সেই ছোটবেলা থেকে বলিউড পাড়ার নিয়মিত মুখ শহিদ কাপুর। টিনেজ অভিনেতার মোড়ক ভেঙে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠেছেন ‘হায়দার’। দীর্ঘপথের এই পর্যায়ে গতকাল তাঁর ব্যাচেলর জীবনের অবসান ঘটল। স্বাভাবিকভাবেই, মুম্বাই থেকে শুরু করে গোটা ভারতের ‘টক অব দ্য টাউন’ হয়ে উঠেছিল শহিদের বিয়ে-কাহিনী। এনডিটিভির তালাশে জানা গেল শহিদের বিয়ের আদ্যোপান্ত।
বলিউডের এই ‘এলিজিবল ব্যাচেলর’-এর বিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জাবি কায়দায় সম্পন্ন হয়েছে। তবে তাতে জাঁকজমকের জেল্লা কম ছিল। বিয়ের অতিথিও ছিলেন একান্তই পরিবারের আত্মীয়স্বজন। গুরগাঁওয়ের ওবেরয় হোটেলে বি টাউনের কোনো অস্তিত্বই মেলেনি বলতে গেলে। অবশ্য, বলিউডের কলিগদের জন্য আলাদা রিসেপশন অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করে রেখেছেন শহিদ। সেটির আয়োজন দিনকয়েক পরে।
বিয়ের পূর্ণাঙ্গ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে আর্য সমাজের রীতি অনুসারে। রাজোক্রি এলাকার ওয়েস্ট গ্রিন ফার্ম হাউসে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে পুরো বিয়ের কাজ। গণমাধ্যমের নাক গলানোর সুযোগ মেলেনি এখানে। তবে, ঘটনার আদ্যোপান্ত এনডিটিভি উদ্ধার করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘একজনের’ কাছ থেকে।
ওই ‘বিশেষ’ ব্যক্তিটি জানান, ‘বেলা ১১টায় বিয়ের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়। এটি সম্পন্ন হতে সময় নেয় পুরো দেড় ঘণ্টা। দুই পরিবারের ইচ্ছা এবং সম্মতি অনুযায়ী, এখানে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা, সব মিলিয়ে ৪০ জনের মতো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার পর সংক্ষিপ্ত ফটোসেশন হয়েছে।’
এ মাসের ১২ তারিখে প্যালাডিয়াম মুম্বাইয়ের প্যালাডিয়াম হোটেলে শহিদের ইন্ডাস্ট্রি কলিগদের জন্য আলাদা এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে।
শহিদ কাপুরের ঐতিহ্যবাহী ধাঁচের বিয়ের পোশাকটির ডিজাইন করেছেন কুনাল রাওয়াল। কনে মিরা রাজপুতের পোশাকের ডিজাইন করেছেন অনামিকা খান্না। বিয়ের খানাপিনায় আমিষের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, কারণ দুই পরিবারই প্রথাগতভাবে ‘রাধাস্বামী সৎসঙ্গ’-এর অনুসারী। আমিষজাতীয় খাদ্য তারা এড়িয়ে চলেন পারিবারিকভাবেই!
শহিদের ঘনিষ্ঠ আরেক সূত্র জানিয়েছেন, ফার্ম হাউসের রাস্তায় ছিল কড়া নিরাপত্তা। উৎসুক মানুষজন বা সাংবাদিকরা যাতে আসতে না পারেন, সেজন্য ছিল বাড়তি নজর। ফার্ম হাউসের দেয়াল রীতিমতো ১৬ ফুট উঁচু, কাজেই কারো সাধ্য ছিল না দেয়াল টপকে ঢোকার, নিরাপত্তার কড়া নজর সেদিকেও ছিল।
শহিদ-মিরার বিয়ের বিশেষ ‘সংগীত’ অনুষ্ঠানে ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। এই অনুষ্ঠানে নতুন দম্পতিকে একসঙ্গে নাচের পারফর্মও করতে দেখা যায়। বেনারসের ট্র্যাডিশনাল ধাঁচের একটি পোশাক পরেই নাচানাচি করেছেন মিরা, এই পোশাকের ডিজাইন করেছেন অনিতা ডোংরে।
মিরার হাতে মেহেদি দিয়েছেন রেশমা রুহি। তিনি বলেন, ‘আমাদের মোট ছয়জনকে বলা হয়েছিল এই কাজের জন্য। আমাকে জানিয়েছিল রাজপুত পরিবারেরই একজন, সে আবার আমার বন্ধু। মিরার ইচ্ছামতো পুরো হাতে নকশা করা হয়েছে, তার বাইরে সামান্য। এ ছাড়া তার পায়েও আলাদা ফুলেল নকশা করা হয়েছে।’ এ ছাড়া শহিদের মা নীলিমা আজিম এবং শহিদের দুই বন্ধুও মেহেদির নকশা আঁকিয়ে নিয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে। এ কাজের জন্য মোট এক লাখ রুপি পেয়েছেন বলে জানান রেশমা।
গুরগাঁওয়ের বিখ্যাত স্মিটেন বেকারির দায়িত্ব ছিল অতিথিদের জন্য বিশেষ স্বাদের চকলেট বার তৈরি করার। স্মিটেন বেকারিও এমন সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি। ইনস্টাগ্রামে তারা সেই কাস্টমাইজড চকলেট বারের ছবিও দিয়েছে। দেবেই বা না কেন?
প্রতিটি বারের মোড়কেই যে লেখা ছিল, ‘স্মিটেন বাই লাভ, বিটেন বাই ম্যারেজ বাগ’। তার নিচে নকশা করে লেখা শহিদ ও মিরার নাম, চকলেট হিট না হয়ে যাবে কোথায়!