হাসিনা হত্যা-চক্রান্ত: সৌদির গোপন নথি ফাঁস করলো উইকিলিকস

ঢাকা: ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যূত ও হত্যা করার লক্ষ্যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠিত হওয়ার প্রকল্প দাঁড় করানো হয়েছিল যা পরবর্তীতে ব্যর্থ হয়ে যায়। সৌদি আরব মনে করে শেখ মুজিব-হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম এ অভ্যুত্থান-চক্রান্তের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন; এমনটাই প্রকাশ করেছে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে তথ্য ফাঁসে আলোচিত প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস।

সম্প্রতি, উইকিলিকস সৌদি আরব-সংক্রান্ত প্রায় পাঁচ লাখ গোপন নথি প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে, ১৯ জুন থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহে প্রায় ৬১ হাজার নথি প্রকাশ করে, যেগুলো ইতোমধ্যেই সৌদি রাজপরিবারকে বিব্রত করছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের লন্ডনস্থ ইকুয়েডর দূতাবাসে অন্তরীণ থাকার তৃতীয় বছর উপলক্ষে এ ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ঐ সমস্ত গোপন নথিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছিল, যার মধ্যে এটি একটি।

বাংলাদেশস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে (লিখিত আরবী সন- ২৪ রবিউল আউয়াল, ১৪৩৩ হিজরি) দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরে প্রেরিত গোপন নথিতে আরবি ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১ সালে ব্যর্থ করে দেয়া এ সামরিক অভ্যুত্থানের চক্রান্ত প্রকল্পিত হয়েছিল হংকং. থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় বসে; ঐ প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ সদস্য। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপ্রধান জিল্লুর রহমান এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা শেখ হাসিনার অনুগত তাদের হত্যা করা; তবে এ চক্রান্তের ব্যাপকতা ছিল ‘অত্যন্ত সীমিত’।

আরও বলা হয়েছে, পরবর্তীতে আওয়ামী লিগ বিষয়টির সঙ্গে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও জামায়াতে ইসলামের সংশ্লিষ্টতার কথা ঘোষণা করে দরের সপক্ষ-প্রচারণায় ইস্যুটিকে ব্যবহার করেছে যা ‘যুক্তিযুক্ত নয়।’ ইতোপেূর্বে ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১১ সালে ব্যর্থ করে দেয়া ঐ অভ্যুত্থানচেষ্টার কথা প্রকাশ করে বিরল নজির স্থাপন করে, কেননা এরআগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কখনও এমন নথি প্রকাশিত হয়নি।

সেনাবাহিনী-প্রকাশিত ঐ নথির কোথাও লে. কর্নেল ডালিমের উল্লেখ ছিল না, যেটি সৌদি আরবের নথিতে রয়েছে এবং নথিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে তিন দেশে বসে একইসময়ে সংঘটিত ঐ অভ্যুত্থানপ্রকল্পে সমন্বয় সাধন করছিলেন ডালিম; আরও বলা আছে, ডালিম বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন।

এছাড়া, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আজমের ছেলে লোকমান আল আজমিকে ঐ অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত দেখানোর চেষ্টা করেছে সরকার- এমন মত প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রদূত গোপন নথিতে, এছাড়ারও মনে করে থাকেন অভ্যুত্থানে জড়িতদের কট্টর ইসলামপন্থী বলেও প্রচার করতে পারে সরকার এবং এই ‘অপপ্রচারের মাধ্যমে’ ইসলামি কট্টরপন্থী সেনাসদস্যদের অপসারণের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে পারে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এই অভ্যুত্থানপ্রকল্পের নিন্দা জানিয়েছে এবং ভারত তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করেছে।

গোপন নথির ভাষ্য, এ সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা যুক্তিযুক্ত নয় কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা যায়নি বিরোধী দল বিশেষত খালেদা জিয়া কখনও সরকারপতনের জন্যে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে, উপরন্তু যখন জানাই আছে সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদে আসীনরা আওয়ামীপন্থী। নথিটি তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহর নজরে আনা হয়েছিল এবং এর অনুলিপি দেয়া হয়েছিল সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানকেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *