আসামি ধরার নামে বাড়িতে হানা দিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার সেই এসআই কাফী’র বিরুদ্ধে। তবে ওই গৃহবধূর চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে এসআই কাফীকে হতেনাতে ধরে পুলিশে তুলে দেয়।
শনিবার দুপুরে নন্দলালপুর ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
এর আগে তারা বিরুদ্ধে নৈশকোচের যাত্রীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠলে জনমোনে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, শনিবার দুপুরে কুমারখালী থানার এসআই কাফী পুলিশের ইউনিফর্ম ছাড়া নন্দলালপুর গ্রামের মৃত গফুরের পুত্র আব্দূল মতিনের বাড়িতে যান ওয়ারেন্টের আসামি মতিনকে গ্রেফতার করতে। এসময় তার পরিবারের সদস্যরা এসআই কাফীকে অবহিত করেন মতিন বিদেশে অবস্থান করছে। এর এক পর্যায়ে জিজ্ঞাবাদের নামে ঘরে ঢুকে মতিনের স্ত্রীকে একা পেয়ে এসআই কাফী দরজা লাগিয়ে দেন। এসময় ঐ মহিলা চিৎকার করলে স্থানীয়রা জড়ো হয়। পরে স্থানীয়রা কুমারখালী থানা পুলিশকে খবর দেয়। কুমারখালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আরিফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের নিকট মাফ চেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে পুলিশের ভয়ে ভুক্তভোগীরা কোন কথা বলতে না চাইলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, এসআই প্রবাসীর স্ত্রীর শ্লীলতাহানী করার চেষ্টা করে এবং চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলেন।
কুমারখালী থানার এসআই আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে আমি কাফীকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। ঘটনা তেমন কিছু না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই কাফী’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি ঐ বাসায় গেলে তারা আমাকে বারান্দায় বসতে দেয়। এসময় আরো দুইজন মহিলা বারান্দায় বসে ছিল। মতিনের বউ ঘরের দরজায় দাড়িয়ে ছিল। আমি তাকে তার স্বামীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য উঠে দাড়ালে সে ঘরের ভিতর ডেকে নেয়। পরে দরজা আটকিয়ে চিৎকার করে নাটক করে। তিনি আরো বলেন, আমি অন্যায় কিছু করিনি। স্থানীয় কিছু মানুষ আমায় নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
কাফী অভিযোগ করেন, স্থানীয় কয়েকজন যুবক এসময় তাকে লাঞ্চিত করে এবং স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাকে অপমান করেছে। তাদের দেখে নেয়ারও হুমকি দেয় এই পুলিশ সদস্য।
কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিবুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, কাফী মানসিক অসুস্থ। আজ তার কোন ডিউটি ছিল না। সে নিজের মত করে বের হয়ে চলে গেছে। প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে উঠে দরজা বন্ধ করেছিল তবে ঐ নারীকে অসম্মান করার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। কাফীর মা তাকে নিতে এসেছে, তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে।
পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানান, কাফীতো মেন্টাল পেশেন্ট। ওকে নিয়ে আমরা বিব্রত।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার গ্রেফতার ভয় দেখিয়ে নৈশকোচের এক যাত্রীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠে কুমারখালী থানার এসআই কাফী’র বিরুদ্ধে।
উপজেলার শিলাইদহ বেলগাছি গ্রামের আমির ব্যাপারীর ছেলে সিরামিক ব্যবসায়ী উজ্জল (২৫) এ বিষয়ে থানায় ডায়েরী দিতে ব্যর্থ হয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম’র সাথে দেখা করে অভিযোগ করেছিল।
উজ্জল এর ভাষ্যমতে, গত সোমবার ঢাকা থেকে সৌহার্দ পরিবহনে রাত ১২টার সময় কুমারখলী স্ট্যান্ডে নেমে সেখানে তার জন্য অপেক্ষারত ছোট ভাই আজিজুর (২৩)র মটর বাইকযোগে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাদের বাইকটি উপজেলার আলাউদ্দিন নগর মোড় নামকস্থানে পৌঁছুলে সেখানে পেট্রল ডিউটিরত কুমারখালী থানার এসআই কাফী সংগীয় ফোর্সসহ তল্লাশির নামে পথরোধ করেন। এসময় পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী অভিযোগ তুলে থানায় নেয়ার উদ্দেশ্যে কিছু দুর গিয়ে বোর্ড অফিসের নিকট অন্ধকারে একটি পিকআপ থামিয়ে ব্যাগটি ছিনিয়ে নেন । ঐ পুলিশ সদস্য দুই ভাইকে বেদম মারধর শুরু করে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে শেষ পর্যন্ত ঐ এসআই কাফী’কে নিজের কাছে থাকা ব্যবসায়ের টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে দেয়। টাকাটা হাতে নিয়েই এসআই কাফী অস্ত্র বুকে ধরে বলেন সোজা বাড়ি চলে যাবি; এসব কথা কাউকে বলবি না, তাহলে ক্রসফায়ার দিয়ে মারা হবে তোকে।
এনিয়ে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে পুলিশ প্রশাসন ঘোষণা দেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার উজ্জলের নিকট ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে ঘটনার মিমাংশা করে নেয় পুলিশ।
এ ব্যাপারে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিবুল ইসলাম বলেন, যেহেতু কাফী মানসিক রোগী সেহেতু টাকা ফেরত দিয়ে মিমাংশা করে নেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানান, কুমারখালী থানা পুলিশকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সে তদন্ত শেষ করে ব্যবস্থা নেবে।
আতিক/প্রবাস
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
MD Ziaul Hasan liked this on Facebook.
Singer Boy Tanvir liked this on Facebook.