ডাইনোসরের বিলুপ্তির পথে

ঢাকা: ডাইনোসরের নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় জুরাসিক পার্ক সিরিজের ছবিগুলোসহ হলিউডের নামকরা বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের কথা। ভাবতে অবাক লাগে, চিরচেনা এই পৃথিবীতে এমন বিশালদেহী প্রাণীরও অস্তিত্ব ছিল এক সময়। আর মানবজাতির উদ্ভবের আগে বিশ্বটাকে শাসন করতো এ প্রাণী প্রজাতিই।

কিন্তু ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করে ডাইনোসরের সংখ্যা। পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এরা। কেন, কি কারণে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটল, তার অনেক উত্তর পাওয়া গেছে এ পর্যন্ত।

অনেকে মনে করেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের (ভূমিকম্প, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি) কারণেই বিলুপ্ত হয়েছে ডাইনোসর। কেউ আবার দাবি করেন, বিশাল পেটের ডাইনোসরদের এক সময় খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজেরাই নিজেদের খেতে শুরু করে।

তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে যৌক্তিক উত্তর খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব ভূ-রসায়ণ বিদ্যার অধ্যাপক জেসিকা হোয়াইটসাইড ও তার দল। এই গবেষকদল সম্প্রতি তাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এতে দাবি করা হয়েছে, অস্থিতিশীল পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ডাইনোসর বিলুপ্তির মূল কারণ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ থেকে ২১৫-২০৫ মিলিয়ন বছর আগে, ট্রায়াসিক যুগের শেষ দিকে বর্তমান কোস্টারিকায় সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর আবাস ছিল। এ অঞ্চলের ভূমি ও নুড়িপাথর বিশ্লেষণ করে ছোট প্রজাতির কিছু ডাইনোসরের জীবাশ্মও পাওয়া গেছে।

জেসিকা বলেন, বর্তমানে যেমন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন-১৩ এর মাত্রা বাড়ছে, সে সময়ও হঠাৎ করে কার্বন-১৩ এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাব পড়তে থাকে বাস্তুসংস্থানে।

ডাইনোসরদের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে জেসিকা হোয়াইটসাইডের দল দেখেছেন, এ প্রজাতির প্রাণীদের বাঁচার জন্য ভেজা পরিবেশেই সবচেয়ে সহায়ক। কিন্তু দিনে দিনে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-১৩ এর পরিমাণ বাড়তে থাকায় পরিবেশ শুষ্ক হয়ে উঠতে থাকে।

জেসিকা বলেন, ভেজা ও শুষ্ক পরিবেশের সামঞ্জস্যতা আরও ভেঙে গেল যখন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেল।

সাম্প্রতিক জলবায়ু গবেষণাগুলোয় ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে জলচক্রে। ডাইনোসরদের সময় যা ঘটেছে, ভবিষ্যতেও তা ঘটতে পারে।

নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কোস্টারিকা এলাকায় পাথরের স্তর বিশ্লেষণ করে এতে কাঠকয়লারও নম‍ুনা পাওয়া গেছে। এর অর্থ, ডাইনোসরদের যুগেও এ অঞ্চলে দাবানলের ঘটনা ঘটেছিল।

ওয়াটারভিলের কলবি কলেজের জৈব পেট্রোলজিস্ট ইয়ান গ্লাসপোল বলেন, দাবানলগুলোর তাপমাত্রা ৬৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। অ্যালুমিনিয়ামের ক্যান ভস্মীভূত করতে এ তাপমাত্রা যথেষ্ট।

তিনি বলেন, এ তাপমাত্রা খুবই উচ্চ। খুব সম্ভবত দাবানলকে উসকে দিতে সেসময় প্রচুর জ্বালানি মজুদ ছিল প্রকৃতিতে।

জেসিকা হোয়াইটসাইড ও তার সহকারীরা সরীসৃপ ও কাঠকায়লার জীবাশ্ম সম্বলিত কিছু নুড়ি-পাথর নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রাণীগুলো দাবানলেই মারা গেছে এবং তাদের পচনশীল দেহাবশেষ বৃষ্টিপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে একটা পর্যায়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অস্থিতিশীল পরিবেশই খুব সম্ভবত বিশালদেহী ডাইনোসরদের এ অঞ্চলে বাঁচতে দেয়নি।

সল্ট লেক সিটিতে ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের প্যালায়ান্টলজিস্ট রান্দাল ইরমিস বলেন, বিশালদেহী তৃণভোজী ডাইনোসরদের বেঁচে থাকতে স্থিতিশীল পরিবেশ খুব জরুরি। এসব প্রাণী ডিম থেকে ফোটার পর ১০-২০ বছরেই ৪ হাজার কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। এদের বেঁচে থাকতে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ অবশ্যই প্রয়োজন।

এরপরে পড়ুন-

. ডাইনোসরের রক্ত উষ্ণ, না শীতল?
. প্রতিযোগিতা এড়াতে দ্রুত বেড়ে উঠেছিল কিছু ডাইনোসর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *