তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন সামনে রেখে রোজার মধ্যেই দলকে ঢেলে সাজাচ্ছে বিএনপি। এ জন্য সৎ, মেধাবী ও ত্যাগীদের বাছাই করে নেতৃত্বে নিয়ে আসতে এরই মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশে ঢাকাসহ সারাদেশে কাজ শুরু করেছে দলের মধ্যম সারির কয়েক নেতা।
তারা দলের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা ৫টি সাংগঠনিক জেলা ও এর অধীন প্রতিটি ইউনিটের সক্রিয়, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন।
দলের একজন সহদফতর সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বিএনপির এক নেতাসহ দলের আরও কয়েকজন মধ্যম সারির নেতার ওপর নতুন নেতৃত্ব খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
তবে সবার আগে যুবদল পুনর্গঠনের কাজ চলছে জোরেশোরে। এ জন্য যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দলীয় প্রধানকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
রোববার রাতে গুলশান কার্যালয়ে আইনজীবীদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া আবারো নতুনভাবে দল গোছানোর কথা বলেছেন। জানা গেছে, আইনজীবীরা ওই অনুষ্ঠানে দল নিয়ে খোলামেলা অনেক কথা বলেছেন। তারা বেগম জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘দলের ঐক্য ধরে রাখতে সব কিছু নিজ হাতে নিয়ন্ত্রণ করুন, দেখবেন কী করে সফলতা আসে। সফলতা আসতে বাধ্য।’ তারা বলেন, ‘দলের কিছু নেতা আপনাকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আড়াল করে রেখেছে। ইচ্ছা থাকার পরও প্রয়োজনে আপনার সাথে আমরা দেখা করতে পারি না। অথচ আগে এমনটা ছিল না।’
এসব কথা শুনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘হতাশ হবেন না। আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যারা দলের সাথে বেঈমানি করেননি তাদের এবার মূল্যায়ন করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে যাই বলুক আর লেখুক দলে ঐক্য আছে। দল সুসংগঠিত রয়েছে। আমরা দল গোছানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছি।’
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ঢাকা মহানগর বিএনপির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে কিছু নেতার নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, ওই সব নেতা দলে সব সময় কোন্দল তৈরি করছেন। আন্দোলনের সময়ও তারা মাঠে ছিলেন না। কেউ কেউ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন।
নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের কাছে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলনে কারা কিভাবে গ্রেফতার হয়েছেন, যাদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল, তারা সে দায়িত্ব পালন করেছেন কি না অথবা কারা এলাকায় ছিলেন না এসব খোঁজ নেয়া হচ্ছে। রোজার মধ্যে এসব তথ্য দলীয় চেয়ারপারসনকে দেয়া হবে। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা বলেন, এসব তথ্য উপাত্তের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাছাই করে কমিটির নেতৃত্ব দেয়া।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, জেলা, মহানগর ও থানা বা উপজেলা পর্যায়ে সরকারবিরোধী গত দুই আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, কারাভোগ, পুলিশ কিংবা আওয়ামী লীগের হামলায় আহতের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দায়িত্বে থাকার পরও কারা দায়িত্ব পালন করেননি সে বিষয়টিও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এসবের ওপর ভিত্তি করে জেলা, থানা ও মহানগর পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এখন চলছে প্রথম ধাপ। এতে বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্ভাব্য নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তারপর পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ায় হাত দেয়া হবে।
আতিক/প্রবাস