আজকাল আমার অনেক ঘুম পায়। অনেক ঘুম পায়। বেগম মতিয়া চৌধুরীর মত ঘুম পায়। বজলুর রহমান ভাইয়া যখন ইন্তেকাল করেন তখন অনেক বড় অভিশাপ দিয়ে যান স্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে। এই অভিশাপটা ছিল এই রকম – আওয়ামীলীগের মিটিংগুলোতে তোমার অনেক ঘুম পাবে। নিজের অজান্তে তুমি ঘুমিয়ে পড়বে।
ঘুম নিয়ে অনেক গান আছে। হেমন্তের একটি গান যা আমার খুব প্রিয় – ‘কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছো “ ঘুম নিয়ে অনেক গল্প ও উপন্যাস লেখা হয়েছে…। “আমি এসে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছো” ।। তুমি কি আমার কথা ভাবছিলে? যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তারা ঘুমিয়ে পড়ে। যারা নিম্ন রক্তচাপের রোগী তারা যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। যাদের ব্রেইন টিউমার আছে তারা যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। যারা রাতে সময় মত না ঘুমায় তারা যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম হলো আল্লাহ্র নেয়ামত। এখন প্রশ্ন হলো আওয়ামীলীগের মিটিং যেখানে ভারতের চৌকস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দিতে ভাষন দিচ্ছেন সেখানে বেগম মতিয়া চৌধুরী কেনো ঘুমিয়ে পড়লেন?
মোদী হিন্দীতে ভাষন দিয়েছে। হতে পারে এই ভাষনকে হিন্দি মুভির ঘুম পাড়ানিয়া গান ভেবে বেগম মতিয়া চৌধুরী ঘুমিয়ে গেছেন। হতে পারে বেগম মতিয়া চৌধুরী হিন্দি বুঝেন না তাই মোদীর ভাষন শোনার কোন আগ্রহ ছিলনা। হতে পারে ঘুম একটা “নীরব প্রতিবাদ” – বাংলাদেশে হিন্দিতে ভাষন দেবার জন্য বেগম মতিয়া চৌধূরি নীরবে প্রতিবাদ করেছেন “ঘুমিয়ে পড়া’র মাধ্যমে” । হিন্দি আন্তর্জাতিক ভাষা নয়। বাংলাদেশে অনেকেই হিন্দি জানেননা । ইংলিশেরা সাড়া বিশ্বে উপনিবেশ গড়ে সাড়া বিশ্বের সবাইকে তাদের ভাষাতে কথা বলতে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশে এখন ভারতের উপনিবেশ তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাদের অংগরাজ্যে এসে হিন্দিতে ভাষন দিয়েছেন । অংগরাজ্যের সবার উচিৎ তাদের প্রভুর ভাষা শিখে নেওয়া। ভারতের রাস্ট্রভাষা হিন্দি তাই বাংলাদেশের রাস্ট্রভাষা হিন্দি হওয়া উচিৎ। বাংলা, ইংরেজী ও হিন্দি। তিনটা রাস্ট্রভাষা হলে অসুবিধা নাই। ভাষা বুঝলে দ্রুততার সাথে সেবা প্রদান করা যাবে। মালিক-শ্রমিকের সম্পর্কে “ভাষা” একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানের পূর্বদিকের সাড়ে সাতকোটী জনগন বাংলা ভাষাতে কথা বলতো । “ওরা আমার মায়ের ভাষা কাইড়া নিতে চায়” – ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে এখন অবশ্য গল্প বদল হয়ে গেছে। আসল ঘটনা থেকে বাংলাদেশের মানুষ অনেক দিন আগেই সরে গেছে। যাতে আর কোন দিন ভাষা নিয়া কোন আন্দোলন না করা লাগে। ভাষা দিয়ে আমরা নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করি। ভারতের সাথে আমরা মিশে যেতে চাই । ভারতের জন্য আমরা প্রান দিতে চাই। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াতে ঝুলে থাকতে চাই। লাশ হয়ে সীমান্তের নদীনালাগুলোতে ভেসে যেতে চাই। ভারতের জন্য আমরা অনেক ত্যাগ করতে চাই।
হিন্দি ভাষার সাথে বাংলা ভাষার অনেক মিল বিশেষ করে বর্ণমালাতে। অনেক মিল। বাংলাদেশের সাথে ভারতের যেমন মোহাব্বত তেমনি দুই ভাষার বর্ণমালাতে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ নামে “মুসলমান” । যারা নামে “মুসলমান” তারা কামে বেইমান। এইটা ভারতের নেতৃবৃন্দ অনেক উপভোগ করে আসছেন ১৯৪৭ সাল থেকে। পূর্ব বাংলা উর্বর। পশ্চিম বাংলা শুষ্ক । এখন পশ্চিম বাংলা সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা আর পূর্ব বাংলা মরুভুমি। এই মরুউদ্দ্যান পূর্ব বাংলার বেইমানদের অবদান। বেগম মতিয়া চৌধুরির বয়স হয়েছে। উনার অবসর নেওয়া উচিৎ। রাজনৈতক পটভূমি থেকে সরে যেয়ে বাসায় যেয়ে নিজের বিছানায় আরামে ঘুম দেওয়া উচিৎ।
বেগম মতিয়া চৌধুরীর ঘুমের আরো কিছু কারণ আছে । মালিক কোন সময় চাকরের সাথে চুক্তি করেনা। মালিক চাকরকে আদেশ দেয় । মালিক হুকুম করে আর ভৃত্যু সেই হুকুম পালন করে। প্রভু-দাসে কোন চুক্তি হয়না। মোদীর ভাষণ ছিল একটা লোক দেখানো ব্যাপার। ভারতের সাথে আওয়ামীলীগের চুক্তি ১৯৬৫-৬৬ সাল থেকে। বেগম মতিয়া চৌধুরী সেসময়ে ছাত্র রাজনীতি করতেন। তিনি অনেক আগেই জানেন কি হতে যাচ্ছে তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এক কথা বারে বারে শোনার ফলে ঘুম এসে গেছে।
যাদের সহজে ঘুম আসেনা তাদের ঘুম আনার জন্য অনেক সময় ডাক্তারেরা উলটো দিক থেকে সংখ্যা গুনতে বলে – এইভাবে একশ – নিরানব্বুই, আটানব্বুই, সাতানব্বুই, ছিয়ানব্বুই, এইভাবে … ২০১৫, ১৯৭১, ১৯৬৬, ১৯৪৭।। বেগম মতিয়া চৌধুরী অঘোরে ঘুমিয়ে পড়লেন।
ঘুম হলো একটি প্রতীক। নিদ্রিত জাতীর প্রতীক। সেজন্য বেগম মতিয়া চৌধূরী ঘুমিয়ে গেছেন । এই ঘুম ছিল প্রতীকী ঘুম।
পূর্ব বাংলার আজকের প্রজন্ম পূর্ব বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ। কেউ জানে মুজিবের গল্প। কেউ জানে জিয়ার গল্প। মুজিব-জিয়ার গল্পে শতভাগ কল্পকাহিনী। এই গল্প নিয়ে ওরা সুখী। এই গল্প শুনেই ওরা হয়েছে প্রজন্মের নিদ্রিত কুলাঙ্গার। জেগে জেগেই সাড়া পূর্ব বাংলা ঘুমাচ্ছে বিগত ৪৩ বছর ধরে । এই ঘুমন্ত জাতীর সিনিয়ন নেত্রী হিসাবে তাই বেগম মতিয়া চৌধুরী ঘুমিয়ে গেছেন ঘুমের নেতৃত্ব দেবার জন্য ।
আসুন ঘুমের আশ্রয় নিয়ে আমরা ভুলে যেতে চেস্টা করি আমরা ভারতের অংগরাজ্যে বসবাস করি। ঘুমের ভেতরে স্বপ্নে আমরা স্বাধীনতার লাল সূর্যকে আকড়ে ধরে থাকি। ওকে ঘুমাতে দাও । ঘুমের ভেতরে সে খুঁজে পাবে রুপকথার স্বাধীনতা । জেগে গেলেই সেই নতুন মুখের পুরানা প্রভু। সেই পুরানা আদেশ নতুন সুরে পালন। নতুন শেকলে সেই পুরানা দাসত্ব । জাহাজ ভর্তি করে মুরগীর মত খাঁচাতে ভরে আফ্রিকা থেকে মানুষ আনা হয়েছিল দাস হিসাবে বিক্রি করার জন্য সেই দাসেরা এখনও তেমনই হুকুম পালন করে তবে কুৎসিত শরীরে লাখ টাকার জামদানী জড়িয়ে। এখন প্রভুরা দাসেদেরও শ্রেণীবিন্যাস করে ফেলেছে। দাসেদের টাইটেল বদল হয়েছে। দাসেদের কমিশন দেওয়া হয়েছে। আরবের সেই হাবসী গোলাম এখন নেতা। নেতার নীচে আছে জনতা । জনগনের নাকে ধরা আছে মূলা। মূলার নাম “গনতন্ত্র”।
বাকী মানবাধিকার ও স্বাধীনতা ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে পাওয়া যায়। সেজন্যই বেগম মতিয়া চৌধুরী যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। সাড়া জীবন উনি সংগ্রাম করেছেন। শ্রমিকের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। জেল খেটেছেন। সাধারন জনগনের মৌলিক অধিকার ঘুমের ভেতরে অনায়াসেই প্রতিষ্টিত করা যায়। নিদ্রিত জাতীর নেত্রী হবার এইটা একটা বিশেষ সুবিধা।