সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের ইস্যুতে সতর্কভাবে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্ত সকল আইন ও নজির খতিয়ে দেখছে ইসি। ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। এরপর শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন কমিশনাররা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে লতিফ সিদ্দিকী এমপি পদ হারাতে পারেন। অন্যথায় তিনি স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে বহাল থাকবেন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব (আইন) মো. সেলিম মিয়া জানান, লতিফ সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে।
২রা আগস্টের মধ্যে তাদের লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের বক্তব্য পাওয়ার পর ইসি চাইলে শুনানির আয়োজন করতে পারে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন কমিশনারগণ। আর নির্বাচন কমিশনারদের দেয়া সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে বলে জানান তিনি। ইসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, লতিফ ইস্যুতে খুব সতর্কভাবে এগোচ্ছে ইসি। নির্বাচন কমিশনারদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও এর বিরুদ্ধে যে কেউ হাইকোর্টে রিট করতে পারেন। সুতরাং নির্বাচন কমিশন আগের সকল নজির ও বিদ্যামান আইন সতর্কভাবে দেখছে।
গত ১৬ই জুলাই লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বক্তব্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পাশাপাশি লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য চেয়েও চিঠি গেছে ইসির। দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ইসিকে চিঠি দেন। বিশেষ বাহক মারফত পাঠানো চিঠির জবাব পাওয়ার পর সৈয়দ আশরাফ ও লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে শুনানি করবে ইসি। দু’জনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য লিখিত আকারে কমিশন সচিবের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। ওইদিন সংসদ সচিবালয় থেকে আইনি ব্যাখ্যাসহ একটি জরুরি চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের দপ্তরে পৌঁছায়। চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এমপি পদ বাতিলের বিষয়ে কিছু না বলা হলেও বেশকিছু আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন সংসদ সচিবালয়।
এমপি পদ শূন্য করার বিষয়ে ইসি’র আইনি দিক পর্যালোচনা করে শিগগির এ বিষয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। এক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত অতীতের সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না সে বিষয়ে খুঁটিনাটি আইনি দিক পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কি কি কারণে শূন্য হতে পারে সে বিষয়ে সংবিধান ও আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা শুরু করেছে ইসি’র আইন শাখার সিনিয়র কর্মকর্তারা। সংক্রান্ত অতীতের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে একটি কার্যপত্র আকারে প্রস্তুত করে সব কমিশনারের নিকট পাঠানো হবে। এরপরেই কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে যেহেতু লতিফ সিদ্দিকী ফ্লোর ক্রস কিংবা পদত্যাগ করেননি, সেহেতু এমপি পদ যাওয়ার বিষয়টি একটু অস্পষ্ট।
আবার দল থেকে বহিষ্কার হলেও ওই এমপির স্বতন্ত্র হওয়ার আইনগত সুযোগ নেই বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও আগের নজিরগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংসদ সদস্য (বিরোধ নিষ্পত্তি) আইন অনুযায়ী, স্পিকার কোন সংসদ সদস্যের আসন শূন্য ঘোষণার বিষয়ে ইসিকে চিঠি দিলে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে তা বিরোধ উপস্থাপনকারী ও যার বিরুদ্ধে বিরোধ উপস্থাপন হয়েছে, উভয়পক্ষকে জানানো হয়। তাদের কোন বক্তব্য থাকলে তা জানতে ইসি নির্ধারিত সময় বেঁধে দেয়। এরপর উভয় পক্ষের শুনানি করা হবে। পরে সবকিছু পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি।
অন্যদিকে সংবিধানের ৭০(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে। সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো সংসদ সদস্য যে দল তাহাকে নির্বাচনে প্রার্থীরূপে মনোনীত করিয়াছে, সেই দলের নির্দেশ অমান্য করিয়া (ক) সংসদে উপস্থিত থাকিয়া ভোটদানে বিরত থাকেন অথবা (খ) সংসদের কোনো বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন তাহা হইলে তিনি উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন। তবে বহিষ্কার করা হলে কি হবে তা স্পষ্ট নয়। লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে এই অনুচ্ছেদ কার্যকর হবে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, অষ্টম সংসদে কিশোরগঞ্জের বিএনপির এমপি আখতারুজ্জামানেরও একই রকম অবস্থা হয়েছিল। ওই নজিরকে সামনে রেখে কমিশন আইন-বিধি পর্যা?লোচনা করছে। ২০০০ সালে ৭ম সংসদে বিএনপি থেকে নির্বাচিত কিশোরগঞ্জ-২ আসনের তৎকালীন এমপি মো. আখতারুজ্জামানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন ওই আসনটি শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তখনও সিইসি’র কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার।
এরপর শুনানি করেই আখতারুজ্জামানের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে ইসি।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বর্তমান সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৯শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি মহানবী (সাঃ), হজ ও তাবলীগ জামাত নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে তাকে গত ১২ই অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ ও পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪শে অক্টোবর তার দলের সাধারণ সদস্যপদও খারিজ করা হয়। দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্পিকারের কাছে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি দীর্ঘ ৮ মাস পর গত ৫ই জুলাই সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছেছে। এর এক সপ্তাহ পরে সংসদ সচিবালয় থেকে চিঠি ইসি সচিবালয়ে পৌঁছায়।
আতিক/প্রবাস
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
Mohammed Nurun Nabi Chowdhury liked this on Facebook.
Shetol Porosh Sak liked this on Facebook.
Faisal Ahmed liked this on Facebook.
Md Rana liked this on Facebook.
Mahbub Samol liked this on Facebook.
MD Monir liked this on Facebook.
Ariful Islam Jony liked this on Facebook.
Md Kamrul Md Kamrul liked this on Facebook.
Alamgir Rashid liked this on Facebook.