এলজিআরডি মন্ত্রীর পদ থেকে সৈয়দ আশরাফের আকস্মিক প্রস্থান বিস্ময়ের তৈরি করেছিল। যদিও তার বিরুদ্ধে দল এবং মন্ত্রণালয়ের কাজে নিয়মিত উপস্থিত না থাকার অভিযোগ ছিল। তারপরও বিপদের সময় দল এবং সভানেত্রীর পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইভাবে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হয়ে যাবেন তা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেননি। তার অব্যাহতি মিডিয়াতেও আলোচনার ঝড় তুলেছিল।
সবাই একবাক্যে বলেছিলেন, সৈয়দ আশরাফ বিতর্কিত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তবে দপ্তর হারানোর পরও রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে দূরে থাকেননি তিনি। দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করেন নিয়মিত। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক থেকেই লন্ডনে ছুটি কাটানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও ফেরেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আকস্মিক প্রস্থান ও প্রত্যাবর্তন ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতিতে ক্ষণিকের জন্য হলেও চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। রাজনীতি আপাতত শান্ত। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, কোথাও রাজনীতি নেই। গ্রামে গেলেই হয়তো সেটা আরও বেশি টের পাওয়া যায়। ভাল অথবা মন্দ যাই হোক গত দুই-তিন দশকে ঈদ শুভেচ্ছায় দেয়াল ভরে যাওয়ার একটি ট্র্যাডিশন তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে এবারের ঈদে তেমন কোন ছবি কোথাও দেখা যায়নি। সামান্য যা কিছু শুভেচ্ছা বাণী দেখা গেছে তা একটি দলের নেতাদেরই। তবে উত্তাপহীন বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দর মহলে এখন মোটাদাগে দুটি বিষয়ে গুঞ্জন রয়েছে- ১. বিএনপিতে ভাঙন ২. মধ্যবর্তী নির্বাচন।
সাধারণ সমীকরণে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা দেখা না গেলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। এতে দুুটি বিষয় যুক্ত রয়েছে।
১. ক্ষমতাসীনরা নিজেদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। এর সঙ্গে সরকারের মেয়াদ আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। নীতিনির্ধারকদের কারও কারও ধারণা, বিএনপি এখন এতটা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, কোন নির্বাচনে জয়লাভের মতো সাংগঠনিক শক্তি দলটির নেই।
২. জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার একটি বড় অংশের মধ্যে এখনও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সে ব্যাপারে একটা মীমাংসার জন্যও আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন হতে পারে। তবে সম্ভাব্য ওই নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরও বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আলিয়া মাদরাসা মাঠ সংলগ্ন আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার বিচারের দিকেও দৃষ্টি রাখছেন পর্যবেক্ষকরা। জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে খালেদা জিয়ার বিচার। এ মামলায় সাজা হলে নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন বেগম জিয়া। ওই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও কোন মামলায় রায় হতে পারে।
যদিও এমনিতেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসিত রয়েছেন। কোন নির্বাচনের আগে তার বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এর আগে অর্থ পাচারের একটি মামলার রায়ে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই রায় ঘোষণাকারী বিচারককে এখন নানারকম হেনস্তার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকদের দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। একজন মন্ত্রী পরিষ্কারই বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্থান হবে কাশিমপুর কারাগারে। আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন না। তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে ইনুর ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘পলিটিক্যাল ডিক্লারেশন দিয়ে কাউকে আনট্রিট করা যায় না। ৫৮ সালে আইয়ুব খান করেছিল, তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু বাঘের মতো গর্জন কইরা ডাক দিছিলেন, ছাত্রসমাজ দাঁড়াইছিল।’ শুধু বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই নন, তাদের প্রতি অনুগত হিসেবে বিবেচিত বিএনপির আরও অনেক নেতাই নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। আইনি ক্ষেত্রে একই যাত্রায় দুই ফলও দেখা যেতে পারে। এর কিছু নমুনা অবশ্য এরই মধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
এসব প্রেক্ষাপটেই বিএনপিতে ভাঙন নিয়ে প্রকাশ্যে-আড়ালে কিছুদিন ধরেই নানা আলোচনা চলছে। প্রভাবশালী একটি মহল ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছে বিএনপিতে। বিএনপির একটি অংশও এ ভাঙন প্রক্রিয়ায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলাবলি আছে, দলে ভাঙন সৃষ্টির আশঙ্কাতেই খালেদা জিয়া শেষ মুহূর্তে সৌদিযাত্রা স্থগিত করেন।
এর আগে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। তবে ঈদের দিন খালেদা জিয়া বিএনপিতে যে কোন ধরনের ভাঙনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাঙন আর মাইনাসের তত্ত্ব অবশ্য নতুন কিছু নয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও মাইনাস টু থিওরি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা রয়েছে। হামলা-মামলার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন দলের একটি বড় অংশ। কিছু কিছু তৃণমূল নেতাকর্মীর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশি চাপ আর মামলা থেকে রক্ষা এক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনীতিতে নাটকীয় অনেক কিছুই ঘটতে পারে। যার পূর্বাভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আপাত স্বস্তি বড় কোন ঝড়ের পূর্বাভাস কিনা এ প্রশ্ন কূটনীতিকদের মনেও জাগছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে এ ব্যাপারে জানতেও চেয়েছিলেন। ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া তার সাধ্যের বাইরে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি আবহাওয়া অফিসে চাকরি করি না।’ একথা সত্য, আমরা কেউই আবহাওয়া অফিসে চাকরি করি না।
আতিক/প্রবাস
Yusuf Un Nobi Babu liked this on Facebook.
Iqbal Mamun liked this on Facebook.
Forad Mizi Sarowar liked this on Facebook.
Abu Bakar Sohel liked this on Facebook.
Abdur Rob Bachu liked this on Facebook.
Khalil Joy liked this on Facebook.
Sohel Rana liked this on Facebook.
Md Fahad Abdullah liked this on Facebook.
Kajol Khan Anees liked this on Facebook.
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
Koays Ahmed liked this on Facebook.
Jcd Mujibcollege liked this on Facebook.