক মন খারাপ হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বিচারে অসহায় নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা করা হয় বা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কেউ পিটিশন লেখেনা । যাকে হত্যা করা হয় সে যদি দরিদ্র হয় তাহলে সাড়া বাংলাদেশের মানুষেরা কেউ উচ্চবাচ্য করেনা। এই মৃত্যু মেনে নেয়। আফ্রিকান একটি সিংহের মৃত্যুতে যেভাবে সাড়া বিশ্বের মানুষ নিন্দা জ্ঞাপন করছে ঠিক একইভাবে যদি ইসরায়েলকে নিরস্ত্র করতো তাহলে পালেস্টাইনের অনেক সিসিলের জীবন রক্ষা পেতো। বাংলাদেশের জনগন যদি সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খুনীদের বিরুদ্ধে এইভাবে রুখে দাড়াত তাহলে বাংলাদেশেও সিসিল হত্যা বন্ধ হয়ে যেতো । সিসিলের হত্যাকারী একজন দন্ত চিকিৎসক। সিসিলের আশে পাশেই ছিল। বাংলাদেশে যেসব সিসিলদের হত্যা করা হয় তাদের খুনীরাও শিকারের আশে পাশেই বসবাস করে।
মানুষ হোক আর পশু – যেকারুকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করা অপরাধ। বাংলাদেশের পথে মানুষ জবাই হয়। মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা হয়।সামান্য কিছু টাকার জন্য বাংলাদেশেও খোলা আকাশের নীচে মানুষ হত্যা করা হয় যেভাবে সিসিল – সেই সিংহটিকে হত্যা করা হয়েছে।
নিরপরাধ মানুষ বা পশু হত্যা অপরাধ।
যারা এই অপরাধ করে তারা অপরাধী।
যারা এই অপরাধ সহ্য করে তারাও অপরাধী।
Sumon Sahin liked this on Facebook.
Zahidul Islam liked this on Facebook.
probasnews24.com liked this on Facebook.
Mahbubur Rahman liked this on Facebook.
Mahfuz Ullah liked this on Facebook.
Md Ayub liked this on Facebook.
Joly Farhan liked this on Facebook.
Sohel Khalasi liked this on Facebook.