মুশফিককে নিয়ে এক চিলতে “ভয়”

অমৃত মলঙ্গী: লিটন দাস-কম্বিনেশন-মুশফিক। আশপাশে সৌম্য সরকার। কী বুঝলেন? কেউ কেউ হয়তো বুঝেছেন। যারা অল্প বুঝেছেন কিংবা বোঝেননি তাদের জন্য ব্যাপারটা খোলাসা করা যাক।

চট্টগ্রাম টেস্টে সৌম্যকে না খেলানোয় অনেকেই অবাক হয়েছেন। নির্বাচকরাও চেষ্টায় ছিলেন সৌম্যকে খেলানোর। কিন্তু লিটন দাসের জন্য তা হয়ে ওঠেনি। এখন প্রশ্ন হল, লিটনকে বাদ দিয়ে কেন সৌম্যকে নয়? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লিটনের চেয়ে তো সৌম্য নিজেকে বেশি করে প্রমাণ করে চলেছেন। সেক্ষেত্রে মুশফিক কিপিং করলে লিটনকে বাদ দেয়া যেত। কিন্তু মুশফিকের কিপিং কিছুদিন যাবত ‘মনের মতো’ হচ্ছে না। সেই অনামিকার ইনজুরিটা এখনো ঠিক মতো সেরে ওঠেনি। তাই উইকেটের পেছনে লিটনকে খুব দরকার। তাহলে মুশফিককে বাইরে রাখলে….! এই যা! এসব কী কথা? বিশ্বকাপের আগে থেকে মুশফিকের ব্যাট দেশকে যা দিচ্ছে, তা কে দিতে পারতেন। সাকিবের সঙ্গে তার জুটিটাকে দেশের সর্বকালের সেরা জুটি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেই মুশফিককে কি বাদ দেয়া যায়? ‘এই দিনগুলো’তে একবাক্যে বলে দেয়া যায়, ‘না, বাদ দেয়া যায় না।’

তবে দিন বদলে গেলে, আর মুশফিক যদি নিজেকে বদলাতে না পারেন, তবে ‘ভয়’ কিন্তু থেকেই যায়। টেস্টে তার সর্বশেষ ছয় ইনিংস—৩২, ০, ১২, ০ , ২ ও ৬। ওয়ানডেতে যে মুশফিককে কিছুদিন আগেও রানমেশিন বলা হচ্ছিল, সেই তিনি এ সংস্করণেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। ভারত সিরিজে তিন ম্যাচে—১৪, ৩১ ও ২৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২৪। পরের দুই ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। টি-টোয়েন্টিতেও অবস্থা ভাল নয়। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা তিন টি-টোয়েন্টিতে তার রান ১৯, ১৭ ও ১৯।

অন্যদিকে লিটন দাস এখনো বড় ইনিংস না খেলতে পারলেও, ছোটো কয়েকটি কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন। যা ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় দারুণ দরকারি। উইকেটের পেছনেও নিজের অবস্থানের দাবি তুলছেন জোরালোভাবে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার ব্যাট অহরহ হেসেছে-এ কথা সবার জানা। এখানে তার রান গড় ৫৩.১৬ ! দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে জাতীয় দলে খেলিয়েদের মধ্যে অন্যতম সেরা গড় এটি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৬টি একদিনের ম্যাচ। সেখানে ৩৪ ও ৩৬ রানের দুটি মাঝারি মানের ইনিংসও আছে। ভারতের বিপক্ষে ৪১ বলে খেলা ৩৬ রানের ইনিংসটা অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে দলের বিপদে খেলেন ৪৪ রানের কার্যকরী ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে শূন্যরানে সাজঘরে ফিরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৫ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেললেও আভাস দিয়েছেন এই অঙ্গনে সময় পেলে অনেক কিছু দেয়ার আছে তার। রাবাদার যে বলে আউট হয়েছেন, সে বলে বিশ্বের যে কোনো ব্যাটসম্যান আউট হতে পারতেন। এরপর টেস্টে অর্ধশতক করে নিজের নাম লিখিয়ে নিয়েছেন রেকর্ড বইয়ে। সবচেয়ে কমবয়সী উইকেটরক্ষক হিসেবে টেস্টে পেয়েছেন অর্ধশতক। এখানে লিটনের ৫০ রান কারো নজর কাড়েনি। নজর কেড়েছে তারা খেলা ১০২টি বল। টেস্টের মেজাজে শেষ দিকে যেভাবে তিনি ব্যাট করেছেন, তার প্রশংসা না করে উপায় নেই।

এটা ঠিক, লিটন এখনো আহামরি কিছু করে ফেলেননি। তাকে সময় দেয়ার চেয়ে ‘পরীক্ষিত’ মুশফিকই সময় পাওয়ার বেশি দাবি রাখেন। লড়াইটা মুশফিক বনাম লিটন হলে, ঠিকই ছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠবে তখন, যখন সৌম্য ওয়ানডেতে ভালো খেলে যাবেন। তখন মুশফিক যদি বিবর্ণ থেকে যান, তবে যুক্তিতে মুক্তি পাবেন না। কিপিং যদি নাই করতে পারেন, আবার ব্যাট হাতেও ধারাবাহিক না হন, তবে সৌম্য আর লিটন যায়গা পেতেই পারেন!

যে যাই বলুক, লিটন দলে আসার পর মুশফিকের শারীরিক ভাষায় বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কিপিং ছাড়তে তার এতটুকু সায় নেই। ওয়ানডেতে চালিয়ে যাচ্ছেন। টেস্টে অবশ্য করছেন না। শোনা গেছে, চট্টগ্রাম টেস্টেও কিপিং করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টিম মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় লিটনই গ্লাভস পরবেন। প্রথম ওয়ানডেতে উইকেটের পেছনে তাকে নড়বড়ে মনে হয়েছে। পরের দুটিতে অবশ্য মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন। কিন্তু চিন্তা থেকে যাচ্ছে তার আঙুলের ওই ‘ক্ষুদ্র চোট’ নিয়ে। সামনের কোনো সিরিজে ওয়ানডেতে কিপিং করতে যেয়ে চোট বৃহৎ আকার ধারণ করলে, তার দলে ঢোকাটাই শঙ্কায় ফেলে দিবে। তবে পরিবেশ এখনই অতটা ভারী হয়ে ওঠেনি। এসবই ভবিষ্যতের চিন্তা।

মুশফিক নিশ্চয়ই জানেন বর্তমানে লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত…!

‘ঢাকা টাইমস’

১৭ thoughts on “মুশফিককে নিয়ে এক চিলতে “ভয়”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *