আমরা যদি না জাগি মা……

“আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে” কবি কথাটি যে রুপক অর্থে ব্যবহার করেছেন তা আমাদের দুর্বোধ্য নয়। কিন্তু তার এই কবিতার লাইনের মত কি আমরা জেগে উঠতে পেরেছি! মনে হয় না আমরা পেরেছি। আমরা যদি ‘পাখির চোখ’ দেশের দিকে তাকাই তাহলে বুঝতে পারবো তরুণরা কতটা ঘুমিয়ে আছে।

কিছুদিন আগেও বাবা-মা তার মেয়ে সন্তানকে নিশ্চিন্তে তার বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যেতে দিতে পারতেন। আর এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, বাবা-মা এখন নিজের সাথে করেই নিজের সন্তানকে নিয়ে বের হতে ভয় পান। ২০১৫ সালে এসে একটি পরিবার কেন তার মেয়ে সন্তানকে নিয়ে এত ভয়ে থাকবেন!

এই বিষয়টা নিয়ে এখন আর কিছু বলবো না, অন্য কথা বলি। দেশ এগিয়ে গিয়েছি প্রযুক্তিতে। সবার একটা করে ফেসবুক, হোয়াটস আপ, টুইটারে একাউন্ট আছে। সবাই আমরা এখন আধুনিক। সারা রাত বন্ধুদের সাথে বার্তা আদান-প্রদান করি আর ঘুম থেকে দুপুরের আগে উঠতে পারি না। আবার সকালে ক্লাশ থাকলেও পেছনের সিটে বসে ঘুমাই। আর যখনই দেখি দেশের মধ্যে কোন ‘অনাচার’ হয়েছে অমনি ব্যাস্ত হয়ে যাই একটি পেজ এবং মানববন্ধনের জন্য ইভেন্ট খোলায়। তারপর মানববন্ধন যথা সময় হয়। তারপর কয়েকদিন ফেসবুকে লেখালেখি তারপর এবার সামনে নতুন ইস্যু চলে আসে আর সব শেষ হয়ে নতুন ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত।

আর এখন কেউ সাধারণত নেশা করে না। অনেকেই দেখেছি সিগারেট পর্যন্ত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কারণ সেই টাকা দিয়ে তারা মোবাইলের এমবি কিনে ভার্চুয়্যাল জীবনে ব্যস্ত থাকার জন্য। কিছু কিছু মোবাইল সিম তো আরোও সুবিধা দিয়েছে “ফ্রি ফেসবুকিং”। আর এই নেশা যেন মাদকের নেশার চেয়েও ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। কারন এখন যে কোন বিষয়ের প্রতিবাদ করতে দেশের তরুণ সমাজ ফেসবুকেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। এখনকার পরিস্থিতি দেখে খুবই ভয় যে ১৯৭১ সালে ফেসবুক ছিল না বলে আজ আমরা স্বাধীন। নাহয় আজও বন্দী থাকতে হতো পরাধীনতার শৃঙ্খলে।
যেন কোনভাবেই বুঝতে চাচ্ছি না আমাদের খুব কৌশলে একটি জালের মধ্যে আটকে রাখা হচ্ছে । আর আমরা আটকে আছি সেই জালের মাঝেই।

এবার একটু অন্য জালে যাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অসাধারণ খেলছে। আমরা তাদের কারণে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। কিন্তু এই খেলাটাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদেরকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য। দূরে সরিয়ে রাখা না হলেও আমরাই যাচ্ছি দূরে সরে। যখনই বাংলাদেশ কোন সিরিজ জিতছে ওমনি দেশের মানুষ হাজার কষ্টে আছে সেটা ভুলে যায়। হ্যাঁ এটাকে আমার “ক্রিক ম্যাজিক” বলি কিন্তু এটা হয় অত্যাচারিত কষ্টে থাকা মানুষগুলোর জন্য “ব্ল্যাক ম্যাজিক”। কারণ তারা এদেশের তরুনদের মুখ চেয়ে আছে যে তারা সকল কাল জাদুর জাল ছিঁড়ে ফেলে এই অসহায় মানুষগুলোকে উদ্ধার করবে।

তরুণরা এমন ভাবে ঘুমিয়ে আছে হয়তো তারা জানেই না এই স্বাধীন দেশটাই এখনও গড়ে প্রতিদিন চার লক্ষ লোক না খেয়ে রাতে ঘুমাতে যায়। এখনও প্রায় দেড় লক্ষের মত লোক জীবন ধারণের জন্য ডাস্টবিনে খাবার খোঁজে। এদেশে গড়ে প্রতিদিন ১১টি খুন এবং ৪০ জন নাড়ী ধর্ষিত হচ্ছে।

আমরা আমাদের দেশকে নিজের মায়ের মতই ভালবাসি। অনেক সময় নিজের মায়ের চেয়েও ভালবাসি। উদাহরণ দিতে গেলে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের মায়ের কথা অমাণ্য করে হাজার হাজার সন্তান এই দেশ মাকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাহলে এখন কেন আমরা ঘুমিয়ে আছি!
আমাদের এখন জাগার সময় এসেছে। আমরা না জাগলে এদেশে হয়তো সকাল আর কোন দিনও হবে না। উঠবে না একটা নতুন সূর্য। আমরা যদি কোন একটা অদৃশ্য কাল শক্তির তৈরি করা জালেই আটকে থাকি একটা সময় আমরা বলেই আর কোন অস্তিত্ব হয়তো থাকবে না। কাজেই জেগে ওঠার এখনই সময়। নিজেকে জাগতে হবে সাথে সুন্দর এই দেশটাকেও জাগাতে হবে।

মুনওয়ার আলম নির্ঝর
লেখক: সাংবাদিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *