রমজান মাস পবিত্র মাস কারণ এই মাসে পবিত্র কোরআন শরীফ নাজেল হয়। তবে পবিত্র কোরআন শরীফ নাজেল হয় আমাদের পথ নির্দেশক হিসাবে। আমরা কিন্তু শুধু এক মাস পথ চলিনা। আমরা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পথ চলি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কিভাবে আমরা জীবন যাপন করবো সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে কোরআন শরীফে। আমরা তো শুধু এক মাস বাঁচিনা। যতদিন মৃত্যু না হয় ততদিন আমরা বেঁচে থাকি । ততদিন আমরা পথ চলি। তাই শুধু রমজান মাস নয় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যতটা সময় আমরা পথ চলি যতটা সময় জীবন আছে সেই সবটুকু সময়ই পবিত্র সময়।
আল্লাহ্ ও রাসুলের নির্দেশ মৌসুমী কিছু নয়। আল্লাহ্ ও রাসুলের নির্দেশ শুধুমাত্র এক মাসের জন্য নয় এই নির্দেশ ইহকাল ও পরকালের জন্য। অনেকেই রমজান মাসেই সব ভাল ভাল কাজ করে ফেলে আর বাকী এগারো মাস ভাল কাজ করার কথা খেয়াল থাকেনা। রমজান মাসে সংযত থাকে বাকী এগারো মাসে অসংযত। রমজান মাসে সব দান খয়রাতের কথা মনে আসে আর বাকী এগারো মাসে দুর্নীতি, চুরি, ঘুষের লেনদেন চলে। রমজান মাসে ক্ষুধার্থ মানুষের দিকে দুইটা দানা ছুঁড়ে মারে আর বাকি এগারো মাস বসে এইসব মানুষদের মুখ থেকে দানা কেড়ে নিয়ে নিজেদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বৃদ্ধি করে। এক মাসেই সবাই পবিত্র হয়ে যায় বাকী এগারো মাস অপবিত্র থাকে।
মানুষের দুই কাঁধে দুইজন মুহুরি আছেন যারা বসে বসে ডায়েরী লেখেন। এই দুইজন মুহুরি বাকী এগারো মাস ভ্যাকেশনে যান না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উনাদের কোন ভ্যাকেশন নাই। আল্লাহ্ সব কিছুই জানেন এবং দ্যাখেন। আল্লাহ্ সর্বত্র আছেন। আল্লাহ্ সাথেই আছেন। আল্লাহ্ আমাদের অন্তরে বাস করেন। আপনি মানুষের ক্ষতি করে বেড়ান আর মসজিদে যেয়ে নামায পড়েন আল্লাহ্ জানেন আপনি একজন অপরাধী। সমাজের সবাই জানে আপনি একজন ভাল লোক কারণ আপনি অপরাধ করেন আপনার পরিবারের সাথে। আপনার পরিবার যেহেতু আপনার উপার্জনের উপরে নির্ভরশীল তাই তারা প্রতিবাদ করেনা। তাঁরা সবাই আপনাকে সহ্য করে, বারো মাস আপনার জুলুম সহ্য করে, আল্লাহ্ জানেন আপনি একজন জালিম যদিও বাইরের মানুষের চোখে আপনি একজন সমাজসেবক ফেরেস্তা। কিছু দিন পরে আপনার হার্ট এটাক হয় আপনি পঙ্গু হয়ে যান এবং আপনার পরিবারের মানুষেরা আপনাকে সেবা করে। তখন আপনি সেই পরিবারের উপরে নির্ভরশীল হয়ে যান যে পরিবারের উপরে আপনি জুলুম করতেন। আপনি যতদিন যন্ত্রনা ভোগ করেন সেই যন্ত্রনা আপনি ভোগ করেন আপনার জুলুমের শাস্তি হিসাবে। কোন আদালত এই শাস্তি আপনাকে দেয় নাই এই শাস্তি আপনি আল্লাহ্র কাছ থেকে নগদ পেয়েছেন। বাইরের সবাই মনে করে আহা! এত ভাল মানুষ এত কস্ট পাচ্ছে। আপনি জানেন আপনি জুলুমকারী। আপনি বাইরে ভাল মানুষ সেজে থাকেন আর যাকে নরম্ পান তার উপরে জুলুম করেন। আল্লাহ্ দুর্বলের পক্ষে আছেন। যে দুর্বল নিরপরাধ। আপনার পরিবার আপনাকে সেবা করেন কারণ আপনি তাদের ভরণপোষন করেছিলেন। আপনার পরিবার আপনার সেবা করেন কারণ আপনার জুলুম তারা মাফ করে দিয়েছে্ন। তারা মাফ করে দিয়েছেন কারণ আল্লাহ্ তাদের উপরে জুলুম সহ্য করার জন্য রহমত বর্ষন করেছেন। আল্লাহ্ রহমতের কারনেই তারা অসীম সহ্য ক্ষমতা পেয়েছে। কস্ট সহিষ্ণুতা আল্লাহ্র রহমত।
রমজান মাসে সমাজের ভিক্ষুকেরা মোটামুটি খাবার খেতে পায় আর বাকী এগারো মাসে খাবার সংকটের কারণে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা বেশী মুনাফা করে। ঈদের সময় আরো মুনাফা করে। ঈদ অর্থ খুশী। এই খুশীতে যাদের সামর্থ আছে তারা তো মহা খুশী থাকে। যার সামর্থ নাই সে এই একদিনের খুশী উৎযাপন করতে যেয়ে বাকি ৩৬৪ দিন দুঃখের ভেতরে কাটিয়ে দেয়।
এক মাস শুধু পবিত্র নয় বারো মাসই পবিত্র। বারো মাসই সত্য বলুন। বারো মাসই অন্যের ক্ষতি করবেন না। বারো মাসই ঘুষ দেবেন না। বারো মাসই ঘুষ নেবেন না। বারো মাসই এমন কিছু করবেন না যাতে অন্যরা আর্থিক, মানসিক, শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বারো মাস এমন কিছু করুন যাতে মানুষেরা কাজ করতে পারে এবং সন্মানের সাথে খাদ্য কিনে খেতে পারে। নিজের উপার্জনে খাদ্য আহরণের সুযোগ সৃষ্টি করাও এবাদত। বারো মাসই এমন কিছু করুন যাতে এক মাসে কারুকে দয়া ভিক্ষা বা করুনা না দেখাতে হয়।
বারো মাসই ভাল চিন্তা করুন। বারো মাসই আল্লাহ্ ও রাসুলের নির্দেশিত পথে চলুন। বারো মাসই নিজে শান্তিতে থাকুন এবং অন্যকে শান্তিতে থাকতে সাহায্য করুন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবাই সুখ ও শান্তিতে থাকুন।