ঢাকা: বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাল্টি লেভেল কোম্পানি (এমএলএম) ব্যবসার নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই। হাইকোর্টে রিট করে যেসব কোম্পানি প্রতারণার ফাঁদ পেতে নিরীহ মানুষকে ঠকাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সোমবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) তে ২৭টি এমএলএম কোম্পানি আবেদন করে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের শুনানি গ্রহণ করা হয়। এসব কোম্পানির পণ্যে বা সেবা প্রকৃত মূল্যে বিনিময় না হওয়া পণ্যের সেবার উপস্থিতি না থাকা এবং মোড়কের মান ঠিক না থাকায় এমএলএম কোম্পানি আইনের ৬ ধারায় লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এরপর এসব কোম্পানি হাইকোর্টে রিট করে ব্যবসা পরিচালনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স দেয়া হলো না। লাইসেন্স পেলো না। এরপর হাইকোর্টে রিট করে ব্যবসা করছে। মাননীয় স্পিকার দেখুন কিভাবে সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হয়। আমাদের মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লাইসেন্স দেয়নি।’
এসময় তিনি প্রধান বিচারপতির হাইকোর্ট সম্পর্কে মন্তব্য করা নিয়ে সতর্কতার বিষয় অবতারণা করে বলেন, ‘আমি হাইকোর্ট সম্পার্কে কোনো মন্তব্য করছি না। কিন্তু যেখানে মন্ত্রণালয় আপিল খারিজ করে দিল, সেখানে হাইকোর্টে রিট করে ব্যবসা করছে। এর আগে ডেসটিনিসহ বেশকিছু কোম্পানি সাধারণ মানুষকে পথের ভিখারী করেছে। এখন হাইকোর্টের রিটের সুবিধা নিয়ে নিরহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এখনো অতি সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের রিট খারিজ করার জন্য চেষ্টা করছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য সব বিভাগীয় কমিশনারের বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। কোথায় এমএলএম কোম্পানির ব্যবসার নামে কেউ প্রতরণামূলক কার্যক্রম করলে আইন মোতাবেক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় যেন কেউ এই পথে পা না দেয় সেজন্য দেশবাসীকে সর্তক করছি।’
বাণিজ্যমন্ত্রী লাইসেন্স বাতিলকৃত কোম্পানিগুলোর নাম তুলে ধরেন সংসদে। এরমধ্যে রয়েছে লাইসেন্সের জন্য আবেদনকৃত কোম্পানির মধ্যে এবি নিউট্রিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, অ্যাডভান্স বাংলা লিমিটেড, দেশান (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড, ডি ক্লাসিক লাইফ (বিডি) প্রাইভেট লিমিটেড, ড্রিম টুগেদার প্রাইভেট লিমিটেড, এক্সসিলেন্ট ফিউচার মার্কেটিং লিমিটেড, ফরইভার লিভিং প্রডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, পিনাসেল সোর্সিং লিমিটেড, রিচ বাংলাদেশ সিস্টেমস লিমিটেড, এসএমএন গ্লোবাল লিমিটেড, সানুস লাইফ (বিডি) প্রাইভেট লিমিটেড, থানসি (বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেড, লাইফওয়ে (বিডি) প্রাইভেট লিমিটেড, লাক্সার গ্লোবাল এন লিমিটেড, ম্যাকনম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মিশন-১০ লিমিটেড, এমওয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ভিশন ইন্ডাস্ট্রিজ (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লিমিটেড ও এমএক্সএন মডার্ন হারবাল ফুড লিমিটেড ।
মন্ত্রী বলেন, ‘আরজেএসসি অফিস থেকে আবেদনকৃত কোম্পানিগুলোর ওপর সরেজমিনে পরিদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাত্র চরটি কোম্পানিকে দেশে এমএলএম ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়েছিল। অনুমোদিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এমএক্সএন মডার্ন হারবাল ফুড লিমিটেড। লাইসেন্স প্রাপ্ত কোম্পানির মধ্যে এমএসএম মর্ডান হার্বাল ফুড লিমিটেড, রিস বিজনেস সিস্টেম লিমিটেড, স্বাধীন অন লাইন পাবলিক লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড মিশন ২১ লিমিটেড, জার ইলেক্ট্রনিক্স পালস লিমিটেড। পরবর্তীতে লাইসেন্স প্রাপ্ত সংগঠনের কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০১৫ সালের ৪ মার্চ তাদের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়।’