যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে আইন করে জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো নিষিদ্ধের ব্যাপারে একটি বিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। বিলটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদন পেলে সংসদে উত্থাপন করা হবে। সোমবার সংসদে এ তথ্য জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এ নিয়ে প্রশ্নটি উত্থাপন করেন তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য একটি মামলা করা হয়েছিল। নিবন্ধন বাতিল হচ্ছে, হবে বলে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ হবে মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই। অপর এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার লক্ষ্যে কোন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। হরতাল, অবরোধ ও বিভিন্ন প্রকার নাশকতার নামে দেশের জনসাধারণ ও তাদের জানমাল যারা ধ্বংস করেছে তাদেরকে বিদ্যমান সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’র আওতায় এনে শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী বিগত দিনগুলোতে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের জন্য সারা দেশে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার বিচারকাজ যাতে থেমে না থাকে সে জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ২৮ ধারার ১ ও ২ উপধারার বিধান অনুযায়ী সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচারক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের ২৭ ধারার বিধান অনুযায়ী দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজের মাধ্যমে এসব মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করা যাবে। এ জন্য ২০১৪ সালের ৯ই জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে সব জেলা ও দায়রা জজকে পরিপত্র জারি করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আনিসুল হক বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০২ সালের ১৬ই অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নামে যৌথবাহিনীর অভিযান দায়মুক্তির মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ওই অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন সদস্য বা ব্যক্তি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত যৌথ অভিযানের যাবতীয় কার্যাদির জন্য তাদেরকে দায়মুক্ত করার লক্ষ্যে ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন-২০০৩’ প্রণয়ন করা হয়। যেহেতু জাতীয় সংসদ এই আইনটি প্রণয়ন করেছে সেহেতু এই দায়মুক্তি বৈধতা পেয়েছে। একই প্রশ্নকর্তার অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আলোচিত, নৃশংস ও নারকীয় ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি বর্তমানে বিচারের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এই মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৪৯১ জন এবং আসামির সংখ্যা ৫২ জন। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা দুটিতে এ পর্যন্ত ১৪৫ জন করে ২৯০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আরও ছয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালতের নিকট সমন জারি করার প্রার্থনা জানানো হয়েছে। ৩৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি রয়েছে। মামলা দুটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যেক সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি তারিখ পড়ছে। মন্ত্রী জানান, বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলার জট কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি জেলায় কেস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনের মাধ্যমে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া, অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগ করে সরকার আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
সরকারি চাকরিতে পদশূন্য প্রায় ৩ লাখ
বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন দপ্তরে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭টি পদ শূন্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বেগম ইসমাত আরা সাদেক। তিনি জানান, সরকারি শূন্য পদগুলোর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ৪৪ হাজার ৫৪২, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪১ হাজার ৩২৬, তৃতীয় শ্রেণীর ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৮, চতুর্থ শ্রেণীর ৬৯ হাজার ২৮১টি। তিনি বলেন, সরকারি অফিসসমূহে শূন্য পদে জনবল নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং এর নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তরের চাহিদা মোতাবেক সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগ হয়ে থাকে। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে সংশ্লিষ্ট বিভাগ-সংস্থার নিয়োগবিধি অনুযায়ী জনবল নিয়োগ করা হয়। এর আগে ৫ম অধিবেশনের ১১শে মার্চে একই তথ্য দেন প্রতিমন্ত্রী। পঞ্চম অধিবেশনে মনোয়ারা বেগম এবং খন্দকার আজিজুল হক আরজুর প্রশ্নের জবাবেও একই পরিসংখ্যান দিয়েছিলেন সংসদে।
আতিক/প্রবাস
One thought on “জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো নিষিদ্ধের বিল মন্ত্রিপরিষদে”