মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সু্প্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

মুজাহিদের আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়ে মঙ্গলবার (১৬ জুন) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওই বছরের ১১ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন মুজাহিদ। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

মঙ্গলবার আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে তার আপিল খারিজ করে ৬ নম্বর অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এ অভিযোগে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদির ঘটনার দায়ও প্রমাণিত হয়েছে মুজাহিদের বিরুদ্ধে।

তবে ১ নম্বর অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে হত্যার দায়ে থেকে আপিল মামলার রায়ে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনালেএ অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। এ অভিযোগেও মুজাহিদের সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির দায় প্রমাণিত হয়েছিলো ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

অন্যদিকে ৭ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার দায়ে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দু’টি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ ১ ও ৬ নম্বর অভিযোগকে আলাদা করেই চূড়ান্ত রায়টি দিলেন।

৫ নম্বর অভিযোগে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে খালাস পান মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে একমত হয়ে এ চার অভিযোগের দণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

প্রমাণিত না হওয়া ২ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানায় বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণহত্যার অভিযোগ এবং ৪ নম্বর অভিযোগে কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার মো. আবু ইউসুফ পাখিকে আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ অআনা হয়েছিল।

সংক্ষিপ্তাকারে দেওয়া এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন মুজাহিদ। যদি তিনি রিভিউ আবেদন করেন তাহলে এ রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তির পর তার দণ্ড কার্যকর করা যাবে।

মুজাহিদের রায়টিসহ সর্বোচ্চ আদালত মোট চারটি রায় ঘোষণা করলেন। এর মধ্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।

গত ২৭ মে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে মুজাহিদের আপিল মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৬ জুন দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

গত ২৯ এপ্রিল থেকে আপিল মামলার শুনানি শুরু হয়ে ২৭ মে মোট নয় কার্যদিবসে শেষ হয়। প্রথমে সাত কার্যদিবসে শুনানি করেন আসামিপক্ষ। ১৮ মে পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের রায় ও রায় সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) পাঠ শেষ করে ২৪ মে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এস এম শাহজাহান। ২৭ মে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন মুজাহিদের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত ১৮, ২৬ ও ২৭ মে মোট তিন কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক শেষ করেন। ২৫ পৃষ্ঠার একটি লিখিত যুক্তিও আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। পরে একই বছরের ১১ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, সেগুলোর আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। মূল আপিল ৯৫ পৃষ্ঠার, এর সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.