‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনের চেয়েও বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ’

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর শুক্রবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সংবাদ পত্রের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র তার চেয়েও ভয়াবহ বলে দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলটি বলেছে, ওই রিপোর্ট বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই নেতিবাচক। বিরোধী দলের রাজনীতি করে বলেই বিএনপি এই নেতিবাচক রিপোর্টে উল্লাসিত নয়। তবে আমাদের প্রশ্ন কেন বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরণের নেতিবাচক চিত্র আন্তর্জাতিক মহলে প্রচার হবে।

শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ দাবি করেন।

রিপন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন কেরির বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানিবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে চিত্র তুলে ধরেছেন তাতে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। দেশের জরুরী অবস্থা নেই, তারপরও গণমাধ্যমকর্মীরা নিজ থেকেই অনেক কিছু সেন্সর করেন। মিডিয়া যখন ভয়ভীতির মাধ্যমে কাজ করে তখন তা প্রকৃত গণমাধ্যম হতে পারেনা।

রিপোর্টে উল্লেখ আছে বাংলাদেশে যে সরকার এখন দেশ শাসন করছে তা জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করেনা। সম্ভবত এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তা মনে করেন না। সে কারনেই তিনি নির্বাচনের পরপর বলেছিলেন খুব দ্রুত সময়ে আলোচনার মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে সংসদ বহাল আছে তার মধ্যে ১৫৪ জন ফাও এমপি আছে। বাকি যারা আছে তাদেও কেউই ৫ ভাগের ও কম ভোট পেয়ে সংসদে গিয়েছেন। সে কারনে এসব ভোটার বিহীন এমপিরা নির্বাচনের কথা শুনলেই আতকে ওঠে। এই সংসদে কিছু লাফাঙ্গামার্কা এমপি আছে। যখন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার সম্ভবনা দেখা দেয়, তখন সেই লাফাঙ্গা-বাচাল মার্কা এমপিরা আরোল তাবোল বক্তব্য দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করে থাকে।

রিপন বলেন, গতকাল (শুক্রবার) খুচরা পার্টির নেতা ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়ার জায়গা হবে কাশিমপুর কারাগারে। আমরা জানি না, তিনি কবে বিচারক হলেন। আমরা বলছিনা, ইনুর জায়গা হবে কুষ্টিয়া কারাগারে। কারন আমরা বিচারক নই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বোমাবাজি, সন্ত্রাসের জনক হচ্ছেন ইনুরা। তারই এদেশে হত্যা-সন্ত্রাসের অপরাজনীতি শুরু করেছিলেন। এই ইনুরাই শেখ মুজিবের শাসনকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ঝালাপালা করে দিয়েছিলো। যার কারনে দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি করলেও শেখ মুজিব একদলীয় বাকশাল শাসনের কলঙ্গ গায়ে মাখাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

’৭৫ এর পর ইনুরাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সে অপরাধে সে গ্রেফতারও হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তিনি আজও বেঁচে আছেন, রাজনীতি করছেন, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার সুযোগ পাচ্ছেন। তা হলে তার ফাঁসির কাষ্টে ঝোলার কথা। মুলত নিজেদের হীণ স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই খুচরা পার্টির নেতারা নানারকম উস্কানিমুলক বক্তব্য দিয়ে দেশের রাজনীতিকে উত্তপ্ত করতে চায়। বিএনপি বিশেষ করে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্পর্কে নানা ধরনের আবোল তাবোল উত্তেজিত কথা বলে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে চায়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এসব খুচরা নেতাদের বক্তব্যে সায় দেবেন না। তিনি বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের পদক্ষেপ নেবেন। বিএনপিও এই খুচরা পার্টির নেতাদের আবোল তাবোল-উস্কানিমুলক বক্তব্যে উত্তেজিত হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেবেনা।

সংবাদ সম্মেলনে দলের যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, সহ শিল্প বিষয়ক সম্পাদক জহুরুল হক শাহাজাদা মিয়া, সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *