শত শত বেকার যুবকের অনুপ্রেরনা আঃ রহিমের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প!

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল। হাওর ও বিল-ঝিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু শুষ্ক মওসুমে বিল-ঝিল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ওই অঞ্চলে মাছের আকাল দেখা দেয়। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে এ অবস্থার অনেকটাই অবসান হয়েছে। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিম নিজেকে একজন আদর্শ মৎস্য খামারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন। তিনি এখন হাওরপাড়ের বেকার যুবকদের প্রেরণার উৎস। আবদুর রহিম ব্যাপব ভাবে মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করায় এলাকার শত শত বেকার যুবকের আত্মকর্ম সংস্থানের যেমন সুযোগ হয়েছে অন্যদিকে মাছ চাষাবাদে তিনি নিজেও এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

একজন আদর্শ খামারি হিসেবে জাতীয় ভাবে মনোনীত হওয়ায় ইতিমধ্যে তার খামার সমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. রিয়াজ উদ্দিন সরকারসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মৎস্য খামারি আবদুর রহিম ২০০৩ সাল থেকে হাওরপাড়ে নিজের ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বিস্তীর্ণ এলাকায় ৩৩ একর ভূমির পুকুরে মাছ চাষাবাদ করেছেন। নিজে ও পরিবারের লোকজন ছাড়াও প্রতিদিন অর্ধ শত কর্মচারী নিয়মিত কাজ করছে তার খামারে। মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি পুকুরপাড়ে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন মওসুমের সবজি বাগানও। বর্তমানে এলাকায় অনেক বেকার যুবক তার এ সফলতা দেখে মাছ ও সবজি চাষ শুরু করেছেন।

সমপ্রতি উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে আদর্শ খামারে গিয়ে কথা হয় ওই খামারির সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৩ সালে প্রথম খামারে মাছ চাষের পর বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরের বছরও একই ভাবে বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়ি আমি। তার পরেও হাল ছাড়িনি। বন্যার কবল থেকে খামার রক্ষার উদ্যোগ নিই। এর পর থেকে খামার লাভজনক হয়ে উঠতে থাকে। বিদেশে না গিয়ে মনোযোগ দিই মৎস্য চাষে। এখন আমি প্রতিষ্ঠিত একজন মৎস্য খামারি। এলাকায় আমার দেখাদেখি বেকার মানুষজনও পুকুর খনন করে ব্যাপকভাবে মাছ চাষ শুরু করেছেন। তিনি আরও জানান, শুকনো মওসুমে বিলঝিল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এলাকায় ব্যাপকভাবে মাছের অভাব দেখা দেয়। এ সময় মাছের দামও থাকে বেশি। এ কারণেই এলাকায় খামার প্রতিষ্ঠা করে মাছ চাষ করছেন তিনি। বর্তমানে তার মাছের খামারে দেশীয় রুই, মৃগেল, কাতলা, রাজপুঁটি, গ্রাসকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে।

এলাকায় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে তার খামারের মাছ ও সবজি বিভাগীয় শহর সিলেটসহ সারা দেশে পাইকারি বিক্রি করা হয়। উপজেলা মৎস্য ও কৃষি অফিসের সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ ও সবজি বাজারজাতকরণের প্রবল ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে হাওরবেষ্টিত এ অঞ্চলে রাস্তা ঘাটের বেহালবস্থা ও খাসিয়ামারা নদীর আলীপুর বাজারের নিকটবর্তী সেতু না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই এখানে। সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান আহমদ বলেন, আবদুর রহিম হাওরপাড়ের একজন আদর্শ মৎস্য খামারি। তার খামার দেখে এলাকার অনেকেই মাছ ও সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আদর্শ মৎস্য খামারি হিসেবে তিনি জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ারই দাবিদার।

আতিক/প্রবাস

৬ thoughts on “শত শত বেকার যুবকের অনুপ্রেরনা আঃ রহিমের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *