মাত্র কটা দিন। অথচ কত পরিবর্তন! আগের তুলনায় অনেক গুছিয়ে কথা বলেন। লাজুকতা ভেঙে একটু-আধটু রসিকতাও করতে ‘শিখেছেন’! দুয়েক দিন পর পর একেকটা কীর্তি গড়ে আসতে হয় সাংবাদিকদের সামনে। সাংবাদিকদের এন্তার কৌতূহল মেটাতে ২২ গজের মতো সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চেও যে ভালো ‘পারফর্ম’ করতে হবে—বেশ বুঝে গেছেন মুস্তাফিজ।
২২ গজে মুগ্ধতা ছড়ানো সেই কাটারের মতো একটা দুটো কথার ‘কাটার’ আজ সংবাদ সম্মেলনেও ছাড়লেন। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান তাতে থ বনে যায়, সাংবাদিকেরা হলেন মুগ্ধ। আগের মতো সংকোচ নেই, দ্বিধা নেই। চটপট উত্তর দিচ্ছেন। ভাবতেও হচ্ছে না। কিছু কিছু উত্তর চমকে দিচ্ছে বয়সের তুলনায় তাঁর পরিণত ক্রিকেট-ভাবনার প্রতিফলনে। মুস্তাফিজ বুঝে গেছেন, নিয়মিতই যখন দুঁদে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হতে হবে, তাহলে আর ঘোমটা দেওয়া কেন!
টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে অভিষেকেও দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল দুর্দান্ত। ওই ম্যাচে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। আজ টেস্ট অভিষেকেও আলো ছড়ালেন। এত এত অর্জন। তবে মুস্তাফিজ এগিয়ে রাখছেন ক্রিকেটের বড় দৈর্ঘ্যের অর্জনকেই।
টেস্টে রান তোলার তাড়া থাকে না। থাকে না ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাধকতা। খেলার দৈর্ঘ্যও পাঁচ দিনের। কেবল শারীরিক নয়, বিরাট মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা যেন-তেন ব্যাপার নয়। এ কারণে ওয়ানডে অভিষেকের তুলনায় আজ একটি উইকেট কম পেলেও এগিয়ে রাখছেন আজকের অর্জনকেই, ‘ওয়ানডে খেলা এক রকম, টেস্ট খেলা আরেক রকম। এগিয়ে রাখতে হলে টেস্টকেই রাখব। কারণ ওয়ানডেতে জায়গায় বল বা যা-ই করি না কেন সবাই রান করার চেষ্টা করে। টেস্টে উইকেট পাওয়া সহজ নয়। ভালো বল ব্যাটসম্যান ছেড়ে দেয়। টেস্টে উইকেট নিজের চেষ্টায় নিতে হয়।’
আজ প্রথম উইকেটটি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৩ ওভার। সাফল্য পেয়েছেন তৃতীয় স্পেলে গিয়ে। এ স্পেলে সাফল্য পাওয়ার কারণ হিসেবে বললেন, ‘যখন ভালো করতে পারছিলাম না, চেষ্টা করছিলাম অন্তত ভালো একটা বোলিং জুটি করতে। উইকেট না পেলেও ডট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। যদি দুই প্রান্ত থেকেই চাপ প্রয়োগ করা যায়, তবে উইকেট আসবে। অন্য প্রান্তে শহীদ ভাই অসাধারণ বোলিং করেছেন। আসলে দলের সবাই ভালো বোলিং করেছে।’
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হাশিম আমলাকে ফিরিয়ে টেস্টের অভিষেক উইকেট পেয়েছেন। প্রোটিয়া অধিনায়কের উইকেট পেয়ে ভীষণ খুশি মুস্তাফিজ। আজ চারটি উইকেটের মধ্যে এগিয়ে রাখছেন এটিকেই। টেস্টে ইতিহাসে অভিষেকে চতুর্থ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের সুযোগ হাতছাড়া করায় এতটুকু আক্ষেপও জানালেন সেটিও, ‘চার উইকেটের মধ্যে সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে হাশিম আমলার উইকেটটি। ভীষণ রোমাঞ্চিত। চেষ্টা করেছিলাম, তবে হ্যাটট্রিক হয়নি। তৃতীয় বলে যেটা চেয়েছিলাম, সে বলটাই করেছিলাম। উইকেটটাই কেবল পাইনি।’
টি-টোয়েন্টি অভিষেকে প্রথম উইকেট ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের বড় তারকা শহীদ আফ্রিদি। ওয়ানডেতে রোহিত শর্মাকে, দুটো ডাবল সেঞ্চুরিসহ ওয়ানডের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক। আর আজ আমলা। অভিষেকে বড় শিকারই যেন মুস্তাফিজের লক্ষ্য। তিনটির মধ্যে কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন? উত্তরটা সহজেই পাওয়া মুশকিল, ‘তিনটি আলাদা আলাদা খেলা। এগিয়ে রাখব তিনটিকেই।’
প্রথম সেশনটি দক্ষিণ আফ্রিকার ছিল। এমনকি দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেও লাগাম ছিল সফরকারীদের হাতেই। কিন্তু হুট ম্যাচের চেহারাটা বদলে গেল। ১ উইকেটে ১৩৬ থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ে গেল ৬ উইকেটে ১৭৩। উইকেটে কি বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে তবে? এ প্রশ্নে আবারও অসাধারণ ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা মুস্তাফিজের, ‘পিচের কন্ডিশন পরিবর্তন হয়নি। প্রথম ৩০ ওভার আমাদের প্রত্যাশা মতো হয়নি। লাঞ্চের পর ২০ কি ২১ ওভারের মতো ওরা খুব একটা রান তুলতে পারেনি। এ চাপটা দেওয়ার পরই উইকেট তুলে নিতে পেরেছি।’
নিউজ সংগ্রহ-প্রথম আলো
Farhad Ahamed ShOhan liked this on Facebook.
Papon Prova liked this on Facebook.
Khalil Joy liked this on Facebook.
Jamal Cox liked this on Facebook.