সোনালি গম্বুজ শোভিত সোবোরনায়া মসজিদের সামনে অস্থায়ী ধাতব বেড়া ও পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে ট্রাম লাইন বরাবর ঠা-া অ্যাশফল্টের উপর তারা জায়নামায ও ওয়াল পেপারের টুকরো বিছিয়ে ছিলেন। তারপর তারা সার বেঁধে দাঁড়ালেন। ঘোষিত হল ‘আল্লাহু আকবর’। পরে কোমর ও হাঁটু ভাঁজ করে বিস্ময় বিমূঢ় ও ভীত চেহারার পথচারী ও চারপাশের লাঠিধারী পুলিশের সামনে তারা সিজদায় গেলেন।মস্কোতে মুসলমানদের ঈদের নামাজ আদায়ের এক সংক্ষিপ্ত ও অপূর্ণ বর্ণনা এটি।
মস্কোতে এখন মুসলমানের সংখ্যা কম নয় এবং বৈরি পরিস্থিতির মধ্যেও নগরীকে পাল্টে দিচ্ছেন তারা। রুশ পুলিশ জানায়, মস্কোর প্রধান মসজিদের চত্বর ও চারপাশের চারটি সাময়িকভাবে বন্ধ সড়কে ৬০ হাজারেরও বেশি এবং মস্কো ও বৃহত্তর মস্কো অঞ্চলের আরো পাঁচটি মসজিদ ও তিন ডজন অস্থায়ী জায়গায় আরো ১ লাখ ৮০ হাজার মুসলমান এবার ঈদের নামাজ আদায় করেন। প্রত্যেককেই মেটাল ডিটেক্টর পেরোতে হয় এবং সবার পরিচয় পরীক্ষা করা হয়।
এ পবিত্র দিনটিতে তাদের সাথে যে আচরণ করা হয় তাতে কিছু মুসলমান ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গোলযোগপূর্ণ দাগেস্তান প্রদেশের রাশিয়ার সর্বদক্ষিণ প্রান্তের শহর ডারবেন্টের অধিবাসী ২৯ বছর বয়স্ক শুশ্রƒশোভিত মুরাদ আবদুল্লায়েভ বলেন, মসজিদে নামাজ আদায় করতে চাইলে আপনাকে খাঁচার মধ্যে প্রবেশ করতে হবে।দক্ষিণ মস্কোতে একটি নির্মাণ কোম্পানিতে কর্মরত মুরাদ বলেন, কাজের মধ্যে কোনো মুসলমান নামাজ আদায় করলে তাকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হতে হয়, কিন্তু তার খ্রিস্টান বা অন্য ধর্মের সহকর্মীরা ক্লান্তিজনিত বিশ্রাম করলে বা সিগারেট খেতে লম্বা বিরতি নিলে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। মুসলমানরা তাদের দু’টি প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উদযাপনকালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যে অসুবিধা সৃষ্টি হয় তাতে কিছু মস্কোবাসী অসন্তুষ্ট। জনপ্রিয় ব্লগার ইলিয়া ভারলামভ লিখেছেন ঃ কিছু রাস্তা আবারো নামাজ আদায়কারীদের উপস্থিতিতে ভরে উঠেছে, আবার সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, পুলিশের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
বহু বছর ধরেই বছরে দু’বার মস্কোতে এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আর প্রতিবারই প্রত্যেকে অবাক হচ্ছে। এ ধরনের দিনগুলোতে মস্কোকে মুসলিমদের জন্য বৈরি স্থান বলে মনে হয়। এখানে অনেক মুসলমানের বাস এবং তাদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।সরকারী হিসেবে মস্কোর জনসংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেক্সেই মালাশেংকোর মতে, মস্কোতে অন্যূন ১৫ লাখ মুসলমান বাস করে। ইউরোপের যে কোনো শহরের চেয়ে মস্কোতে বেশিসংখ্যক মুসলমান রয়েছে।মালাশেংকো বলেন, মস্কো ধীরে ধীরে ইউরোপের বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত শহর হিসেবে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে আর মুসলমানরাও ধীরে ধীরে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।মুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে রাশিয়ার ইতিহাস শ’ শ’ বছরের সংঘাত, সহাবস্থান ও সহযোগিতার।
মস্কোর ক্ষুদ্র শাসকরা ধীরে ধীরে গোল্ডেন হোর্ড বা সোনালি তাঁবুর (মঙ্গোল-তাতার সাম্রাজ্য) শক্তিমান শাসকদের পরাজিত করে নিজেরা প্রবল শক্তিতে পরিণত হয় এবং তারপর অটোম্যান তুরস্ক, ইরান, মধ্য এশিয়া ও ককেশাসের সাথে অসংখ্য যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য সৃষ্টি করে।মস্কোতে যে সব মুসলমান বাস করেন তারা অধিকাংশই ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার সূত্রে সেখানে রয়েছেন। সøাভিক রুশ ও ইউক্রেনীয়দের পর তাতাররা রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। তারা শ’ শ’ বছর ধরে মস্কোতে বাস করছে। আজেরিরা সেখানে আসে ’৯০-এর দশকে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী লড়াই থেকে প্রাণ বাঁচাতে। তারপর যে সব মুসলমান মস্কোর বাসিন্দা হয় তারা হচ্ছে ককেশাস অঞ্চলের নানা জাতিগোষ্ঠীর মুসলমান। সশস্ত্র বিদ্রোহ ও সহিংসতার কারণে তারা ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় মস্কোতে আসে।২০০০ সালের শুরু থেকে সাবেক সোভিয়েত মধ্য এশিয়া থেকে লাখ লাখ শ্রমিক অভিবাসী মস্কোতে এসে ভিড় করতে থাকে।
তাদের অধিকাংশই স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করে। এ ছাড়া মস্কোতে সাব সাহারা আফ্রিকা, ভারত উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদেরও উপস্থিতি দেখা যায়।কথা হচ্ছে, জন্মগত সূত্রে অথবা অভিবাসী, ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মপালনকারী, কোনো মুসলমানই মস্কোতে নিজেদের স্বাগত বলে অনুভব করে না। এর একটি আংশিক কারণ হল বহু রাশিয়ানই মুসলিমদের উপস্থিতিকে হুমকিজনক মনে করে। ২০০০ থেকে চেচেন যোদ্ধা ও নারী আত্মঘাতীদের বোমা হামলাও মুসলমানদের ব্যাপারে রুশদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেছে।২০১৩ সালে রাষ্ট্র মালিকানাধীন জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান ভিটিএসআইওএম পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, রুশদের মধ্যে প্রতি ৭ জনে একজন মুসলিম প্রতিবেশী চায় না, এক-চতুর্থাংশ রুশ ককেশাসের কোনো প্রতিবেশীর পাশে বাস করতে চায় না এবং ২৮ শতাংশ রুশ মধ্য এশীয় কোনো প্রতিবেশী চায় না। ৪৫ শতাংশ রুশ ‘জাতিগোষ্ঠীর জন্য রাশিয়া’ শীর্ষক জাতীয়তাবাদী সেøাগান সমর্থন করে।মস্কোতে মাত্র ৬টি মসজিদ রয়েছে। নতুন কোনো মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সমাবেশের সম্মুখীন হচ্ছে।
হিজাব পরিহিতা নারীরা মিনিস্কার্ট ও শীতকালে শূন্যের নিচে তাপমাত্রায়ও শরীর প্রদর্শনকারী পোশাক পরিহিতাদের পিছনে হাঁটে। পুলিশ নিয়মিতভাবে গায়ের রং, দাড়ি ও পোশাক দেখে মুসলমানদের থামিয়ে তাদের কাগজপত্র পরীক্ষা করে। মস্কোতে মাত্র দু’টি হালাল হোটেল আছে। সেখানে বছরে কয়েক লাখ লোকের আগমন ঘটে। নগরীর একমাত্র মুসলিম জিম ও হেলথ ক্লিনিক উদ্বোধন করার পরই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মুসলিম কিন্ডারগার্টেন বা স্কুলের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। মুসলিম কিন্ডারগার্টেনের একটি ক্ষুদ্র নেটওয়ার্ক লিমপোপোর জান্নাত বাবাখানোভা বলেন, এগুলোর অনুমোদন পাওয়া কঠিন এবং অল্প ক’টিই আছে।মস্কো জুড়ে অসংখ্য বেকারি, কাফে ও রেস্তোরাঁ আছে যেগুলো মধ্য এশিয়ার চ্যাপ্টা রুটি ও সামোসা, পিলাফ (বিরিয়ানি) এবং কাবাব বিক্রি করে। হালাল খাবার বিক্রি এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
বহু অমুসলিম রাশিয়ায় তৈরি খাদ্যসামগ্রীর নিম্নমানের কারণে হালাল মাংসের দিকে ঝুঁকছে। হালাল মাংসজাত খাদ্যের ক্ষুদ্র উৎপাদক হালাল অ্যাশ-এর ভেনেরা কাদেরোভা বলেন, ২০০০ সালের দিকে তিনি তার প্রতিষ্ঠানটি খোলেন। এ বাজারটিতে কেউ না থাকায় সহজেই তাতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব হয়। তবে এখন তা প্রতিযোগিতা পূর্ণ। মস্কোতে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির ফলে যে বিষয়টি ত্বরান্বিত হয়েছে তা হল জাতিগোষ্ঠীগত রুশরা অধিক সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ করছে। আনাস্তাসিয়া করচাগিনা ৫ বছর আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার নতুন নাম আয়েশা। তিনি এখন হেডস্কার্ফ পরেন ও শরীর ঢাকা পোশাক পরিধান করেন। তিনি বলেন, যেভাবে আমি পোশাক পরি সে জন্য ও পোশাকের সৌন্দর্যের জন্য অনেক প্রশংসা পাই। মুসলিম পোশাক পরার জন্য আমি কোনো খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। এখানকার পরিবেশ এ রকম নয়। সূত্র : আল জাজিরা।
আতিক/প্রবাস
Hasan Hannan liked this on Facebook.
Md Arshed liked this on Facebook.
Kazi Abdul Kayum liked this on Facebook.
Akter Khan liked this on Facebook.
Mf Yasmin liked this on Facebook.
Mozid Abdul liked this on Facebook.
Ðrêãm Wêãvêr Sûjõñ liked this on Facebook.
Jafar Khan liked this on Facebook.
Evo Alam liked this on Facebook.
Ariful Islam Jony liked this on Facebook.
Arif Ahmed liked this on Facebook.
Ahsan Uddin Noashad liked this on Facebook.
Kawsar Ahmed liked this on Facebook.
Surmin Begum liked this on Facebook.
কষ্টের ফেরিওয়ালা liked this on Facebook.
Sahed Islam Khan liked this on Facebook.
Delwar Hossain liked this on Facebook.
Rafi Rafiqul liked this on Facebook.
Mdsayfur Rahman liked this on Facebook.
Shajahan Mohammed liked this on Facebook.
Jahangir Kabir liked this on Facebook.
Mahbub Samol liked this on Facebook.
MD Monir liked this on Facebook.