আ.লীগ নেতাদের ফাঁদে বন্দী রাজনের খুনি!

কিশোর সামিউল আলম রাজনকে হত্যার পরপরই ঢাকায় পালিয়ে যান খুনি আলী হায়দার। ঢাকায় তিনি ফকিরাপুলে আত্মগোপন করেন। ফুটপাতের এক টেলিভিশনে দেখেন তার ভাই কামরুল সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছে। এরপরই তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। নেতারা তাকে গ্রামে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গ্রামে গিয়েই ধরা খান আলী হায়দার।

শুক্রবার সকালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিক ও পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আলী এ কথা জানান।

আলী হায়দার জানান, রাজন খুন হওয়ার পর তিনি ঢাকায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকায় গিয়ে ফকিরাপুলে থাকতেন। একদিন ফুটপাতের একটি দোকনে টিভিতে খবর শুনেন- রাজন হত্যার সাথে জাড়িত তার ভাই কামরুলকে সৌদি আরবে আটক করা হয়েছে। খুনের সাথে জড়িত প্রায় সবাই একে একে গ্রেপ্তার হয়ে যাচ্ছেন।

এরপর তিনি সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগে যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার গিয়াস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের পরামর্শেই তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফিরেন। পরে সেই নেতারাই আজ সকালে আলীর বাড়ি গিয়ে এলাকাবাসীকে নিয়ে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

আলী জানান, তিনি কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছেন। এছাড়া একই ওয়ার্ডের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলী কান্দিগাঁও ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ছিল কি না তা তিনি জানি না।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় রাজনকে খুন করে স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন মেম্বারকে নিয়ে পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কামরুলকে সৌদি আরব পাঠিয়েছিলেন।

এ নিয়ে এলাকাবাসীও গিয়াস মেম্বারের উপর ক্ষুব্ধ। তাই গত মঙ্গলবার রাজনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও ঘাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চে গিয়াস উদ্দিন বক্তব্য দিতে চাইলে উপস্থিত জনতা বাধা দেয়। সমাবেশটি হয়েছিল টুকেরবাজার কুমারপাড়া পয়েন্টে।

জানা গেছে, বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে মঞ্চ থেকে গিয়াস উদ্দিনকে বক্তব্য দেয়ার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু এসময় স্থানীয় জনতা ‘দালাল’ ‘দালাল’ বলে শোরগোল তুলে। জনতা গিয়াসকে সামিউল হত্যাকারীদের পক্ষের লোক বলে স্লোগান দেয়। জনরোষের ভয়ে গিয়াস উদ্দিন মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন। পরে সমাবেশস্থলও ত্যাগ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রাম থেকে আলী হায়দারকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়। রাজন হত্যা মামলার এজহারনামীয় আসামি আলী।

এছাড়াও এ ঘটনার তালিকাভূক্ত আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য দু’জনের মধ্যে মুহিতকে স্থানীয়রা প্রথমদিনেই আটক করে আর চৌকিদার ময়নাকে এলাকাবাসী ও তার মায়ের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় নির্যাতনের ভিডিওচিত্রও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়। লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করে সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুহিত আলমকে। পরে মুহিতকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এ ঘটনায় মুহিত, তার ভাই কামরুল ইসলাম, আলী হায়দার ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া লালকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন রাজনের বাবা।

৪ thoughts on “আ.লীগ নেতাদের ফাঁদে বন্দী রাজনের খুনি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *