টাকার বিনিময়ে পুলিশ ধামাচাপা দিল আলোচিত মিলন হত্যা মামলা!

২০১১ সালের ২৭ জুলাই কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া ইউনিয়নের নিরীহ কিশোর মিলনকে (১৬) ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ গাড়িতে করে এনে উন্মত্ত জনতার হাতে ছোট্ট এই কিশোরকে ছেড়ে দেয়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পুলিশের গাড়ি থেকে তাকে নামিয়ে দেওয়াসহ পুরো ঘটনাটির ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হলে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ।

ক্ষতিপূরণ দেওয়া, মিলনের ছোট ভাইকে পুলিশে চাকরি দেওয়া এবং বাবাকে বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কিশোর শামছুদ্দিন মিলন হত্যা মামলা চালানো থেকে তাঁর পরিবারকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে স্থানীয় পুলিশ। তাদের পরামর্শে গত ২৪ ডিসেম্বর মিলনের মা মামলার বাদী কোহিনুর বেগম আদালতে ‘এজাহারনামীয় ও সন্দিগ্ধ ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নাই; আসামিরা অভিযোগের দায় হইতে মুক্তি পাইতে ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে কোনো আপত্তি নাই ও থাকিবে না’ মর্মে আবেদন করেন। এরপর মিলনের বাবাকে দেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। তারপর দ্রুতই মামলা ‘গুছিয়ে ফেলে’ পুলিশ।

কেন এমন আবেদন করলেন জানতে চাইলে মিলনের মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় ঘুরেছি। ডিবি পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা বলে কোর্ট থেকে ডিবি পুলিশ ৫২ বার সময় নিয়েও তা দেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদালত আর ডিবি পুলিশের কাছে যাতায়াত করতে করতে আরও নিঃস্ব হয়েছি। তাঁরা (পুলিশ) এবং অন্য লোকজনও মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য সব সময় চাপ দিয়ে আসছে।’

টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে মামলটি নিষ্পত্তির আগে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজন কোম্পানীগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই আকরাম উদ্দিন শেখ পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন মিলনের বাবাকে। প্রায় তিন মাস আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাদলের মাধ্যমে ওই টাকা দেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার সময় কোম্পানীগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি মোহাম্মদ সাজেদুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমানে বাগেরহাটের ফকিরহাট থানায় কর্মরত এসআই আকরাম উদ্দিন শেখ মামলা নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মিলনের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, এখন আর কী করা।’

মিলন হত্যার মতো একটি চাঞ্চল্যকর মামলা টাকার বিনিময়ে নিষ্পত্তি করা হলো কেন- জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘মিলনের বাবার পাগলামির জন্যই এটি হয়েছে। বাড়িতে ঘর করতে তিনি মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে টাকা নিয়ে দিতে বারবার আমার কাছে আসেন। একপর্যায়ে এসআই আকরামকে বললে তিনি রাজি হন।’

আতিক/প্রবাস

৩৯ thoughts on “টাকার বিনিময়ে পুলিশ ধামাচাপা দিল আলোচিত মিলন হত্যা মামলা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *