ঘুষ, চাকুরী, বয়স এবং বিয়া

আজ অফিস যেতে যেতে ফেসবুক ঝাকাঝাকি করতে করতে আমার স্মার্ট ফোনে একটি মেয়ের মুখ ভেসে এলো। ছবিতে মেয়েটি তার হলুদ শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুচছে। খবরের হেড লাইন ছিল এমনঃ

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি)‎পরিচালক প্রশাসন শাহজাহান কবির যখন টাকার দরকার হয় তখন এই সরকারী দফতরে কর্ম সৃষ্টি করে। পপি নামের এই মেয়েটির কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নেয় চাকুরী দেবার নাম করে। মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রথমে ওয়েবসাইটে পপির রোল নম্বর ৩২৪৩২ দেখা যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার রোল নাম্বার আর দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে পপিকে শাহজাহান কবির আরো এক লাখ টাকা না দেয়ার জন্য চাকরি হয়নি বলে জানান।
popy
এখন পপীর কান্নার কারণ হলোঃ
ক – সরকারী চাকুরীর বয়স সীমা পেড়িয়ে যাচ্ছে ।
খ – চাকুরী না হলে পপীর বিয়ে হবেনা।
ঘ – সাত লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও তার চাকুরী হয়নি।

ক, খ, ঘ – থেকে আমি যা বুঝতে পারলাম তা হলো —
— ঘুষ না দিলে বাংলাদেশে চাকুরী হয়না
শিক্ষাগত যোগ্যতা যথেষ্ট নয়। সরকারী কর্মকর্তাদের নানা সময়ে নানা কারণে যখন বিশাল অংকের টাকার দরকার হয় তখন তারা নিজ নিজ দফতরে পদ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন মানুষকে চাকুরী দেবার নামে লাখ লাখ টাকা নিয়ে যার যার বাড়ি গাড়ী কিনে ফ্যালে। সবাইকে যেহেতু চাকুরী দেওয়া সম্ভব নয় তাই প্রার্থীদের কাছে আরো টাকা চাওয়া হয় তারপর দাবীকৃত টাকা প্রদান না করাকে চাকুরী না পাবার অজুহাত হিসাবে দেখানো হয়।

টাকার পরেই যে বিষয়টি বাংলাদেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বয়স। এই খবর পড়ে আমি আরো কিছু তথ্য জানলাম তাহলোঃ

বাংলাদেশের বিয়ের বাজারে শুধু ভার্জিন হলেই হবেনা, কুমারী হলেই হবেনা, কামানো লাগবে। বাংলাদেশের বিয়ের বাজারে কামায় করা কিশোরী ভার্জিনের চাহিদা ব্যাপক।
কামায় না করলে বউ হবে একটি বোঝার মত। সবাই বউয়ের কামায় খাইতে চায়।

পুলিশের যখন টাকার দরকার হয় তখন রাস্তা থেকে যেকোন পথচারীকে পিটাতে পিটাতে থানায় নিয়ে চার পাচটা মামলা দিয়া পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের  থেকে টাকা আদায় করে নেয়। ছেলেকে ক্রশফায়ারে দিবে এই ভয়ে   যেভাবে হোক সেই পরিবার টাকা যোগার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

সরকারী দফতরের কর্মকর্তাদের বাড়ী বানাবার জন্য টাকার দরকার হলে বা গাড়ী কেনার জন্য টাকার দরকার হলে তারা নিজ দফতরে পদ সৃষ্টি করে ঘুষ আদায় করে বাড়ী বানিয়ে ফেলে বা গাড়ী কিনে ফ্যালে বা ধুমধাম করে মেয়ের বিয়া দেয়।

অন্যদিকে সরকারী চাকুরী করার যোগ্যতা হিসাবে মেয়েদের কুমারী ও কিশোরী হতে হবে। বুঝলাম না। কাজের সাথে ভার্জিনিটির কি সম্পর্ক? বয়সের কি সম্পর্ক ? কাজের সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার সম্পর্ক থাকতে পারে, অভিজ্ঞতার সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে হ্যাঁ এই দফতরে আসলে কোন কর্মচারীর দরকার ছিলনা। যেহেতু শাহজাহান কবীরের টাকার দরকার ছিল তাই এই পদগুলো সৃষ্টি করা হয়েছিল।

কুমারী, কিশোরী যদি কামায় না করে তাহলে তার বিয়া হবেনা। এইখানেই আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। ঘটনা কি? গত বছর বা তার আগের বছর একজন টিভি অভিনেত্রী জামাতের এক আইনজীবির সাথে টিভি টক শো’তে অংশ নিয়েছিল। তাকে বলতে শোনা গেছে — “মুসলমানেরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু”

এই টিভি অভিনেত্রী এই কথা বলেছিল বিশেষ এক কারণে। তবে কথাটা আমি বিশ্বাস করি সম্পুর্ন অন্য কারণে। বাংলাদেশে মুসলমান আছে কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ৯০% মুসলমানের দেশে কামায় করা কুমারী কিশোরীর এত চাহিদা কেনো থাকবে ? ৯০% মুসলমানের দেশে পপিরা চাকুরীর জন্য শাহজাহান কবীরকে  সাত লাখ টাকা ঘুষ কেনো দেবে?
পপীর নাম মুসলিম নাম। আমি যে ইসলাম শিখেছি সেই ইসলামে আল্লাহ্‌ পাক পুরুষদের উপরে স্ত্রীদের ভরণপোষণের দায়িত্ব দিয়েছেন। যাতে মা, বোন, বউ ঘরের বাইরে যেয়ে লম্পটদের দ্বারা প্রতারিত না হয়। যে পুরুষ কামায় করেনা তাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। কাজ করে হালাল রুজি রোজগার করা শুরু করলেই সে বিবাহ করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ্‌ পাক স্ত্রীদের উপরে অনেক দায়িত্ব দিয়েছেন যেসব দায়িত্ব স্ত্রীরা ঘরে বসেই পালন করতে পারেন তাই তাদের ভরণপোষণ, দেখাশোনা, নিরাপত্তার দায়িত্ব পুরুষের। এটাই ইসলাম। এই ইসলাম কেউ মানেনা বলেই পপিকে সাত লাখ টাকা দিতে হয় চাকুরী পাবার জন্য।  চাকুরী পেলে বিয়ের বাজারে পপীর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং বিয়ে হবে।

ঘুষ দেওয়া
ঘূষ নেওয়া
বউকে দিয়া কামায় করানো
বউয়ের টাকা মেরে দিয়ে বউয়ের চরিত্র হনণ
যৌতুক নেওয়া, যৌতুক দেওয়া
বউয়ের কামায় খাওয়া
সব কিছুই ইসলাম বিরোধী

4.3  Surat An_Nisa

And if ye fear that ye will not deal fairly by the orphans, marry of the women, who seem good to you, two or three or four; and if ye fear that ye cannot do justice (to so many) then one (only) or (the captives) that your right hands possess. Thus it is more likely that ye will not do injustice.

৪.৩ সুরা আন_নিসা
যদি তুমি ভয় করো যে তুমি এতিমের হক আদায় করতে পারবেনা তাহলে সেই নারীকে বিবাহ করে যে তোমার জন্য উপযুক্ত। [ এখানে এতিম শব্দটি ব্যবহার করার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। এখনকার মতই অতীতে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত । যুদ্ধে মৃতদের এতিমদের সম্পত্তি রক্ষা ও তা বর্ধিত করে এতিমদের নায্য পাওনা বুঝিয়ে দেবার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে। সেইসব এতিমের কথা বলা হচ্ছে] এতিম মেয়েকে বিয়ে করা যেতে পারে, একটা থেকে চারটা পর্যন্ত বিয়ে করা যেতে পারে তখনই যখন চারজনের ভরণপোষন করার ক্ষমতা থাকবে। যদি তুমি ভয় করো যে তুমি অতগুলা বউয়ের ভরণপোষন করতে পারবেনা বা হক আদায় করতে পারবেনা তাহলে একটা করো বা একজন কৃতদাসীকে বিবাহ করো যার প্রতি তুমি অন্যায় করবেনা । [এখনকার মতই অতীতে কৃতদাসী পাওয়া যেতো বা আরবের বাজারে পন্যের মত মানুষের কেনাবেচা হতো – এখনকার মতই — নারী-পুরুষ-এতিম-দরিদ্র-শিশু-কৃতদাসী এই সবার প্রতি ন্যায় করার নির্দেশ দিয়েই সুরা নিসা’ নাজেল করা হয়]

সম্পত্তিতেও ছেলেদের অধিক অংশ দেবার কারণ সেটাই যেহেতু পুরুষেরা পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ করে ও পরিবারের সকল সদস্যদের আর্থিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।

অনেকেই বলে থাকে – বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হলে পুরুষেরা সব নারীদের ভরণপোষনের দায়িত্ব বহন করবে। তাহলে যতদিন ইসলাম কায়েম না হয়, যতদিন নারীরা বিয়ার বাজারের চাহিদা মেটাতে চাকুরী খোজে আর শাহজাহান কবীরের বহুতল বাস ভবণ নির্মাণের জন্য ঘুষ প্রদান করবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৯০% মুসলমানের দেশ বলা থেকে বিরত থাকুন ।

২ thoughts on “ঘুষ, চাকুরী, বয়স এবং বিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *