সঙ্কটাপন্ন জামায়াতের ইফতার বিলাসিতা

ঢাকা: শীর্ষ নেতাদের বন্দিদশা এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বহু নেতাকর্মী জেলে, অনেকে শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু এর মধ্যে ইফতারের নামে চলছে জামায়াতের বিলাসিতা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফাইভ স্টার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে দলটি। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে কমপক্ষে পাঁচশ রাজনীতিক ও পেশাজীবীকে।

এর আগে গত সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে (ওয়েস্টিন) কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার পার্টির আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। ওই পার্টিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবারের ইফতার পার্টিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যোগ দিচ্ছেন বলেও জামায়াত সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অন্যতম সদস্য বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা রাজনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকি। এবারও এ ইফতার পার্টির আয়োজন করেছি। জোট নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া এবার উপস্থিত থাকবেন। তবে এটা বিলাসিতা নয়, বরং পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার। এখানে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত থাকবেন।’

তবে দলটির একাধিক নেতাকর্মী মনে করছেন, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সঙ্কট মোকাবিলা করছে জামায়াত। ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের পর দলের মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ পর্যায়ক্রমে সারাদেশের দলীয় কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মী। নিহত হয়েছে শতাধিক। প্রায় ৫০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে। এ অবস্থায় আহত-নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর নেয়াই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে এতো খরচ করে ইফতার পার্টি দেয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মহানগরের এক নেতা বলেন, ‘এখন দলের প্রতিকূল অবস্থা যাচ্ছে। এছাড়া দুই জন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের বেশিরভাগই কারাবরণ করেছে। সব মিলিয়ে সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে এ ধরনের অনুষ্ঠান খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।’

তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নির্বাহী কমিটির সদস্য দাবি করছেন, এই ইফতার পার্টির মধ্য দিয়ে দলটি আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি মনোবল চাঙা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারসহ দেশি-বিদেশি শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা মনে করছে জামায়াতের অস্তিত্ব নেই তাদেরকেও জানান দেয়াই হলো এই ইফতার পার্টির লক্ষ্য।

এই নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে রমজান মাসজুড়েই সারাদেশে ইফতার মাহফিল আয়োজন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয়, মহানগর, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ দলটির প্রতিটি শাখা কমিটিকে ইফতার মাহফিল আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করা এবং মানুষের কাছে টানার সুযোগ হবে বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *