মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলে মানুষ মুসলমান হিসাবে গণ্য হয়। কিন্তু তাকে যদি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও আদর্শের সাথে পরিচিত করা না হয়, তাহলে সেকি প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে? এ প্রশ্নটি সাবেক এক সচিবের যিনি অবসর জীবনে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছেন। দৈনিক ইনকিলাবকে এই প্রথিতযশা সাবেক সচিব টেলিফোনে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যে দেশের পাঠ্যপুস্তকে ৫৭ থেকে ৮০ ভাগ লেখা বিধর্মীদের, সেদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি প্রকৃত মুসলমান থাকবে? আমাদের ৯২ ভাগ মানুষের সন্তানদের আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে সাথে কথা বলেন সরকারদলীয় ওলামা-মাশায়েখ জোট নেতা আল্লামা রায়হান আহমদ আল কাদেরী। তিনি দুঃখ করে বলেন, সমমনা কয়েকটি সংগঠন বিষয়টি নিয়ে মানববন্ধন করলেও এ পর্যন্ত সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। প্রাইমারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অমুসলিম শিক্ষকদের গড় হার ৫৮ ভাগেরও বেশি। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের ৮৫ ভাগ শিক্ষকই বিধর্মী। একটি শিশু কোমল মন নিয়ে যখন শিক্ষালাভ শুরু করে তখন তার শিক্ষক বা গুরুর ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সে আসক্ত হয়ে পড়ে। তার মিস, ম্যাডাম বা টিচারের ধর্মীয় ভাবধারা, রীতি সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনার প্রভাব শিশুটির উপর পড়বেই।
তাহলে মুসলিম শিশুরা ছোটবেলা কী শিখবে? ৭% জনগোষ্ঠীর কৌশলগত নিযুক্তির ফলে আজ তারা প্রায় ৬০ ভাগ শিক্ষকতার পদ দখল করে আছেন। এটি কোনো স্বাভাবিক অবস্থা নয়। সাংবিধানিক উদারতায় সকল ধর্মের সমান সুযোগ এ দেশে স্বীকৃত, এনিয়ে আলোচনা করাও আইনগত বাধা-বিপত্তিতে পূর্ণ। তথাপি ৯২ ভাগ মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুসলমানী ভাবধারায় গড়ে তোলার অপরিহার্য তাগিদে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি। আশা করি, সদাশয় সরকার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোকষ্ট ও উদ্বেগের জায়গাটি অনুধাবন করবেন।গত সপ্তাহে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ১৩টি ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যে উদ্বেগটি প্রকাশ করেছেন সেটি ১৫ কোটি মুসলমানের জন্যই সমান উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার।
নেতৃবৃন্দের ভাষায়, বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সে দেশে শিক্ষাব্যবস্থার ১ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে বিধর্মী লোকদের লেখা গল্প, কবিতার পরিমাণ ৫৭ থেকে ৮০ ভাগ। এসব লেখার মাধ্যমে ১৫ কোটি মুসলমানের ছাত্রসমাজকে তাদের আত্মপরিচয় ও ধর্মীয় ভাবধারা ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব লেখায় ‘‘নেমন্তন্ন, ভজন, বাবু, প্রসাদ, পূজা, পার্বণ, বৈষ্ণব, চ-ীম-প, প্রায়শ্চিত্ত, ভগবতী, শ্মশান’’ ইত্যাদির ন্যায় বহু বিশেষ অর্থ ও মর্মবোধক শব্দ ব্যবহার করে এবং শিক্ষাঙ্গনে ধর্মীয় সঙ্গীত শ্রবণের উৎসাহ দিয়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের নিজ ধর্মবিশ্বাস দুর্বল করে ভিন্ন ধর্মের দিকে (নাউজুবিল্লাহ) ধাবিত করার সূক্ষ্ম প্রয়াস চালানো হচ্ছে। এ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এটি এক গভীর চক্রান্ত। এ চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।
পাঠ্য-পুস্তকসমূহ বাতিল করে ইসলামী ভাবধারায় নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে। অল্পসংখ্যক সংখ্যালঘুর সাথে একাকার করতে মুসলমানদের সন্তানদের ইসলামশূন্য শিক্ষায় শিক্ষিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অনেক শিক্ষাঙ্গনে এখন সকল ছাত্রকেই সরস্বতী পূজায় উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। অথচ মুসলমানের জন্য দেব-দেবীর পূজা করা সম্পূর্ণ অবৈধ, হারাম ও শিরক। নেতৃবৃন্দ বর্তমান নাস্তিক্য ভাবধারা শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষানীতির ইসলামীকরণের দাবি জানান। তারা বলেন, বর্তমান ধর্মহীন শিক্ষানীতিতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠক্রমে মানবিক, ব্যবসা শিক্ষা ও বিজ্ঞানসহ অন্যান্য শাখা থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষার নামে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের যৌনতার সবক দেয়া হচ্ছে।
মানববন্ধনে চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমানদের নিয়োগ হার ৯৮% করা, পেট্রোলবোমা ও ককটেল মেরে মানুষ হত্যা বন্ধ, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ এবং ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারীদের মৃত্যুদ-ের আইন পাস করারও দাবি জানান তারা।মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কোরআন শিক্ষা মিশন, বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ওলামা পরিষদ, ওলামা লীগ, হাক্কানী আলেম সমাজ, বঙ্গবন্ধু ওলামা পরিষদ, জাতীয় ওলামা পরিষদ, এতিমখানা কল্যাণ সমিতি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ পরিষদ এবং বেশকিছু সুন্নী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আমির মুফতি মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগজনক এ বিষয়টির প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তিনি মুসলিম সন্তানদের ঈমান, আকীদা ও ধর্মীয় ভাবধারা বিনাশী এ সর্বনাশা অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ও সংশোধন কামনা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, আমাদের ছাত্রজীবনের পাঠ্যবইয়ে নীতিকথা, উপদেশমালা, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী খ-, মহৎ ব্যক্তিদের জীবন থেকে নেয়া শিক্ষামূলক কাহিনী ছিল। বর্তমানে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার নামে এসব বিষয় ঝেড়েমুছে সাফ করে ফেলা হয়েছে। এখন শিশুদের পড়ানো হয় অর্থহীন বাজে কিছু কথা, যার অর্থ শিশু তো বোঝেই না, টিচার এমনকি অভিভাবকরাও এর অর্থ জানেন না। আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম কী ? হাটটিমাটিম টিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম, তাদের খাড়া দুটি শিং কী বস্তু? একটি মুসলিম দেশের শিশু-কিশোরদের আল্লাহ, রাসূল (সা.), দ্বীন, ধর্ম, পবিত্রতা, নামাজ, বন্দেগী, সত্যবলা, সৎপথে চলা, মা-বাবার কথা শোনা, গুরুজনকে মান্য করা ইত্যাদি না শিখিয়ে এসব কী শোনানো হচ্ছে?
কেউ কি জবাব দেবেন। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম সাম্প্রদায়িক বলে বাদ দিলেও ভিন্নধর্মের নাড়ি-নক্ষত্রও নানা কায়দায় শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে কি বর্তমান প্রজন্ম প্রকৃত মুসলমান হবে না জ্ঞান, চিন্তা, ধারণা, কল্পনায় অন্য ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়বে, বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের।অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ফারহানা আহমেদ পারুল ইনকিলাবকে বলেন, পড়ার চাপে শিশুরা এখন আর ভোরে মসজিদ বা মক্তবে যেতে পারে না। নগরজীবনের বাস্তবতায় তারা নানী-দাদী বা ধর্মীয় গৃহশিক্ষকের কাছেও মৌলিক ইসলামী শিক্ষা আগের মত পায় না। আমরা যখন আল্লাহ, রাসূল (সা.), ভালো-মন্দ, জান্নাত, জাহান্নাম, কোরআন, হাদীস, সওয়াব, গুনাহ সম্পর্কে ভালোরকম জানতে পেরেছি এখনকার ছেলেমেয়েরা এখন এসব কিছুই জানার সুযোগ পায় না।
ওরা আরবী অক্ষর বা কোরান পড়া জানে না। নামাজও শেখে না। নবী-রাসূল, ওলী-আউলিয়া, মহান ব্যক্তিবর্গ, আদর্শ মুসলিম নারীসমাজ, ধর্মীয়, মানবিক, নৈতিক কোনো শিক্ষাই তারা শেখার সুযোগ পায় না। স্কুলেতো এসব নেই-ই, বাড়িতে বা টিভি সিনেমাতেও এসব নেই। এধরনের ছেলেমেয়েরা আবার অন্য ধর্মের দেবদেবী, কাল্পনিক হিরো, পৌরাণিক কাহিনীর বীর, সতী, মুণি-ঋষিদের ভালোই চেনে। অনেক সময় খুব দুশ্চিন্তা হয়, আমাদের সন্তানেরা কি ভবিষ্যতে মুসলমান হিসেবে টিকে থাকতে পারবে? বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম কি ইসলামের উপর বেড়ে উঠছে?একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত শাহনাজ হোসেন রিমি এমবিএ ইনকিলাবকে বলেন, দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ তেমন ভাবি না। এসব ভাবার উপযুক্ত লোকজন আছেন। আমাদের চিন্তা আমাদের ঈমান ইসলাম নিয়ে। ৫৭ থেকে ৮০ ভাগ লেখা যদি বিধর্মীদের হয় তাহলে এ দেশের পাঠসূচি থেকে মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে?
কেন ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি এত অবহেলা। কেন শিক্ষানীতিতে ধর্মহীনতার প্রবল চাপ। মুসলমান শিক্ষার্থীরা জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় কেন মুসলমান হিসেবে গড়ে উঠার শিক্ষা পাবে না। শুনছি, একমুখী শিক্ষার নামে অচিরেই মাদরাসা, মক্তব, হাফেজি মাদরাসা ইত্যাদি ব্যবস্থায়ও বিধিনিষেধ আসছে। দেশ কি তবে নাস্তিক্যবাদীদের ইচ্ছায়ই চলবে। ধর্মপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী ও স্ব স্ব ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সংবিধান কি এ দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় ভাবধারা ঈমান, ইসলাম, ধর্ম-কর্ম সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে না? সত্যিই আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী বিশিষ্ট কোম্পানি আইন উপদেষ্টা আলহাজ শফিক আহমদ শফিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের নবীন প্রজন্ম কতটুকু প্রকৃত মুসলমান আর কতটুকু জন্মগত পরিচয়ধারী, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অসংখ্য টিভি চ্যানেলে তারা রাতদিন পৌত্তলিক শিরকী মাইথোলজি নানা বাহানায় নানা রঙে দেখে দেখে প্রায় মুখস্থ করে নিচ্ছে।
অথচ এসব শিশু নবী-রাসূল (সা.),ওলী-আউলিয়া, জাতীয় বীর, ইসলামের ইতিহাসের মহানায়কদের সম্পর্কে তেমন জানে না। মন্ত্রী ও নেতারা সুযোগ পেলেই মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। তারা কি ভাবেন না যে, ইসলাম ও মুসলমানের জন্য তাদেরও কিছু করার ছিল। আশা করি এ দেশের কোটি কোটি মুসলমানের স্বার্থেই অবিলম্বে শিক্ষানীতি, পাঠ্যপুস্তক ও জাতীয় সাংস্কৃতিক নীতিমালা শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারের আলোকে নতুন করে রচনা করা হবে। আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ইমাম, খতীব, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদদেরও এ বিষয়ে আলোচনা এবং মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার বিকল্প নেই।
আতিক/প্রবাস
Moksud-Ul Karim liked this on Facebook.
Fazlul Haque liked this on Facebook.
MD Shahjahan liked this on Facebook.
Ariful Islam Jony liked this on Facebook.
Younuas Khan liked this on Facebook.
Shajahan Mohammed liked this on Facebook.
Sadeq Hasan Mridha liked this on Facebook.
Rasuler Soinik liked this on Facebook.
Prul Aktar liked this on Facebook.
Sha Jalal liked this on Facebook.
Rony Ahmad liked this on Facebook.
Zïýåñ Zîhåñ liked this on Facebook.
Nazmul Haque Sagor liked this on Facebook.
Mohammad Salahuddin Arzu liked this on Facebook.
প্রবাস জীবন liked this on Facebook.
Kamal Mustafa liked this on Facebook.
sodu matro name thakbe
Jahangir Kabir liked this on Facebook.
Surmin Begum liked this on Facebook.
Md Tuhin Mia liked this on Facebook.
জাহিদুল ইসলাম বখতিয়ার liked this on Facebook.
Rustum Ali liked this on Facebook.
Jafar Khan liked this on Facebook.
Laltu Hossain liked this on Facebook.
Joly Farhan liked this on Facebook.