গৃহ পরিচারিকা নয় যেন যৌনদাসী!

স্বামী পরিত্যক্তা সকিনা (২৫)। যিনি অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পেতে দালালদের আশ্বাসে পাড়ি দিয়েছিলেন লেবাননে। তারা বলেছিল, ভালো চাকরি দেবে, ভালো বেতনও পাবে। কিন্তু এর একটিও পান নি তিনি। বরং তার ওপর চালানো হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতন। আচরণ করা হচ্ছে যৌনদাসীর মতো।

শুধু তাই নয়, পরিবারের সঙ্গে তাকে কোনো রকম যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছে না। গত ছয় মাস আগে লেবাননে পাঠানো হলেও পরিবারের সঙ্গে একবার মাত্র তার যোগাযোগ হয়েছে।

ভুক্তভোগী সকিনা খাতুন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কদমতলা গ্রামের মৃত হারুনের মেয়ে।

আজ থেকে মাস দুয়েক আগে লুকিয়ে বোন নুরজাহানকে ফোনে জানিয়েছিলেন, তিনি বিশাল এক ভবনের ১০ তলায় আটকা পড়ে আছেন। তার অবস্থা মৃত্যুর মুখোমুখি। তাকে দ্রুত উদ্ধার করা না হলে আর জীবিত ফিরে পাওয়া যাবে না। এর বেশি কিছু তিনি জানাতে পারেন নি। ওই কথার দু’মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

পারিবারিক সূত্র জানায়, কিছুদিন সংসার করার পর স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয় সকিনার। পরে আবার দ্বিতীয় বিয়ে হলে সেখানেও চলতে থাকে নানা টানাপোড়েন। এতে আর্থিক ও মানসিকসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাকে।

এদিকে, সকিনার এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার গ্রামের আলী আহম্মেদের ছেলে আব্দুর রহিম ও উজ্জলপুর গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মুক্তার হোসেন তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়। এক পর্যায়ে ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর তাকে ফুঁসলিয়ে মোটা অংকের বেতনে চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে ঢাকার পল্টনে নিয়ে যায়। সেখানে দুই দিন রেখে ২৯ নভেম্বর হিমেল এজেন্সির মালিক সলেমান গাজী ও কোরবান গাজী দুই সহোদরের মাধ্যমে বিমানে করে লেবাননে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

বিদেশে পৌঁছনোর পর সকিনার ওপর শুরু হয় যৌন ও অমানষিক নির্যাতন। তাকে ঠিক মতো খেতে দেয়া হয় না। নির্যাতন সইতে না পেরে দেশে ফিরতে চাইলেও তাকে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না জানিয়েছিলেন তিনি।

নুরজাহান আরো জানান, তার বোনের সঙ্গে দুমাস আগে যোগাযোগ হয়েছে। তবে এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। ওই সময় সকিনা জানিয়েছিল, সে এখন মৃত্যুর মুখোমুখি তাকে দ্রুত উদ্ধার করা না হলে তাকে আর জীবিত ফিরে পাওয়া যাবে না।

এ পরিস্থিতিতে নুরজাহান বেগম তার বোনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে সাহায্য কামনা করেছেন। সেইসঙ্গে পাচারকারীদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.