প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কারণে সুজিনাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার নিহতের মামা কারী আবদুন নূর বাদী হয়ে প্রবাসীর প্রথম স্ত্রী সাবিনা বেগমসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
নিহত সুজিনা বেগম বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর (পশ্চিমপাড়া খালপাড়) গ্রামের মৃত হাজী আবদুর রউফের মেয়ে ও সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি (সাতহাল) গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুরাদ আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে মুরাদের সঙ্গে বিয়ে হয় সুজিনার। বিয়ের পর থেকে সুজিনা তার মায়ের সঙ্গে পিত্রালয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
এদিকে সুজিনা হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মঙ্গলবার বিশ্বনাথে দৌলতপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে স্থানীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশকে সহযোহিতা করার জন্য বৈঠকে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন দিলাওর হোসেন, তাহির আলী, আজম আলী ও তাহিদ মিয়া। সূত্র জানায়, গত রোববার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পরপরই অতিথি পরিচয়ে হাতে বনফুলের মিষ্টির বক্স নিয়ে সুজিনার পিতার বাড়িতে আসে অজ্ঞাতনামা ৪ ঘাতক। ঘাতকরা দরজায় নক করলে সুজিনার মা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানায়, সুজিনার স্বামী মুরাদের পূর্ব পরিচিত। এরপর তাদের বসতে দেয়া হয় এবং তাদের জন্য সুজিনা ও তার মা রেজিয়া বেগম নাশতা তৈরি করেন।
কিন্তু আপ্যায়নের আগেই ঘাতকরা ঝাপটে ধরে সুজিনাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এ সময় সুজিনার মা এগিয়ে এলে তাকেও আঘাত করে ঘাতকরা। একপর্যায়ে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত সুজিনা ও তার মা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। এ সময় সুজিনার একমাত্র ছোট ভাই জহির উদ্দিন (১২) ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের বাড়ির লোকজন ছুটে আসেন এবং সুজিনা ও তার মাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই সুজিনার মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্তে শেষে সোমবার রাতে সুজিনার মামার বাড়ি উপজেলার বাহাড়া দুভাগ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়। পথের কাঁটা দূর করতেই সুজিনাকে হত্যা করা হয়েছে! এমন অভিযোগ সুজিনার স্বজনদের। তাই অভিযোগের তীর এখন সুজিনার সতিন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবিনা বেগমের দিকে। সুজিনার আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী, থানা পুলিশসহ অনেকেই ধারণা করছেন, সুজিনাকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। আর এর পেছনে হাত রয়েছে সুজিনার সতিন সাবিনার। এমনটাই ধারণা করছেন অনেকেই।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাবিনার ৪ ভাইয়ের মধ্যে আপন ভাই সাজ্জাদ হোসেন (২৮) ও শাহজাহান মিয়া (৩৩), সৎ ভাই শুকুর আলী (৫৫) ও জুনাব আলী (৫২)। জুনাব আলী এলাকার চিহ্নিত একজন ডাকাত। তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া শাহজাহানকে তার মা নিজেই নেশাদ্রব্য সেবনের অভিযোগে জেলহাজতে পাঠান। সে বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে।
মুরাদের ভাই নূরুল আমিন সুজা দাবি করছেন, তার ভাই মুরাদ আহমদের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে তার (মুরাদের) প্রথম স্ত্রী সাবিনা বেগমের কোন যোগাযোগ নেই। মুরাদ দেশে এসে সুজিনাকে বিয়ে করে লন্ডন চলে যাওয়ার পর সাবিনা দেশে আসেন। তাদের পরিবারকে সুজিনার সঙ্গে মুরাদের বিয়েটা যে কোন মূল্যে ভেঙে দেয়ার জন্য চাপ দেন। লন্ডনে মুরাদের ওপর মামলা দিয়ে তাকে জেল খাটিয়েছেন তার প্রথম স্ত্রী সাবিনা বেগম।
সাবিনার ভাই শুকুর মিয়ার স্ত্রী সুনামালা বেগম বলেন, সাবিনা-মুরাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। তিন মাস আগে মুরাদ দেশে আসার এক সপ্তাহ পর সাবিনাও দেশে আসেন। ওই সময় সাবিনা-মুরাদ একসঙ্গে বসবাস করেছেন ও তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেছেন মুরাদ। বিশ্বনাথ থানার ওসি রফিকুল হোসেন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে অনেক তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।
আতিক/প্রবাস
Iqbal Mamun liked this on Facebook.
Kholil Ahmed liked this on Facebook.
Elias Ali Prodhania liked this on Facebook.
Jahangir Kabir liked this on Facebook.
Kawsar Ahmed liked this on Facebook.
Sara Khan liked this on Facebook.
Surmin Begum liked this on Facebook.