আইএস নিয়ে মহা বিপদে তুরস্ক

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) আত্মপ্রকাশের পর লম্বা সময় পার হলেও প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক কখনোই আইএসবিরোধী যুদ্ধে সম্মুখ সারিতে আসেনি। বরং বেশ কয়েকবারই দেশটির বিরুদ্ধে আইএসের চোরাচালান ও জঙ্গি সংগ্রহে নীরব সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু গত সোমবার দেশটির সুরুকে হামলার পর আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো সক্রিয় হওয়ার জন্য নানা দিক থেকেই চাপ উঠেছে তুরস্কের ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী সরকারের ওপর। আবার আইএসকে উস্কে দিয়ে নিজের ওপর বিপদ ডেকে না আনার জন্যও পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ।

সব মিলিয়ে গত সোমবারের হামলার পর আইএস ইস্যু নিয়ে তীব্র সংকটে পড়েছে তুরস্ক।এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে আইএস সমর্থকদের অ্যাকাউন্টের ওপর চড়াও হয়েছে হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাস। আইএস সমর্থকদের বেশকিছু টুইটার অ্যাকাউন্টের তালিকা প্রকাশ করেছে অ্যানোনিমাস। বিবিসি জানিয়েছে, শুধু টুইটার নয়, আইএস সমর্থকদের ফেসবুক পেজ, ব্লগ, ওয়েবসাইট এবং ওয়েব প্রক্সিতেও সাইবার আক্রমণ চালাচ্ছে দলটি। অ্যানোনিমাসের প্রকাশিত তালিকায় সাড়ে সাতশরও বেশি টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ১০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছেÑ এ রকম আইএস সমর্থকদের তালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে। আইএসের তৎপরতা সম্পর্কে তুরস্কের নীতি নিয়ে গত দুই বছর ধরেই অনেক সমালোচনা শোনা গেছে।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও তার রক্ষণশীল ইসলামপন্থী পার্টি আইএসের সঙ্গে শত্রুতার পথ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সীমান্তের ওপারে কোবানিতে কুর্দি সেনারা যুদ্ধ শুরু করলে অনেক বামপন্থী রাজনৈতিক দলই সরকারকে তাতে সহযোগিতার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তখন নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তুরস্ক সরকার।বিশ্লেষকরা বারবারই বলে এসেছেন, আইএসের চেয়ে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকেই নিজেদের স্বার্থের প্রতি বড় হুমকি বলে মনে করে তুরস্ক। তাই বিশেষ ভৌগোলিক গুরুত্ব সত্ত্বেও আইএসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে ন্যাটোর সদস্য তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত শিথিল। এমনকি দেশের দক্ষিণে সামরিক ঘাঁটি থেকে বোমারু বিমান ওড়ার অনুমতিও দেয়নি সরকার।

গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে কয়েকদিন আগে তুরস্কেরই এক পত্রিকা দাবি করে, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা গোপনে আইএসকে অস্ত্র দিচ্ছে। এরপর পত্রিকা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয় সরকার। আবার তুরস্কের কুর্দিপন্থী পার্টি এইচডিপির নেতা ফিগেন ইয়ুকসেকদাক গত মঙ্গলবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, সুরুকে হামলা হয়েছে, অথবা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আগে থেকে সে বিষয়ে জানত নাÑ এমনটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সুরুক শহরে সন্ত্রাসী হামলার পর ইস্তাম্বুল শহরে মঙ্গল ও বুধবার সরকারের সিরিয়া-নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক বিক্ষোভকারী। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, দুই দিনে গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত ১২ জনকে। এছাড়া বিপাকে পড়ে বুধবার সারাদেশে টুইটার বন্ধ করে দেয়া হয়।

সুরুকের আদালত দেশটির পত্রিকায় সোমবারের হামলার কোনো ধরনের ছবি প্রকাশ করতে নিষেধ করে। ধারণা করা হচ্ছে, টুইটার ব্যবহার করে সিরিয়া-নীতির প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে জমায়েত বন্ধ করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।তবে, নানামুখী চাপে গত ছয় মাসে আইএসের বিরুদ্ধে তুরস্ক সরকারের কিছু তৎপরতাও ছিল। আইএসে নিয়োগের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ছয় মাসে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা হিসেবে আইএস এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে, তুরস্কের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এমনটা জানিয়েছে কানাডার গ্লোব অ্যান্ড মেইল। তাই সরাসরি যুদ্ধে নেমে আইএস নির্মূল করা আর নীরব অবস্থান বজায় রাখাÑ দুটো নিয়ে বেশ দোটানায় আছে তুরস্ক সরকার।

তবে গত কয়েক বছরে তুরস্ক সরকারের দৃঢ় অবস্থানই এর পেছনে দায়ী বলে মনে করছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ বাজজি। তিনি বলেন, তুরস্কের সরকার ভেবে আসছিল, এই বিদেশি যোদ্ধারাই তাদের প্রতিপক্ষ সিরিয়ার আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে। তাদের সেই পরিকল্পনা এখন উল্টো দিকে এগোতে শুরু করেছে। বিবিসি

আতিক/প্রবাস

২৩ thoughts on “আইএস নিয়ে মহা বিপদে তুরস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *