সৌদিতে নারীশ্রমিক: ২০ হাজার ২৪৭!

ঢাকা: প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৌদি আরবে নারীশ্রমিক পাঠাতে পারছে না সরকার। রমজানের আগে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে কমপক্ষে ২০ হাজার নারীশ্রমিক পাঠানোর কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত সেখানে পাঠানো গেছে মাত্র ২৪৭ জন।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত এক মাসে বিনামূল্যে সৌদি আরবে যাওয়া নারীশ্রমিকের এই সংখ্যা দেখে হতাশ অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, সেখানে যেতে পাসপোর্ট করা ছাড়া বাকি সব খরচ দেবে সৌদি নিয়োগ কর্তা। গত মে মাসে ৩০ হাজার ভিসাও দেয় সৌদি সরকার। এরপর নারীশ্রমিক সংগ্রহে নামে সরকার। শ্রমিক সংগ্রহে নাম নিবন্ধনের বিজ্ঞাপন দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু সাড়া মিলছে না নারীদের কাছ থেকে।

গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয় মাত্র তিন হাজার নারী। এরপর জেলায় জেলায় অভিবাসন মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানেও আশানুরূপ ফল আসেনি।

এদিকে একশ’ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে নারীশ্রমিক পাঠানোর কথা থাকলেও শ্রমিকদের সংগ্রহ, বাছাই ও পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ১১৫টি রিত্রুটিং এজেন্সিকে। এসব এজেন্সি প্রত্যেকে সর্বোচ্চ দুইশ’ কর্মী পাঠাতে পারবে। কিন্তু তাদের কেউই এখন পর্যন্ত কোটা পূরণ করতে পারেনি।

তালিকাভুক্ত এজেন্সির একটি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশনের কর্ণধার মোহাম্মদ হাসান বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে মাইকিং করে নারীকর্মী সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়েছি। তবে এখন বিভিন্ন দেশে নারীকর্মী যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। এজন্য হয়ত তেমন সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে বায়রা সভাপতি আবুল বাশার জানান, যে সংখ্যক নারী পাঠানোর কথা ছিল, সে অনুযায়ী নারীকর্মী পাওয়া যায়নি সত্য। তবে সংখ্যায় কম হলেও কিছু নারীকে পাঠানো গেছে। তালিকাভুক্ত রিত্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তবে প্রত্যেকের কোটা পূরণে বেশ দেরি হবে বলে মনে করছেন এই বায়রা নেতা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে নারী নিপীড়নের কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। এছাড়া একটি মহল অকারণে নেগেটিভ ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কারণে প্রত্যাশার চেয়ে নারীদের কাছ থেকে কম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন রিক্রুটিং এজিন্স মালিক মোহাম্মদ হাসান। তিনি বলেন, একটা সময়ে হয়ত পরিস্থিতি খারাপ ছিল। কিন্তু এখন সরকার বলছে, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এনভারনমেন্ট ভাল করা হয়েছে। আমরাও সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নারী কর্মীদের সে বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারছি।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও এখন নির্যাতন রোধে বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের যৌথ কমিটি করা হয়েছে। নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই কমিটির মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে সৌদি আরবকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় নারীশ্রমিক সংগ্রহে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে বারবার মন্ত্রণালয় থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

২০০৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বৃহত্তম এই শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। নানা কূটনৈতিক তৎপরতায় দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পর গত ২০ এপ্রিল দেশটিতে বাংলাদেশি নারীশ্রমিক নেওয়ার কথা জানায় সৌদি সরকার।

তবে এই মুহূর্তে গৃহস্থালি কাজের জন্যে শুধু নারীশ্রমিক নিতে আগ্রহী তারা। তবে নারীশ্রমিকদের সৌদি আরব যেতে কিছুটা দেরি হবে। কারণ, সরকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাঠানোর আগে নারীশ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

তবে সৌদি সরকারের দাবি, বাংলাদেশ সরকার ইচ্ছা করেই নারীশ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় দেরি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *