মীরজাফরের বংশধর

অন্যকে ধ্বংস করার যাদের ক্ষমতা আছে,  অন্যের কাছ থেকে লুট করে আনা সম্পদ আছে যাদের কাছে, অন্যের রক্ত চুষে সেই সম্পদ ধরে রাখা ও বৃদ্ধি করার কৌশল যাদের জানা আছে তারা অনেকটা আকাশের তাঁরার মত। সবাই সেদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে । কেউ স্পর্শ করতে পারেনা। এই শক্তিকে সবাই ভয় করে। এই শক্তিকে সবাই উঁচু স্থানে জাগা দিয়ে রেখেছে ।আমরা যাকে পবিত্র মনে করি তা উঁচু স্থানে রেখে দেয় যাতে ধুলো বা অপবিত্র কোন কিছু স্পর্শ না করে। আমাদের দেশের সকল অপরাধীদের আমরা উঁচু স্থানে জাগা দিয়ে রেখেছি। সবাই তাদের সমীহ করে।  সমীহ ও শ্রদ্ধা খুব আজব জিনিষ। সমীহ ও শ্রদ্ধা খুব খেলো জিনিষ। মুষ্টিমেয় অপরাধীদের যখন গোটা জাতী শ্রদ্ধা করে আবার সেই একই জাতী মীরজাফরের সমালোচনা করে অথবা সেই মুষ্টিমেয় অপরাধীদের দুই দলে ভাগ করে এক দল অন্যদলের সাথে আজীবন লড়াই করতে থাকে, একদলকে ভালবাসে আর অন্যদলকে ঘৃনা করে তখন ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায়।

মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাম বিশ্বের সবাই জানে। জ্বলা, পোড়া, নির্যাতিত ও মৃত নারীপুরুষশিশুবৃদ্ধ  অনেক অনেক ছবি আমরা দেখেছি। এইসব ছবি ফেসবুকে অনেকেই ট্যাগ করেছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা আমাদের দেশেরই অধিবাসী। শ্রীলংকার তামিলরা যেমন ভারতের তামিল নাড়ুর অধিবাসী। শ্রীলংকার তামিলরা ভারতে সমাদৃত। মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত। বাংলাদেশের যেকোন গরীব বাংলাদেশী বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত। বাংলাদেশের মানুষ আকাশের তাঁরার পূজারি। বাংলাদেশের মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ হয়ে। এই আকাশে বিভিন্ন তারকাদের মধ্য পুঁজিবাদী রাস্ট্র ভারত ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্র অন্যতম।

 

বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই দুই রাস্ট্র অনেক প্রিয়। বাংলাদেশের মানুষের আশাভরসা ভালবাসা এই দুই রাস্ট্র। এই দুই আশার আলো যারা স্পর্শ করতে পারে তারা হইল বাংলাদেশের দুই নেত্রী। তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা জনগন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে যখন এই দুই রাস্ট্রের প্রতিনিধিরা এই দুই নেত্রীকে স্পর্শ করে। পাশে বসে কথা বলে। এই দুই তারকা রাস্ট্র যখন এই দুই নেত্রীকে স্পর্শ করবে তখনই বাংলাদেশের মানুষের সব অপূর্ন আশা পূর্ন হবে।

মিয়ানমারের গনহত্যার পাশাপাশি বাংলাদেশেও গনহত্যা চলতে থাকে। কখনও বেশী কখনও কম। সেটা কোন সমস্যা নয়। ভারতে মুসলিম হত্যা নতুন কিছু ব্যাপার না। প্রতি বছর দুইবার ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে মুসলিম নিধন করা হয়। ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশী হত্যা করে প্রায় প্রতিদিন। সেটাও কোন ব্যাপার না। এইসব কিছু কোন ব্যাপার না কারণ যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের মতই দরিদ্র ও অবাঞ্ছিত। তারা কেউ তাঁরা না তাই বাংলাদেশের মানুষ তাদের চিনেনা বা জানেনা। তবে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক কারণে তাদের লাশের ছবি ব্যবহার করে প্রিয় তারকাদের দালালদের নির্দেশে।

বিশ্বের সব চাইতে হাস্যকর ব্যাপার হলো এইসব গনহত্যা কিছুতেই মানবাধিকার লংঘন করেনা। মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গা গনহত্যা মানবাধিকার লংঘন করেনা। বাংলাদেশে শাপলা চত্বর গনহত্যা মানবাধিকার লংঘন করেনা। ঘরে ঘরে এসে পুলিশ গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা করে – সেটা মানবাধিকার লংঘন করেনা। পালেস্টাইনে ইসরায়েলী হামলা ও মুসলিম হত্যা – মানবাধিকার লংঘন করেনা। সাড়া বিশ্বের কোথাও যদি মুসলিমদের হত্যা করা হয় আর এই হত্যা যদি ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত করে তাহলে এইসব হত্যা মানবাধিকার লংঘন করেনা।

সাড়া বিশ্বের মুসলিম হত্যার জন্য সাড়া বিশ্বের মুসলমানদের কারু উপরে কোন রাগ বা অভিমান নেই। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের রাস্ট্রদুতেরা যখন ইফতার পার্টিতে এসে নেত্রীর পাশে বসে তখন বাংলাদেশের সাধারন মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আকাশের তাঁরার দিকে। কেউ তখন মনে করে না রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাতে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের নীরব সমর্থনের কথা। কেউ মনে করেনা ইরাকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের দ্বারা দুই মিলিয়ন মুসলিম হত্যার কথা। কেউ মনে রাখেনা মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের অর্থায়নে ইসরায়েলী বোমাতে পালেস্টাইনী শিশু হত্যার কথা।

সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আকাশের তাঁরার দিকে। তারপর যখন ঘাড় ব্যাথা হয়ে যায় তখন মীরজাফরের কাহিনী পড়ে কান্নাকাটি করে।

মীরজাফর আলী খান বিদেশীদের থাকতে সাহায্য করেছিল তারপর বিদেশীরা কোন দিন বাংলাদেশে ত্যাগ করেনি কারণ বাংলাদেশের মানুষ বিদেশীদের ভালবাসে। বিদেশীদের দাসত্ব করতে ভালবাসে। বাংলদেশের মানুষ সব মিরজাফরের বংশধর।

জনশক্তি বলে একটা শক্তির কথা রুপকথার বইয়ে আমরা পড়েছি যা বাংলাদেশে নাই। বাংলাদেশে আছে বিদেশী শক্তি ও বিদেশীদের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি বা দালালদের শক্তি। আকাশের দিকে মুগ্ধ হয়ে তারা দেখে দেখে জনশক্তি সব অপচয় হয়ে গেছে। বিভিন্ন মানুষে আকাশের তারাদের কাছে অনেক প্রত্যাশা। আকাশের তারাদের দুইজন প্রতিনিধির পেছনে দুইদল অপরাধীরা সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষারত। তারাদের নির্দেশে যখন রাস্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পাবে তখন লুটপাটের সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশে বিদেশীরা আসে লুট করতে আর বাংলাদেশীরা বিদেশে যায় শ্রম বিক্রি করতে। বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদের মালিকানা বিদেশীদের। মিরজাফরেরা পাচারে সাহায্য করছে। বাংলাদেশের মানবসম্পদ বাংলাদেশে তেমন কাজে লাগেনা। বিদেশীদের দাসত্ব করার জন্য বেশী গোলামের দরকার হয়না। বাংলাদেশে কোন কাজে লাগেনা তাই এইসব মানবসম্পদ বিদেশে তা কমমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অথবা অপচয় হচ্ছে। তবু আশা আছে। নেত্রীর হাতে যদি বিদেশীরা রাস্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয় তাহলে হয়তো লুটের সুযোগ পাওয়া যাবে তখন আকাশের তাঁরা স্পর্শ করার জন্য মই কেনার ক্ষমতা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.