বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ‘সেক্স ওয়ার্কার’ বললেন মন্ত্রী মহসিন আলী

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১০ জুন বুধবার অনুষ্ঠিত জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সমাজকল্যানমন্ত্রী মহসিন আলী প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদেরকে চরমভাবে অপদস্ত করেছেন। তিনি তাদেরকে জঘণ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন।

ঐ সভায় সভাপতিত্বকালে মন্ত্রী সরকারের ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদেরকে গালি দিতে গিয়ে ‘বাস্টার্ড’ এর মত আপত্তিকর শব্দও ব্যবহার করেছেন। এমনকি তার কথা মত কাজ না করলে পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে নেয়ারও হুমকি দেন শুরু থেকেই একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করে আলোচনায় থাকা এ মন্ত্রী।

সভায় মন্ত্রীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্বোধন না করায় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জহিরুল ইসলামের ওপর তিনি চড়াও হন এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

ঐ সভায় মন্ত্রী দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরক বেশ্যা (সেক্স ওয়ার্কার) বলেন বলে ডেইলী স্টার এ ১৩ জুন প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে। তবে মন্ত্রীর অভিযোগ প্রমানিত নয় উল্লেখ করে ডেইলী স্টার বিশ্ববিদ্যালয় দুটির নাম প্রকাশ করেনি।

জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মর্তাদের কাছ জানা যায়, মন্ত্রীর সুপারিশকৃত দলীয় লোকদের পুলিশে চাকুরি না হওয়ায় এসপি তোফায়েল আহমেদকে গালিগালাজ ছাড়াও তাকে দেখে নেবেন বলেও হুমকি দেন।

সভায় উপস্থিত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা থানার ওসিদের দাড় করিয়ে মন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জিজ্ঞাসার জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে মন্ত্রী তাদেরকেও অশ্লীল ভাষায় গালি দেন বলেও জানা যায়। শেরপুর এলাকার একটি অপরাধের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় সভায় উপস্থিত এক র‍্যাব কর্মকর্তার ওপরও ক্ষিপ্ত হন মন্ত্রী। জেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা সভায় ‘ক্যাপ’ মাথায় দেয়ায় তাকেও গালমন্দ করেন।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী অশোভন আচরণের বিষয়ে পুলিশ সুপার বুধবার রাতেই পুলিশ কর্মকর্তা সদর দপ্তরে ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছেন। ওই বার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, বুধবারের ওই সভায় মন্ত্রী জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে অশোভনীয় বক্তব্য প্রদান করলে উপস্থিত কর্মকর্তারা অস্বস্তি বোধ করেন। মন্ত্রীর এ আচরণের পর সেখানে চাকুরী করতে তারা অস্বস্তি বোধ করছেন। ফ্যাক্স বার্তার কপি স্পেশাল ব্রাঞ্চের অ্যাডিশনাল আইজি, সিলেট রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকেও পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার হলে তদবীরে এসপি এদের সহজে ছেড়ে না দিয়ে মহসীন আলীর চক্ষুশূলে পরিনত হন। মন্ত্রী হবার পর থেকেই সৈয়দ মহসিন আলীর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং অশালীন ভাষা ব্যবহারে সিলেট অঞ্চলের প্রশাসন, পুলিশ, গণমাধ্যম কর্মীসহ সকল মহলে তিনি একজন অপ্রিয় ব্যক্তি।  ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের সাংবাদিকগন তার অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। কিছু দিন পূর্বে তিনি প্রাকাশ্যে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের একজন এডিসকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করলে উপস্থিত সকলে প্রতিবাদ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এসপি সম্পর্কে মন্ত্রীর অভিযোগ সম্পূর্ন ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। বর্তমান সময়ে এভাবে টাকার বিনিময়ে শত শত বিএনপি-জামাত কর্মীদের পুলিশে ঢোকানো অসম্ভব একটি ঘটনা। এসপি মহসীন আলীর তদবিরকৃত লোকজন না নিয়ে প্রকৃত মেধাসম্পন্ন প্রার্থীদের  স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ দেয়ায় মন্ত্রী চরম ক্ষিপ্ত হন বলে জানা গেছে।

গত বুধবারেরর ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রী শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,  এসপি তোফায়েল আহমেদ অন্তত ১০০ জনের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকজনকে তিনি পুলিশে ঢুকিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জেলার পুলিশ সুপারসহ ‘দুর্নীতিবাজদের’ তালিকা ও প্রমাণ আমার কাছে আছে। তবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, কাউকে আমি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করিনি। দুর্নীতিবাজদের দেশের স্বার্থে শাসন করা দরকার।

তিনি বলেন, আমি আগামী রোববারই জাতীয় সংসদে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ও এ জেলার পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তাদের চিত্র তুলে ধরব।

তবে মন্ত্রী স্বীকার করেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্বোধন না করায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আমি তিরস্কার করেছি। ইচ্ছা করেই মুক্তিযুদ্ধকে ‘খাটো’ করার চেষ্টা করা হয়। যারা এদেশের জন্য যুদ্ধ করেছে তাদের অসম্মান করে রাজাকারদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এটা এখানে,এদেশে আর সম্ভব হবে না কোনোভাবেই।

পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার তো বিদায়ের সময় হয়ে গেছে। তিনি সেদিন বিদায়ী ভাষণ দেয়া শুরু করেছেন। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। পুলিশে এই শ্রেণীর ব্যক্তি যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে দেশের অগ্রগতি তো বাধাগ্রস্ত হবে।

সভায় উপস্থিত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা থানার ওসিদের দাঁড় করিয়ে তাদের মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট থানার আইনশৃঙ্খলা এবং ‘দুর্নীতিতে’ জড়িত থাকার কারণ জানতে চান।

ওই তিন থানার ওসিকে দাঁড় করানোর ব্যাপারে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, কুলাউড়ার ওসিকে ১০ লাখ টাকা না দিলে কথা বলে না। তার বিরুদ্ধে ৩০০ জনের দরখাস্ত পেয়েছি। জুড়ী থানার ওসি দলীয় লোকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। আবার নিরপরাধ লোকদের ফাঁসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মোটা টাকার বিনিময়ে ওসি দিনকে ‘রাত’ বানাচ্ছে। পছন্দ না হলে তার খেয়াল খুশি মতো ডাকাতি মামলার আসামি বানাচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, আমি এলাকার তৃণমূলের মানুষের খবর রাখি। তাদের দুঃখ-কষ্ট জানি। আমার এলাকায় দুর্নীতিবাজদের জায়গা নেই। এসব চলবে না। দুর্নীতি যারা করবে তাদের রক্ষা নেই। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করেও কিছু করতে পারবে না। আমি সত্য ও ন্যায়ের পথে আছি। এসপি তোফায়েলকে শুধু বদলি করে মৌলভীবাজার থেকে নিয়ে গেলেই হবে না তাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *