বিজিবির নায়েক রাজ্জাকের ‘বিচার’ করবে মিয়ানমার

কক্সবাজারের নাফ নদী থেকে অপহৃত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে মিয়ানমার সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগ আনা হতে পারে।

আবদুর রাজ্জাককে ফেরত চেয়ে গতকাল শনিবারও মিয়ানমারের কাছে অনুরোধ করে বাংলাদেশ সরকার। তবে অপহৃত হওয়ার চার দিন পেরিয়ে গেলেও নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দেয়নি মিয়ানমার।

একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান সে দেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশের অনুরোধ তাঁর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

সূত্রটি আরো জানায়, তবে এর পরও যদি মিয়ানমার আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তাঁর দেশে ফিরতে আরো দেরি হতে পারে।

এ ছাড়া হাতকড়া পরা অবস্থায় রাজ্জাকের ছবি প্রকাশ করারও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে, নায়েক আবদুর রাজ্জাককে বৃহস্পতিবার ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমার থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চায়। এর পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মায়ো মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব কর হয়।
রাষ্ট্রদূত মায়ো মিন্টকে বলা হয়, অপহৃত বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দিতে মিয়ানমার সরকার যাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়। তলবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত মায়ো মিন্টু এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে অনুরোধ করবেন।

অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব মিজানুর রহমান অবিলম্বে ওই বিজিবি সদস্যকে ফেরত দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি মৌখিক অনুরোধ করেন মায়ো মিন্টোর মাধ্যমে।

গত ১৭ জুন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) কক্সবাজারের নাফ নদীতে বিজিবির একটি টহল নৌকা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় বিজিবি সদস্য বিপ্লব কুমার গুলিবিদ্ধ হন।

পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটিকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

এ গুলির ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অন্যায্য হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা। বিজিপির পক্ষ থেকে এ ধরনের অনর্থক গোলাগুলি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিজিবি জানায়, তাদের ওপর কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর জলসীমায় গুলি চালায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা। এতে এক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। আরেক বিজিবি সদস্যকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা ধরে নিয়ে যায়। ওই সদস্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানায় বিজিবি।

এর পর আটক নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বিজিবি বারবার পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি বিজিপি। ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর রেস্টহাউসে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।

ওই দিনই বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আনিসুর রহমান বলেন, বিজিবি সদস্য নায়েক আবদুর রাজ্জাক মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। তিনি নিরাপদ ও সুস্থ আছেন। তিনি বলেন, নায়েক রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শিগগিরই বিজিপির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে।

এ ছাড়া ১৮ জুন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘গোলাগুলির ঘটনা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে।’

এর আগে ২০১৪ সালের ২৮ মে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়িতে কোনো কারণ ছাড়াই মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান বিজিবির নায়েক এম মিজানুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *