চীন-পাকিস্তানসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে মোদির হুঁশিয়ারি!

ঢাকা: ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে প্রথম দিনেই চীন-পাকিস্তান ও পশ্চিমা বিশ্বকে জোড়া আক্রমণ শানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক দিকে রাশিয়া ও ইরানসহ বিভিন্ন দেশের উপর একতরফা আর্থিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরব হয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে আক্রমণ, অন্যদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার ও বৈষম্যহীনভাবে সন্ত্রাস মোকাবিলার কথা বলে চীন ও পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্দিনে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) মধ্যে সবক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বার্তাও দিলেন নরেন্দ্র মোদি।
এ দিন ব্রিকসের বিজনেস কাউন্সিলের বৈঠকে মোদীর বক্তব্য, ‘একতরফা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতিকে আঘাত করে। আর তাই ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। তবে, উন্নত দেশগুলির সঙ্গেও তাদের হাত মিলিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।’ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মোদী সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর লক্ষ্য যে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষত আমেরিকা, তা বলাই বাহুল্য। ২০১৪-এর মার্চে ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর পরই রাশিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা।
ইউক্রেনের অশান্তি সেই নিষেধাজ্ঞাকে আরও ইন্ধন জোগায়। মার্কিন মুলুকের এই একতরফা আর্থিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী সুরই এ দিন স্পষ্ট ছিল মোদীর গলায়। বৈঠকে শ্রোতা হিসেবে তখন উপস্থিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং-সহ অন্যরা।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর বার্তাও দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূলভিত্তিই শান্তি। সন্ত্রাসবাদের মতো সাম্প্রতিক সমস্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের সকলের কর্তব্য। গোষ্ঠী, দেশ, কারা সন্ত্রাসবাদে ইন্ধন যোগাচ্ছে, কাদের সাহায্য করা হচ্ছে- এই সব ভুলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে লড়াই চালাতে হবে। ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির ক্ষেত্রে তো এটা করতেই হবে, জতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও অন্য ক্ষেত্রেও এ কথা মাথায় রাখতে হবে। সকলেরই আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে চলা উচিত।’
ক’দিন আগেই ২৬/১১-এর মুম্বাই হানার মূলচক্রী জাকিউর রহমান লাখভিকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব এনেছিল ভারত। তাদের দাবি ছিল, পাকিস্তান জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করেছে। কিন্তু নয়াদিল্লি লাখভির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি বলে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে সেই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পর্ষদের স্থায়ী সদস্য চীন।
এদিন মোদীর সন্ত্রাসবাদের বার্তাকে চীনের প্রতি প্রচ্ছন্ন কটাক্ষ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রসঙ্গত, বুধবারই জি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে ভারতের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন মোদী। এ দিন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অবশ্য জানান, লাখভির ব্যাপারে যে তথ্য তাঁরা পেয়েছিলেন, তার ভিত্তিতেই যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল তারা।
অন্যদিকে, ভারত অনেক দিন ধরেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই প্রসঙ্গকে আরও একবার উস্কে দিয়ে মোদীর বক্তব্য, ‘জাতিসংঘকে একবিংশ শতকের উপযোগী করে তুলতে হলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সব ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। আর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার করেই এই পরিবর্তন সম্ভব।’ ব্রিকস সম্মেলনের মাঝেই শুক্রবার পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদী। দু’দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই বছরখানেক বাদে ফের মুখোমুখি হবেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে বলে আশাবাদী দু’পক্ষই।

One thought on “চীন-পাকিস্তানসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে মোদির হুঁশিয়ারি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.