ঘটনা এরকম ঘটবে কে জানতো! সবাই মনে করছিলো এই জুড়ির মেলবন্ধন নিশ্চিত স্বর্গেই রচিত হয়েছে। আর যারা অন্য লাইনে চিন্তা করেন, তারা এর কৃতিত্ব স্যোশাল মিডিয়াকে দিচ্ছিলেন। কারণ, এই দুই কপোত-কপোতির পরিচয়টা সেখানেই।
দুই দিকের পারিবারিক-সামাজিক অবস্থান ছিল সমানে সমান, তাই পরিচয়টা পরিণয়ে গড়াতে সময় নেয়নি। দুই পক্ষের মুরব্বিদের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের দিনক্ষন ঠিক হয়। ভারতের আলিগড় শহরে আয়োজিত জাঁকজমকের এই বিয়েতে উপস্থিত হন শহরের মেয়র স্বয়ং। তিনি এসেছিলেন বর কনেকে আশীর্বাদ করতে। সবই ঠিক যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের ন্যায় ‘সোনায় সোহাগার’ সম্পর্কটা ‘দা-কুমড়োর’ সম্পর্কে রূপ নেয়।
ঘটনাটা কী? এক অর্থে বলা যায়– ঘটনা কিছুই না। কারণ, পাত্র-পাত্রী যে আধুনিক ঘরানার, সেই হিসেবে এটা তুচ্ছ একটি বিষয়। বিয়ের আসরে ধূম-ধারাক্কা আর হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে কত কিছুই তো ঘটে। সেই কতকিছুর একটা করে বসলেন বরের ভাবী স্বয়ং। তিনি আনন্দের আতিশয্যে হঠাৎ বর অর্থাৎ নিজের দেবর মহাশয়কে ধরে সবার সামনে চকাস করে এক চুমু দিয়ে বসলেন। কপাল খারাপ, ঘটনাটা চোখে পড়ে যায় কনে পক্ষের একজন ‘সেকেল’ মুরব্বির। বিষয়টি কনের গোচরে আসে। এতে পরিবেশটা হঠাৎ-ই কিছুটা গুমোট হয়ে যায়। মেয়ে পক্ষ গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর শুরু করে।
কিন্তু সর্বনাশের ষোলকলা তখনও বাকি ছিল। সেই বেআক্কেলে ভাবীজানই ঘটালেন সেটা। তার ‘চুমু কাণ্ডে’ এমনিতেই অধিক শোকে বা শকে পাথর বনে যাওয়া কনে পক্ষের সবাইকে টাসকি খাইয়ে দিয়ে দেবরের হাত ধরে তাকে ড্যান্স ফ্লোরে টেনে নিয়ে গেলেন এবার তিনি তিনি। এরপর শুরু করলেন দেবরকে নিয়ে ধেই ধেই ‘রোমিও জুলিয়েট’ টাইপের নাচ।
এরপর যদি কনে পক্ষের অনেক কষ্টে রাখা ধৈর্যের বাঁধটা বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে যায়—আপনি দোষ দিতে পারেন না। হলোও তাই। কনে ঘোষণা দিলেন— তিনি এ ছেলেকে বিয়ে করবেন না।
ছেলে পক্ষের হোমরা-চোমরা মুরব্বিরা কায়দা-কৌশলের চূড়ান্ত করে ছাড়েন বিপর্যয় ঠেকাতে। কিন্তু উভয় পক্ষের শ পাঁচেক মেহমানের সামনে দুই পক্ষে এক পর্যায়ে কুরুক্ষেত্রের লড়াইটা লেগেই যায়। যেহেতু মেয়ে পক্ষ ভারী ছিল—কিছুক্ষণের মধ্যেই বরপক্ষকে ধরে পিটুনি দেওয়া শুরু করে তারা।
এসময়ে জান-মান বাঁচাতে সম্মানিত মেহমানরা যে যেদিকে পারে ছুট লাগায়। তবে শুধু পিটুনি দিয়েই শান্ত হয়নি চরম ক্ষোভে ফেটে পড়া কনে পক্ষ। তারা বরকেও জিম্মি করে রাখে।
আলীগড়ের খায়ের রোডের ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেয়র শকুন্তলা ভারতী বিব্রত আর কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাবটা কাটিয়ে দ্রুতই ইতিকর্তব্য ঠিক করে কাজে নেমে পড়েন। আফটার অল তিনি রাজনীতি বোঝেন। গ্যাঞ্জাম সামাল দেওয়া তার বাঁ হাতের খেল। তবে এই কেসটা অবশ্যই জটিল আর বিদঘুটে টাইপের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছেলেকে জিম্মি করে মেয়ে পক্ষ। যদিও এটা তাদের নিজেদের ব্যাপার তারপরও বরকে ছাড়াতে আমাকে হস্তক্ষেপ করতেই হয়। আমি বর-কনেকে আশীর্বাদ করতে এসেছিলাম। কিন্তু তাদের দু’পক্ষই তো একে অন্যকে ধোলাইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দুই পক্ষই অভিজাত আর শিক্ষিত। এজন্য বিষয়টি বেশ বিব্রতকরই লেগেছে। বরকে ছাড়াই কনে ফিরে যায় বাপের বাড়ি।
ভারতী আরও জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু দুই পরিবারই থানা-পুলিশে জড়াতে চায় না বিষয়টি নিয়ে।
ঘটনায় হাজির আলীগড়ের এক পুলিশ কর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, তারা নিজেরাই বিবাদ ফয়সালা করতে চাইছে। আমার মনে হয় না এ ব্যাপারে নাক গলানোর প্রয়োজন আছে। কারণ, আমি তো এ ঘটনায় জড়িতই ছিলাম না!
সম্প্রতি ঘটা এ ঘটনা উদ্ভট কাণ্ড-কাহিনীতে ঠাঁসা ভারতীয় যে কোনও স্যাটেলাইট চ্যানেলের যে কোনও আজগুবি আর স্বাসরুদ্ধকর এপিসোডকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে। আর তাই সপ্তাহখানেক আগের এ ঘটনা এখনো মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে রয়েছে।
আতিক/প্রবাস
Sirajul Huque liked this on Facebook.
Laltu Hossain liked this on Facebook.
Abdul Mannan liked this on Facebook.
Sulaman Khan liked this on Facebook.