পদ্মায় ডুবলো ভারত, ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ

ঢাকা: একটার পর একটা বিস্সয় উপহার দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ। এবং আজ মিরপুরে রচিত হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের নয়া অধ্যায়। পরাক্রমশালী ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো টাইগাররা। তাহলে কি ধবল ধোলাই হয়ে দেশে ফিরতে হবে ধোনি-কোহলিদের? মিরপুরে শেষ ওয়ানডে ২৪ জুন। সেখানে নিশ্চিত বাংলাওয়াশেই চোখ থাকবে মাশরাফিদের।

গত ম্যাচের মতো এদিনও বাংলাদেশের জয়ের স্থপতি ছিলেন তরুণ ফাস্ট বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেটের পর এদিন নেন ৬ উইকেট। তার বিধ্বংসি বোলিংয়ে ৪৫ ওভারে ভারত অল আউট ২০০রানে। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ৪৭ ওভারে ১৯৯। সৌম্য সরকার (৩৪), লিটন দাস (৩৬) , মুশফিক (৩১), সাকিব (৫১ ) এবং সাব্বিরের (২২) দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৩৮ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে সহজেই লক্ষ্যে পৌছে যায় স্বাগতিকরা।

৪৭ ওভারে ২০০। বড় কোন টার্গেট নয়।দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার দেখে শুনেই শুরু করেছিলেন। ভারতকে হতাশ করে এ জুটি ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু ১৩ রান করে হঠাৎই আউট হয়ে যান তামিম। কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ।সৌম্য সর কার এবং লিটন দাস সেই চাপ সামল দিয়ে দলকে টেনে নেন ভালো জায়গায়।ভালো খেলার মধ্যেই হঠাৎ ৩৪ রান করে অশ্বিনের বলে এলবি হয়ে ফিরেন সৌম্য। ততোক্ষণে ৮৬ রানে পৌছে গেছে বাংলাদেশ। ভালা খেলতে থাকা লিটনের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম।কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ৩৬ রান করে ফিরে যান লিটন।

মুশফিক এবং সাকিবের উপর দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছিল। সেই দায়িত্ব তারা ঠিকঠাক পালন করলেন।দলের রান ১৫২তে নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত ৩১ রানে রান আউট হন মুশফিক।তবে বাজি কাজটুকু শেষ করার জন্য সাকিব ছিলেন উইকেটে। সঙ্গে পান সাব্বির রহমানকে।এ জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকে ৯ ওভার বাকি থাকতে ৬ উইকেটের বড় জয় নিশ্চিত করেন।৬২ বলে ৫১ করে অপরাজিত থাকেন সাকিব। সাব্বির রহমান করেন ২৩ বলে অপরাজিত ২২ রান।

এরআগে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে ৪৫ ওভারে মাত্র ২০০ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত।

দ্বিতীয় বলেই রোহিত (০) বোকা বনে যান গত ম্যাচের নায়ক মুস্তাফিজের কাছে। বলটি ছাড়ার আগে স্পিনারের মতো ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। হাফবলি-টাইপের ওই বলে দুর্বল ড্রাইভ করেন রোহিত। বল মাঝব্লেডে না লাগলে চলে যায় শর্ট পয়েন্টে দাঁড়ানো সাব্বিরের দিকে। কিছুটা ঝাঁপিয়ে দুর্দান্তভাবে তালুবন্দি করেন তিনি।

এরপর ধাওয়ানকে নিয়ে কোহলি এসে দেখেশুনে শুরু করেন। তবে ব্যাটিংয়ে অস্থিরতা ছিল স্পষ্ট। এভাবে ৭৮ রানের জুটিও গড়েন দুজনে। শেষমেশ জুটি ভাঙেন আইটেম স্পিনার নাসির।

নাসিরের শর্টঅফ লেন্থের অফব্রেক পিস করেই বিরাটের পেছনের পায়ে আঘাত হানে। আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কোহলিকে ফিরতে হয় ২৩ রানে।

এরপর ২১তম ওভারের শেষ বলে নাসিরকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ধাওয়ান। নাসির বুঝতে পেরে বল অফসাইডে টার্ন করান। কানায় লেগে তা চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে।

পরের ওভারের চতুর্থ বলে বিশ্বকাপের নায়ক রুবেল নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন। আসতেই ফিরিয়ে দেন আম্বতি রাইডুকে (০)। শর্ট বলে পুল না করে কাট করতে চেয়েছিলেন রাইডু। শট নির্বাচনে এমন ভুলের খেসারত দেন সঙ্গে সঙ্গে। বল চলে যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো নাসিরের ডেরায়। গত ম্যাচে দুর্দান্ত ক্যাচে রাহানেকে ফিরিয়া দেয়া নাসির এদিনও ক্যাচ তুলে নেন চোখ জুড়িয়ে।

এরপর রায়নাকে নিয়ে ধোনি এগোতে থাকেন ধীর গতিতে। দুজনে গড়েন ৫৩ রানের জুটি। ব্রেকথ্রু পেতে মাশরাফি স্মরণ করেন ‍মুস্তাফিজকে। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ৩৬তম ওভারের তৃতীয় বলে সেই ‘বিষাক্ত’ কাটার মারেন সাতক্ষীরার এই তরুণ। বলটি বেশ শর্ট ছিল। পিচ করেই টেনিস বলের মতো লাফিয়ে ওঠে। রায়না সেকেন্ডস্লিপ খালি জেনেই মারতে চেয়েছিলেন। বল কানায় লেগে লিটনের হাতে চলে যায়। দলকে বিপদে রেখে ৩৪ রানের মাথায় ফিরতে হয় রায়নাকে। রায়না ফিরে গেলে সিঙ্গেল নিয়ে স্কোর বড় করার পায়তারায় থাকা ধোনিকে গত ম্যাচের ‘জবাব’টা দিয়ে দেন আরেকটি ‘কাটারে’। ৪০তম ওভারের তৃতীয় বলে কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে শটকাভারে সৌম্যের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ভারত দলপতি (৪৭)। ঠিক গত ম্যাচে রোহিত যেভাবে মাশরাফিকে ক্যাচ দিয়েছিলেন। পরের বলেও গত ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। সম্ভাবনা জাগান হ্যাট্রিকের।

অক্ষর প্যাটেলকে গোল্ডেন ডাকের স্মৃতি উপহার দেন। সিম-আপ ডেলিভারিতে এলবিডব্লির ফাঁদে ফেলেন। হ্যাট্রিক করতে না পারলেও নিজের পরের ওভারে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ পাঁচ উইকেট তুলে নেন। ঢুকে পড়েন ইতিহাসে। ওয়ানডের মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ওভিষেকসহ দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি। অশ্বিন তার কাটারে ভড়কে যেয়ে কট-বিহাইন্ড হন।

৪৩.৫ ওভারে ভারতের রান যখন ৮ উইকেটে ১৯৬ তখন বৃষ্টি আগে। খেরা বন্ধ থাকে প্রায় দেড় ঘন্টা। ম্যাচ গড়ায় ৪৭ ওভারে। তবে ৪৭ ওভার দূরে থাক ৪৫ ওভারেই মাত্র ২০০ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।

শেষ উইকেট দুটি ভাগাভাগি করে নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন। এ নিয়ে ৪৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে অভিষেকের প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে নয়া রেকর্ড গড়েন মুস্তাফিজ। দুটি করে উইকেট নেন রুবেল ও নসির হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.