নারী সংসদ সদস্যদের নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিরূপ মন্তব্য করায় সংসদের কার্যবিবরণী থেকে তা বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে শোপিস বলে অভিহিত করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। সঙ্গে সঙ্গে সংসদে ‘হট্টগোল’ শুরু হয়, কেউ কেউ টেবিল চাপড়ে ও দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ জানান। এ অবস্থায় এরশাদের বক্তব্য সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার (এক্সপাঞ্জ) কথা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। একই সঙ্গে এ জন্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এরশাদ বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে কথায় কথায় বলি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, সংসদের উপনেতা নারী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এরা কিন্তু শোপিস। বাইরের অবস্থা কিন্তু এটা না। বাইরের নারীরা আরো অসহায়।’
এ সময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। আর এরশাদের ওই বক্তব্যের সময় এরশাদের সহধর্মিণী বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তাঁর পাসের আসনেই বসেছিলেন।
সংসদের নারীদের শোপিস বলার পরপরই উপস্থিত নারী সদস্যরা ‘হট্টগোল’ শুরু করেন। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করেন। অন্য পুরুষ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রতিবাদ জানান। ফলে এরশাদ বাধ্য হন তাঁর বক্তব্য বন্ধ রাখতে। এ সময় স্পিকার সদস্যদের বসার জন্য অনুরোধ করে এরশাদকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁদের প্রতিবাদ চলতেই থাকে।
এর কিছুক্ষণ পর এরশাদ তাঁর বক্তব্য শুরু করে বলেন, ‘আমরা যখন একুশে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ফুল দিতে চাই, সেখানে নারীরা কেউ থাকেন না। সেখানে ভয়ে যান না তাঁরা।’ উত্তেজিত সদস্যদের হৈচৈয়ে এরশাদের বক্তব্য চাপা পড়ে যায়। এ সময় স্পিকার আবার এমপিদের উদ্দেশে বলেন, ‘বসুন, সদস্যরা বসুন। নীরবতা পালন করুন।’
পরে এরশাদ আবার তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি এ সময় পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারী লাঞ্ছনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এর কোনো বিচার হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার শাসনামলে এসিড-সন্ত্রাস ছিল। আমি এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’
এরশাদের বক্তব্য শেষ হলে সভাপতির আসনের থাকা স্পিকার বলেন, তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে বিশেষ করে এই সংসদে বিভিন্ন পদে আসীন নারীদের সম্পর্কে যে অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন, সে সব শব্দ সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ৩০৭ অনুযায়ী সংসদের কার্যপ্রবাহ থেকে এক্সপাঞ্জ করা হবে।
এরপর রওশন এরশাদ বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই এরশাদের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ‘হয়তো তাঁর শব্দচয়নটি ঠিক ছিল না।’ এ সময় উপস্থিত সব সদস্য টেবিল চাপড়ে স্বাগত জানান। আর পাশে বসে থাকা এরশাদ হেসে ওঠেন।