আসামি দীপকে শনাক্ত করলেন ব্লগার রাজীবের খালাতো ভাই

ঢাকা: ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় রাজীবের খালাতো ভাই কাজী গালিবুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ জুন ) তিনি ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে আংশিক জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

বাকি জেরার জন্য আগামি ১০ জুন দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ।

সাক্ষ্যে কাজী গালিবুল ইসলাম বলেন, রাজীবদের বাড়িতে থেকেই তিনি পড়াশোনা করতেন। ঘটনার দিন তিনি ওই বাসাতেই ছিলেন। চিৎকার চেচামেচি শুনে তারা বাসার বাইরে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তারা রাজীবকে দেখতে পান।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার আগের দিন অপরিচিত ৪/৫ জন লোক তাদের বাসার সামনে ক্রিকেট খেলেন। একটি বল তাদের বাসার ভেতর এসে পড়ে। এরপর তাদের একজন বাসার ভিতরে গিয়ে বলটি নিয়ে আসেন।

সাক্ষী আসামি ফয়সাল বিন নাঈম দীপকে শনাক্ত করে বলেন, দীপই বাসার ভেতরে বল আনতে যান। তিনি বাইরে এসে আরও ৪/৫ জনকে খেলতে দেখেন। আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো বাকি চার আসামিকে শনাক্ত করে তিনি বলেন, এরাই ঘটনার আগের দিন রাজীবদের বাসার সামনে ক্রিকেট খেলেছিলেন।

এর আগে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন মামলার প্রথম সাক্ষী ও বাদী নিহত রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন।

গত ১৮ মার্চ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানি এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাত ছাত্রসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানি ছাড়া অন্য অভিযুক্তরা হলেন, ঢাকার খিলক্ষেত চৌধুরীপাড়ার মো. ফয়সাল বিন নাঈম দীপ (২২), ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পোড়াপাড়া গ্রামের মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানার ধলেশ্বর গ্রামের মাকসুদুল হাসান অনিক (২৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কলেজপাড়ার নাঈম ইরাদ (১৯), চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া গ্রামের নাফিজ ইমতিয়াজ (২২), ঢাকার কলাবাগান থানার ভুতের গলির সাদমান ইয়াছির মাহমুদ (২০) ও ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার জয়লস্করের রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০)।

তারা নর্থ সাউথের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পলাতক রানাকে রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চার্জশিটে বলা হয়, জসীমউদ্দিন রাহমানির বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবায় অংশ নিয়ে ‘নাস্তিক ব্লগার’দের খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন আধুনিক শিক্ষার এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন।

রাহমানিকে রাজিব হত্যাকাণ্ডে উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাত ছাত্রসহ আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক নিবারন চন্দ্র বর্মণ।

মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানিকে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে একই বছরের ২০ আগস্ট ও বাকিদের ১০ মার্চ গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

গ্রেফতার হওয়ার পর ২০১৩ সালের ১০ মার্চ রাজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ৫ ছাত্র ফয়সাল বিন নাঈম দীপ,  এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্থপতি রাজীব হায়দারকে।  এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন ঢাকার পল্লবী থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

২ thoughts on “আসামি দীপকে শনাক্ত করলেন ব্লগার রাজীবের খালাতো ভাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *