রোকেয়া হলে পঁচা-বাসি খাবার!গভীর রাতে ছাত্রলীগ পুরুষ ক্যাডার নিয়ে প্রক্টরের হলে প্রবেশ ও পলায়ন

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে পঁচা-বাসি খাবার পরিবেশনের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা বুধবার দিবাগত রাতে বিক্ষোভ করেছেন।
এ সময় গভীর রাতে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে পুরুষ ক্যাডাররা নিয়ে হলটিতে প্রবেশ করলে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা।
এক পর্যায়ের বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে তারা হল ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।

এ দিকে সার্বিক ঘটনায় হলটির প্রভোস্ট ড. নাজমা শাহীন এবং দুই আবাসিক শিক্ষক রওশন আক্তার এবং উসমিতা আফরোজের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাত্রীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে সেহরির সময় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রতিবছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আবাসিক হলগুলোতে দুপুর বেলো বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। এবার রোজার মাস হওয়ায় সন্ধ্যায় ইফতার ও রাতের বিশেষ খাবারের আয়োজন করার কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কিন্তু গতকাল বুধবার সব হলে ইফতার পরিবেশন করলেও পাঁচটি ছাত্রী হল ছাড়া আর কোথাও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ দিকে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা ইফতারের সময় টোকেন নিয়ে খাবার আনতে গেলে তাদের শুধু ইফতারের প্যাকেট দেয়া হয়। রাতের খাবারের ব্যাপারে জানতে চাইলে হল ক্যান্টিন থেকে কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি। এরমধ্যে ছাত্রীরা দেখতে পায়, ইফতারের প্যাকেটে অত্যন্ত নিম্নমানের পঁচা- বাসি খাবার দেয়া হয়েছ। এ অবস্থায় ছাত্রীরা হল অফিসে গিয়ে খাবারের প্যাকেট ফেরত দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হলের আবাসিক শিক্ষিকা রওশন আরা আক্তার এবং উসমিতা আফরোজ ছাত্রীদের গালিগালাজ করেন এবং হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন।

এ দুজন শিক্ষিক দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর হল প্রভোস্ট নাজমা শাহীন অভিযোগ এদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেননি। কিন্তু এবার অনেক ছাত্রী ফুঁসে উঠেন। শিক্ষার্থীরা জানায়, বেশকিছু ছাত্রীকে একেরপর এক এভাবে গালিগালাজ করলে তারা স্বাভাবিকভাবে এর প্রতিবাদ করেন। তখন সবাইকে হল ছেড়ে দিতে বললে সাধারণ ছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এক পর্যায়ে ছাত্রীরা প্রভোস্ট কার্যালয়ে অবস্থানরত দুই আবাসিক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। খবর পেয়ে প্রভোস্ট নাজমা শাহীন হলে আসলে তাকেও অবরুদ্ধ করেনে ছাত্রীরা। ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত ব্যাপক উত্তেজনা ও নানা নাটকীয়তার মধ্যে চলা এই বিক্ষোভের মধ্যে ব্যাপক ভীতির সৃষ্টি হয় রাত ১২টার দিকে। ওই সময় হলের পরিস্থিতি শান্ত করতে হলে প্রবেশ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী। এ সময় তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন পুরুষ ছাত্র হলটিতে অনুপ্রবেশ করে।

এ ঘটনায় ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ভীতি ছড়িয়ে পড়লেও এক পর্যায়ে তারা ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ সময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ছাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে হল ছেড়ে পালিয়ে যায়। হল সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের এই বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা মোতাহের হোসেন প্রিন্স আরো কয়েক জনকে নিয়ে হলের ভেতরে ঢুকে পড়ে। অভিযোগের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা মোতাহের হোসেন প্রিন্স বলেন, আমি হলের পাশেই ছিলাম। হলের ভেতরে গোণ্ডগোল হচ্ছে শুনে কৌতূহলবশত হলের গেইটে প্রবেশ করি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে আসি। পরে রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক হলে গিয়ে ছাত্রীদের কাছে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চান। তিনি হল প্রভোস্ট ও দুই আবাসিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। ভিসির ঘোষণায় ছাত্রীরা বিক্ষোভ বন্ধ করে যার যার কক্ষে গিয়ে পানি-খেজুর-চিড়া ইত্যাদি দিয়ে সেহরি খান। এ সময় হল প্রভোস্ট দ্রুত সময়ে পদত্যাগের করবেন জানিয়ে ভিসির সাথে হল ত্যাগ করেন।সুত্রঃ আমার দেশ

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.