ভারতে নদী-সংযোগের বিতর্কিত পরিকল্পনার এবার যুক্ত হচ্ছে মানস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গা!

ভারতে নদী-সংযোগের বিতর্কিত পরিকল্পনার আওতায় এবারে মানস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গাকে যুক্ত করার প্রকল্প নিয়ে এগোনো হবে বলে ঘোষণা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট তিনটি রাজ্য আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের সঙ্গেও তারা শিগগিরই আলোচনা বসবে। যদিও দেশের নদী-বিশেষজ্ঞরা অনেকেই এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান।
এই চারটি নদীই ভাটিতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ঢাকার সঙ্গে কোনো আলোচনা না-করে দিল্লির এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া সমীচীন নয়।
ভারতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে প্রথম যে নদী-সংযোগ প্রকল্পের অবতারণা করা হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে আবার নতুন উদ্যমে সে কাজে হাত দিয়েছে।
তবে এতদিন সেগুলো মোটামুটি পশ্চিম ও মধ্য ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং তার আওতায় ছিল কেন, বেতওয়া, তাপী, নর্মদা বা দমনগঙ্গার মতো নদী – যেগুলো পুরোটাই দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
কিন্তু এ সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সেচমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সানওয়ার লাল জাট ঘোষণা করেছেন, সরকারের পাঁচ নম্বর প্রকল্পটা হবে মানস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গার মধ্যে সংযোগ ঘটানো যার সবগুলোই আন্তর্জাতিক নদী।

দিল্লিতে সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যাম, রিভার্স অ্যান্ড পিপলের কর্ণধার হিমাংশু ঠক্কর বলেন, দেশে নদী-সংযোগ পরিকল্পনার মূল প্রকল্প কিন্তু আসলে এটাই।

‘কারণ, এর প্রধান লক্ষ্য হল ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা, যেখানে জল উদ্বৃত্ত বলে ধরা হয়, সেখান থেকে গঙ্গায় এবং পরে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে জল নিয়ে আসা’ যোগ করেন তিনি।
ঠক্কর আরো বলেন, ‘পরিবেশগত ও অন্য নানা কারণে এর বাস্তবায়নও সম্ভব নয় বলেই আমার ধারণা। তা ছাড়া ব্রহ্মপুত্রে বর্ষাকালে যখন পানি উদ্বৃত্ত থাকে তখন গঙ্গাতেও তো বন্যা, ফলে বাড়তি পানি তখন কীভাবে আপনি গঙ্গায় নিয়ে আসবেন?’
তিস্তার পানির পরিমাণ নিয়ে সমীক্ষার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার যাকে দায়িত্ব দিয়েছিল, সেই নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রও কিন্তু এই মানস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব আশাবাদী হতে পারছেন না।

ড. রুদ্র বলেন, ‘এই প্রকল্পের জন্য পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী খাল কাটতে হবে, যা অন্তত গোটা পঞ্চাশেক নদীকে অতিক্রম করে যাবে। এলাকাটা যাবে ডুয়ার্সের ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এবং বর্ষায় এই নদীগুলো ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়, তার জন্য ভায়াডাক্টও বানাতে হবে। প্রযুক্তিগতভাবে বেশ কঠিন কাজ সেটা, আর পরিবেশের ওপর প্রভাবটাও দেখতে হবে।’

পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এই ধরনের কোনও প্রকল্পে সম্মতি দেবে না বলেই ড. রুদ্রর ধারণা। আসলে এই প্রকল্প নিয়ে দেশের ভেতরে ঐকমত্য তৈরি করা যেমন জরুরি, তেমনি ভুটান ও বাংলাদেশেরও কিন্তু এখানে সম্মতি প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকার নদী-বিশেষজ্ঞ আইন-উন নিশাত বলেন, প্রকল্পের বিস্তারিত না-জানানো হলে বাংলাদেশের পক্ষেও এ বিষয়ে মতামত জানানোটা কঠিন।
তার যুক্তি হল, ‘প্রকল্প হবে শুনেই আঁতকে ওঠার কিছু নেই। কিন্তু প্রকল্পটা এমনভাবে হতে হবে যাতে দুই দেশই উপকৃত হয় এবং সেটা করাও সম্ভব। কিন্তু সবার আগে তো বাংলাদেশকে তো সব কিছু জানিয়ে এগোতে হবে।’

মানস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গাকে যুক্ত করা একেবারে অসম্ভব এ কথাটা সরাসরি অবশ্য কেউই বলছেন না। কিন্তু তার জন্য প্রযুক্তিগত, রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক অনেক বাধাই আগে পেরোতে হবে।বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সে সব হিসেব না কষেই ভারত সরকার এই প্রকল্পে হাত দেয়ার কথা একটু তড়িঘঢ়ি ঘোষণা করে ফেলেছেন।

আতিক/প্রবাস

২ thoughts on “ভারতে নদী-সংযোগের বিতর্কিত পরিকল্পনার এবার যুক্ত হচ্ছে মানস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *