বুকো হারাম – রুপান্তর

“বুকো হারাম” শব্দের অর্থ হলো বই নিষিদ্ধ। ইংরেজী উচ্চারণ হলো Boko Haram – book forbidden — এখানে বই বলতে পাশ্চাত্যের শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। আফ্রিকার সবগুলো দেশেই যখন পাশ্চাত্যের লুটেরা লুট করতে যেতো তখন নেটিভ বা স্থানীয় অধিবাসীদের অশিক্ষিত, বর্বর, হিসাবে বিবেচনা করে পাশ্চাত্য শিক্ষায় তাদের শিক্ষিত করার জন্য প্রচেস্টা চালানো হতো ।

সাদা আর কালো রঙ্গের মধ্য যখন যুদ্ধ হয় সেই যুদ্ধে সাদা রং সবসময়ই জয়ী হয় ।
একজন কালো মানুষকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হলেও মার্কিন যুক্তরাস্ট্রসহ সাড়া বিশ্বে  কালোদের দুর্গতি কমেনা। সেজন্য কালোরা দায়ী নয় কালোদের দেশের সম্পদ সেজন্য দায়ী।

কালো, সাদা, বা বাদামী—চামড়ার রং যা হোক না কেনো আর তারা যে ধর্মেই বিশ্বাস করুকনা কেনো তাদের দেশে যদি সম্পদ থাকে তাহলে সে সম্পদের মালিক হবে বহুজাতিক পুঁজিপতিরা কারণ –বহুজাতিক পুঁজিপতিরাই সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে।

হাজার হাজার মাইল দূর থেকে বিদেশীরা যখন কোন দেশে সম্পদ লুট করতে যায় তখন সর্বপ্রথমে এরা বন্ধুত্ব করে লোভী, দালাল, উচ্চাভিলাষি ও মিরজাফর শ্রেনীর লোকদের সাথে। এই শ্রেনীর লোক সাড়া বিশ্বের সব দেশেই বিদ্যমান। লোভী, অলস, ফাকিবাজ, প্রতারক, কুৎসিত মন মানসিকতার এইসব লোকজন সাহেবদের পদলেহণ করে, নিজেদের মানুষের পিঠে চুরি চালায়, নিজেদের দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করতে সহায়তা করে, নিজেরা সম্পদশালী হয় আর দেশের মানুষেরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে কলহে লিপ্ত থাকে বা কলহ লাগিয়ে রাখা হয় বিদেশীদের লুটপাটের সুবিধার্থে।

১৯০০ সালের আগে নাইজেরিয়াতে স্বাধীন সুলতান ছিল যারা মদিনা সনদ অনুসরণ করত। ১৯০০ সালের পরে বৃটিশরা নাইজেরিয়াতে কলোনী করে। উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ার খনিজ সম্পদ লুন্ঠন। লুটপাটের মাঝে মগজ ধোলায় প্রক্রিয়াতে নাইজেরিয়ার কিছু মানুষজনকে খৃস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। ইংলিশ শিক্ষা দেওয়া হয়। দেশীরা যখন দেশে ইংরেজী বলে তখন নিজেদের লোকের কাছে স্পেশাল ব্যবহার পায়। ইংরেজী বলতে পারাটা অনেক সন্মানের। ১৯৬০ সালে ইংরেজেরা সরাসরি লুটপাট থামিয়ে দেয়। কিন্তু বহুজাতিক তেল কোম্পানির মাধ্যমে লুটপাট চলতে থাকে। বেশির ভাগ সময়েই দুর্নীতিবাজ আর্মীরা নাইজেরিয়া শাসন করে। তারপর আসে দুর্নীতিবাজ সিভিল সরকার।

১৯৬০ সালে বৃটিশরা যখন নাইজেরিয়া থেকে বিদায় নেয় তখন যথাযথভাবে নাইজেরিয়ানদের মগজ ধোলায়  (Propagandas, Brain Wash, Eye Wash)করেই গেছে যাতে নাইজেরিয়ানরা খন্ড বিখন্ড হয়ে রাতদিন নিজেদের মধ্য নিজেরা লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকে।

muhammad yousuf২০০২ সালে মোহাম্মদ ইউসুফ একটি দল গঠন করে। এই দলের নাম Jama’a Ahlilsunnah Wal Da’a wati বা সবাই যাকে “বোকো হারাম” বলে জানে। এই দলের সাথে মোহাম্মদ ইউসুফ একটি ধর্মীয় বিদ্যালয় ও কমপ্লেক্স তৈরি করেন যেখানে দরিদ্র মুসলমান এতিম ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারবে। মোহাম্মদ ইউসুফ একজন সুন্নী মুসলমান। তিনি যখন ইসলামিক কমপ্লেক্স তৈরি করেন তখন জেহাদ করার কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। উপনিবেশিক শাসকদের কারণে ইসলামের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার জন্য ও ইসলামিক শিক্ষাকে পুনঃপ্রতিষ্টা করাই ছিল এই স্কুলের উদ্দেশ্য।

পাকভারত উপমহাদেশ থেকে ইংরেজরা বিদায় নেবার সময়ে একটা ফেয়ারওয়েল পার্টি হয়। সেই পার্টিতে সাড়া দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা্র মাধ্যমে উপমহাদেশকে বিভক্ত করে ইংরেজদের দালালদের হাতে ক্ষমতা অর্পন করা হয়। পেছনে ফেলে রেখে যায় শোষননীতি ও কায়দা কানুন – ইংরেজের “আইন” (১৪৪ ধারার মত আইন)। শিখিয়ে যায় সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম বা ভাষা বা রঙ্গের কারণে একে অন্যকে ঘৃনা করা ইত্যাদি। ইংরেজরা চলে যাবার পরে বহুকাল নাইজেরিয়াতে চলে সামরিক শাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গৃহযুদ্ধ, খুনাখুনী। এইসব কিছু থেকে বাঁচার জন্য মোহাম্মদ ইউসুফ এই বোকো হারাম দল তৈরি করে।

বহুজাতিক বিদেশী পুঁজিপতিদের পদলেহনকারী দালালদের দুর্ণীতির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে শত শত তরুন মোহাম্মদ ইউসুফের বোকো হারাম দলে যোগ দেয়। যেকোন দেশপ্রেমিক দলের উত্থান হলেই বিদেশী পুঁজিপতিরা হয় এই দলকে ধ্বংস করে দেয় এদেরকে ব্রান্ডিং করে জংগী বলে না হয় এদেরকে ক্রয় করে ফ্যালে। এদেরকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধ্বার করা হয়ে গেলে আবার এদেরকে জঙ্গী হিসাবে সাড়া বিশ্বে পরিচিত করিয়ে দেয় এবং হত্যা করে (আফগানিস্তানে তালেবান ও আল কায়দার মত)।

বোকো হারাম দলটি যখন শক্তিশালী হয়ে উঠে তখন এই দলটিকে খন্ড বিখন্ড করার কাজ চলে। ২০০৯ সালে পুলিশ অপারেশন শুরু করে। এই অপারেশন এর নাম ছিল “অপারেশন ফ্লাস” । পুলিশের সাথে যুদ্ধে বোকো হারামের ৭০০ জন সদস্য নিহত হয়। মোহাম্মদ ইউসুফকে ক্রশফায়ারে হত্যা করা হয়। এইভাবেই দেশপ্রেমিক ইসলামিক বোকো হারাম দলটির মৃত্যু ঘটে ।

২০১০ সালে বোকো হারাম আবার জেগে উঠে। ২০১১ সালে বোকো হারামের আক্রমণ থেকে স্পষ্ট হয় যে এই দলটিকে “ইসলামের” উপরে আঘাত করার দায়িত্ব দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে। বোকো হারাম ইরাকের “ইসলামিক স্টেট অফ ইরাকে”র সাথে যোগ দেয়। ইরাকের ইসলামিক স্টেট বা সিরিয়ার ইসলামিক স্টেট বা লিবিয়ার ইসলামিক স্টেট এই সবগুলো দলই বহুজাতিক পুঁজিপতিদের অর্থায়ণে ও নির্দেশে পরিচালিত হয়ে থাকে।

সাব সাহারা আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ ট্রেড পার্টনার মার্কিন যুক্তরাস্ট্র এবং নাইজেরিয়া। ৫ম বৃহত্তম তেল রপ্তানীকারক দেশ। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মোট চাহিদার ৮% তেল আসে নাইজেরিয়া থেকে।

বিদেশী তেল কোম্পানির উপস্থিতি, দেশী মিরজাফরদের দুর্নীতি, অতিষ্ট করেছে তুলেছে নাইজেরিয়ার জনগণকে। বোকো হারামের মত একটি দেশপ্রেমিক ইসলামিক দলকে ধ্বংস করে দলের ভেতর থেকে “দেশপ্রেমিক” শব্দটাকে হত্যা করে “মিরজাফর” ভরে দিয়ে এখন চালানো হচ্ছে।

এরা এখন বহুজাতিক তেল কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে। বোকো হারাম বা ইসলামিক স্টেটের  কাঁধে বন্দুক রেখে বহুজাতিক পুঁজিপতিরা  শিকার করছে – “ইসলাম” এবং “নাইজেরিয়ার খনিজ সম্পদ”।

energy

৯ thoughts on “বুকো হারাম – রুপান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *