মৃত্যুর আগে যা জানিয়ে গেলেন কেবিন ক্রু সৌরভ

ঢাকা: অপহৃত হওয়ার পর বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু নূর আলম সৌরভ তার ভাই মাসুমকে এসএমএস করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এর ঘণ্টাখানেক পর মাসুম ঢাকা মেডিকেলে তার ভাইয়ের মরদেহ সনাক্ত করেন। এদিকে সৌরভের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে গুলশান পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাহবুব হোসেনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করা হলেও এখনো অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তবে এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

মৃতের পবিারের অভিযোগ, অপহরণের পর সৌরভকে হত্যা করা হয়েছে। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলেই তাদের অভিযোগ। এমনকি আর্থিক লেনদেনের কথা স্বীকারও করেছেন অভিযুক্ত এসআই মাহবুব।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নূর আলম সৌরভকে (৩৫) অসুস্থ অবস্থায় পান্না নামে এক ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে পালিয়ে যান। ভর্তির এক ঘণ্টা পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃতের ভাই বৈশাখী টেলিভিশনের গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাসুম হোসেন জানান, ঘটনার দিন দুপুরে এসআই মাহবুবুর রহমান মোবাইলে সৌরভকে ডেকে পাঠান। তার কাছে গেলে তিনি সৌরভকে অপহরণ করে একটি মাইক্রোবাসে তোলেন। ওই মাইক্রোবাসে বসে সৌরভ তার ভাইয়ের (মাসুদের) মোবাইলে পাঠানো একটি ক্ষুদে বার্তায় লেখেন ‘আমাকে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৪-১১০৭ নম্বরের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়েছে।’ এরপর সন্ধ্যায় সৌরভের মরদেহ পাওয়া যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে।

মাসুম আরো জানান, তার ভাই সৌরভ মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের প্রিপাইরেটরি স্কুলের পাশে ১০/৯ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিনি বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু হিসেবে চাকরি করতেন। পাশাপাশি গুলশান-১ নম্বরে পিংক সিটিতে তার হারস বাংলাদেশ নামে একটি কসমেটিক্সের দোকান ছিল। চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে তিনি ওই দোকানে সময় দিতেন। গুলশান পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাহবুব ওই দোকানে প্রায়ই আসতেন। প্রায় দেড় বছর ধরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব চলে আসছিল।

সৌরভ তার দোকানে আরো বেশি কসমেটিক্স সামগ্রী তোলার জন্য ৩ মাস আগে এসআই মাহবুবের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ঋণ নেন। কয়েকদিন আগে সৌরভ ওই ঋণের ২ লাখ টাকা ফেরত দেন এসআই মাহাবুবুকে। কিন্তু মাহবুব ওই টাকা একসঙ্গে ফেরত দেয়ার জন্য তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এসআই মাহবুব সৌরভকে অপহরণ করে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভাই মাসুম।

এ ব্যাপারে এসআই মাহবুব হোসেন বলেন, ‘১৫ দিন আগে সৌরভের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি আমাকে এই অল্প কয়েকদিনে মুগ্ধ করেন। সৌরভ আমাকে তার দোকানে একসঙ্গে ব্যবসা করতে বিনিয়োগ করতেও বলেন। এজন্য তিনি আমার কাছে ১৩ লাখ টাকা ঋণ চান। সৌরভ বাংলাদেশ বিমানের ক্রু হওয়ায় তাকে বিশ্বাস করে আমি ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। পরে মনে হয় যে সৌরভ একজন প্রতারক। এক সপ্তাহ পর আমি আমার টাকা ফেরত চাই। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কয়েকবার বাকবিতণ্ডাও হয়।’

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সারাদিন সৌরভের সঙ্গে আমার কোথায়ও দেখা হয়নি। ওইদিন রাতে জানতে পারি যে সৌরভ মারা গেছে।’

গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে জানান, এসআই মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বিমানের একজন কেবিন ক্রুকে হত্যার অভিযোগ তিনি শুনেছেন। তবে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ করলে দোষী যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শাহবাগ থানার এসআই দেবরাজ চক্রবর্তী জানান, সৌরভের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর ঘটনাস্থল হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নাম লেখা হয়েছে। তাকে কোথায় আটক করে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। এ কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কর্তব্যরত চিকিৎসক নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে যে তাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে মৃত সৌরভের এক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ২০০২ সালে সৌরভ বিমানের কেবিন ক্রু হিসেবে যোগ দেন। বগুড়ায় বাড়ি হওয়ায় ওই সময় তিনি নিজেকে হাওয়া ভবনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে বাংলাদেশ বিমানে পরিচয় দিতেন। আর এই পরিচয়ের সুবাদে তিনি বাংলাদেশ বিমানে ভিভিআইপিদের ভ্রমণের সময় ওইসব ফ্লাইটে তিনি কেবিন ক্রু’র দায়িত্ব নিতেন। ওই সময় অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিয়ে তিনি বিদেশি কসমেটিক্সও আনতেন। আর এসব দিয়েই তিনি গুলশানে হারস বাংলাদেশ নামে একটি কসমেটিক্স পণ্য বিক্রির দোকান খোলেন।

One thought on “মৃত্যুর আগে যা জানিয়ে গেলেন কেবিন ক্রু সৌরভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *