জিয়া পরিবারসহ বিএনপিবিরোধী ও আত্মঘাতী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গুলশানের নিজ কার্যালয়ের সাত কুচক্রীকে চিহ্নিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যে কোন সময় তাদের অব্যাহতি দেয়া হতে পারে। তাদের কর্মকা-ের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। একই সঙ্গে যাদের অব্যাহতি দেয়া হবে সে দায়িত্ব পালনের জন্য বিকল্প উইং প্রস্তুত করেছেন শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া। দলের আদর্শধারণকারী একনিষ্ঠকর্মীদের সমন্বয়ে এ উইং গঠন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রমতে, চেয়ারপারসন ও তার কার্যালয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন ৪৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাদের রয়েছে পদ-পদবিও। নিচ্ছেন বেতন-ভাতাও।
১০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। এদের কেউ পেশায় সাবেক আমলা, নির্দলীয় ব্যক্তি এবং দলীয় রাজনৈতিক কর্মীও। কারো কারো চলাচল চেয়ারপারসনের নিজ বাসা পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদে এবং স্বল্প সময়ে কাছাকাছি অবস্থান করায় এদের প্রতি বেগম খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছেন চক্রের সদস্যরা। দিনে দিনে তারা অনেক গভীরে চলে গেছেন। শুধু দলের বিপর্যয়ই নয়, জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্তের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন তারা। বদৌলতে নিজের পরিবারের সদস্য, নিজের দুর্নীতি ও জেল-জুলুম থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে পেরেছেন। বছরের পর বছর এদের বিরুদ্ধে জিয়া পরিবারের কয়েক সদস্য, দলের নেতাকর্মী এবং গণমাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশিত করে রিপোর্ট প্রকাশ করলেও উদারমনের খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং অভিযোগকারীদের উল্টো ধমক দিয়েছেন।
কিন্তু গত তিনটি আন্দোলন ভেস্তে যাওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রতিপক্ষের কাছে চলে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেন বেগম খালেদা জিয়া। একটি ঘটনার তদন্তভার দিয়েছিলেন- বগুড়ার এক সাবেক এমপিকে। তিনি প্রাপ্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনও করেছেন। তার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে-খালেদা জিয়ার ফুট-ফরমায়েশ খাটা জনৈক ব্যক্তির নামে বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রেজিস্টার অব জয়েন স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)-এর অনুমোদনও রয়েছে। যাতে বিনিয়োগ রয়েছে শতকোটি টাকা। প্রমাণ মিলেছে-এ টাকা ওই বয়-বেয়ারার নয়; খালেদা জিয়া ও তার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার। সূত্রমতে, ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পর তৎকালীন এবং বর্তমান সরকারের সাথে ওই চক্রের সদস্যদের রয়েছে গভীর যোগাযোগ। দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর অব্যাহত নির্যাতনের যুগে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে তারা আত্মঘাতী কর্মকা-ে লিপ্ত। শুধু দলই নয়; জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বইয়ে যাওয়া সব কয়টি ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা মিলেছে।
অগাধ বিশ্বাস করাটাকে দুর্বলতা হিসেবে নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। যে তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নিজের পরিবার ও দলের জন্য বিপদ ডেকে এনেছেন। সেনানিবাসের বাসা হাতছাড়া হয়েছে। বড় ছেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ পরবাসী। ছোট ছেলে মারা গেছে বিদেশেই। ৬ বছরের শিশু থেকে শুরু করে পরিবারের সবার বিরুদ্ধেই মামলা। সূত্রমতে, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের অতিগোপনীয় তথ্য পাচার করেছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে। বিশেষ করে সরকার ও বিশেষ দিকপাড়ায়। বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যও পাচার করা হয়েছে। যে তথ্য পেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়া বাসায় বসে স্যুপ খান….।
গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধদশা এবং পুলিশের পিপার স্প্রেতে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রধান অমিত শাহ তাকে ফোন করেছিলেন। ওই সময় ওপার থেকে অমিত শাহ এবং এপার থেকে খালেদা জিয়া কী কী বলেছিলেন-এ তথ্যও চলে যায় প্রতিপক্ষের কাছে। এছাড়াও নিজ কক্ষে খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কি আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ নেন তার কথোপকথন রেকর্ড করতে তার কক্ষে কলমস্বরূপ ১৬টি টেপ রেকর্ডার রাখা হয়। পরে তল্লাশি চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘ তিন মাসের আন্দোলন চলাকালে নেতারা আত্মগোপনে ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে এমন তথ্যও রয়েছে- আত্মগোপনে থাকা সালাহউদ্দিন, রিজভী আহম্মেদসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের অবস্থান প্রতিপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন ওই চক্রেরই সদস্যরা।
এরপরই তাদের গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় একই বাসায় অবস্থানকালে চেয়ারপারসনের গতিবিধি ও কার কার সাথে আলোচনা করেন-এ তথ্যও পেয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। যার ফলে রাজপথের ত্যাগী-পরীক্ষিতদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হয়। তাদের অনেককে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চলমান কর্মসূচির পর কী কর্মসূচি আসছে সেটাও আগেভাগেই জানানো হতো সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে। কার্যালয় সূত্রমতে, দেশ বা বিদেশে প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় বার্তাটি কম্পোজ করতে হয় কার্যালয়ের একমাত্র কম্পিউটারে। কিন্তু সেই বার্তা প্রত্যাশিত স্থানে যাবার আগেই চলে যায় প্রতিপক্ষের কাছে। পুত্রশোকে কাতর খালেদা জিয়াকে রাজনীতিকভাবে কুপোকাত করতে তার কার্যালয়ে যেতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে ওই কার্যালয়ের মূল গেট পর্যন্ত যাবেন তার আগাম নজির ছিল। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর পা যতদূর পর্যন্ত রাখা হবে সেখান পর্যন্ত যাবে রাষ্ট্রনিযুক্ত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। ওইদিন এসএসএফ গিয়েছিল গেট পর্যন্তই।
এ স্পর্শকাতর রিপোর্টটি খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছেনি। ফলে দেশবাসীর কাছে সস্তা সহানুভূতি অর্জন করেছে প্রতিপক্ষ দলের প্রধান। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন- ২৮ ডিসেম্বরেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিনি অবস্থান নেবেন। আলোচনা হয়েছিল মাত্র তিন-চার জনের উপস্থিতিতে। কিন্তু তার আগেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে তথ্য চলে যায়। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকার সময় বিশ্বের ১৬টি দেশের প্রতিনিধির একটি টিম তার সাথে দেখা করেছেন। এর আগে-পরেও সাক্ষাৎ করেছেন। চেয়ারপারসনের প্রতিনিধি হয়ে তার মতামত বহন করে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন কয়েকজন। তাতে কী আলোচনা হয়েছে- সে বার্তা খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছানোর আগেই পাচার করা হয়েছে সরকারদলীয়দের কাছে। মুখ না খুলার কারণে গুলিতে আহত হতে হয়েছে ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য রিয়াজ রহমানকে। অপর দুজন আটক বা গ্রেফতার হলেও আছেন নির্ঝঞ্জাট।
রাজনীতি না করার মুচলেকা দিলেও প্রতিপক্ষের প্রয়োজনেই লেগে আছেন চেয়ারপারসনের সাথে। কারো ছেলে জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত, কারো ভাই সন্ত্রাসের সাথে সম্পৃক্ত, কারো বিরুদ্ধে আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলার মদদের অভিযোগ। সূত্র বলছেÑ ওইসব অপকর্ম থেকে নিজে বাঁচতে ও স্বজনদের বাঁচাতে সরকারের এসাইনমেন্ট পালন করছেন চক্রের সদস্যরা। এসবই আগে অস্পষ্টভাবে আমলে নিলেও অবস্থা প্রেক্ষিতে এবার কঠিন হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ওয়াকিবহাল আছেন সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। চক্রের প্রতিটি সদস্যের চলন-বচনকে সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। সময় বুঝে তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে। একই সাথে দলের পরীক্ষিত ও আদর্শিক লোকজন দিয়ে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের উইংটি পুনর্গঠন করা হবে। নতুন উইংয়ের সাথে সম্পৃক্ত রাখা হচ্ছেÑ এমনই এজন ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন এ সব তথ্য।
আতিক/প্রবাস
Ali Akbor Rajon liked this on Facebook.
Md Rushu liked this on Facebook.
Alam Zaman liked this on Facebook.
Singer Boy Tanvir liked this on Facebook.
Taj Sheikh liked this on Facebook.
Nurul Absar Shohel liked this on Facebook.
Md Ripon liked this on Facebook.